তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে যামিনীর মায়ের চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা করো। || একাদশ শ্রেণির বাংলা তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর
তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে যামিনীর মায়ের চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা করো।
ভূমিকাঃ প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পটি মোটেও কোন সাধারণ গল্প নয়। তেলেনাপোতা আবিষ্কার হচ্ছে এমন একটি গল্প,যেই কাহিনীর মূলে রয়েছে শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং প্রতিশ্রুতি ভাঙ্গার কথা।। এবং এইভাবে বার বার এই প্রতারিত এমনই এক কণ্যার মা হলেন যামিনীর মা।।
• লেখক,তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে,গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র যামিনীর, মায়ের চরিত্রের বেশকিছু দিক তুলে ধরেছেন। যেমন -
অন্যের উপর নির্ভরশীলতা এবং শারীরিক অসুস্থতাঃ তেলেনাপ্পতা আবিষ্কার গল্পে যখনই আমরা প্রথমবারের জন্য যামিনীর মায়ের সম্পর্কে জানতে পারি, তখন প্রথমেই দেখা যায়, যামিনীর মা হলেন এমন একজন বৃদ্ধা মহিলা, যিনি দারিদ্র্য এবং অসুস্থতার কারণে সম্পূর্ণভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।। এছাড়াও যামিনীর মায়ের সবচাইতে বড় শারীরিক অসুস্থতা হলো তিনি চোখে দেখতে পান না এবং তিনি সম্পূর্ণ ভাবেই নিজের যুবতী কন্যা যামিনীর ওপর নির্ভরশীল।
দ্বায়ীত্ববান অভিভাবকঃ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে যামিনীর মা যে একজন দায়িত্ববান অভিভাবক, সেটা আমরা তার এই কথা থেকে বুঝতে পারি - " যামিনীকে তুই নিবি নিবি তো বাবা? তোর শেষ কথা না পেলে আমি মরেও শান্তি পাব না "। যামীনির মায়ের এই কথার মাধ্যমেই আমরা এটা বুঝতে পারি যে, তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত না তার নিজের মেয়েকে সঠিক হাতে তুলে দিতে পারছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি নিয়ে দায়িত্ব থেকে মুক্ত হতে পারছেন না। এবং এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার জন্যই তিনি দীর্ঘকাল ধরে এই অজগর পুড়িতে নিজেকে টিকিয়ে রেখেছেন।।
সহজ-সরলতাঃ যামিনীর মায়ের চরিত্রে সবচাইতে বড় দিকটি হলো তিনি ছিলেন অত্যন্ত সহজ সরল একজন মানুষ।।এবং তার সরলতার জন্যই সেই কোন ছোটবেলাতেই তিনি নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ ঠিক করবেন বলে, তাঁর এক দূর সম্পর্কের বোনপোর সঙ্গে তিনি নিজের মেয়ের বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলেন।। এছাড়াও যামিনীর মায়ের সরলতা সম্পর্কে আরও একটি দিকের কথা আমরা জানতে পারি তখন, যখন তিনি গল্পকথককে নিরঞ্জন ভেবে, যামিনীর সম্পর্কে নানা কথা খুলে বলেন।
অন্যের উপর বিশ্বাসীঃ যামিনীর মা ছোটবেলাতেই তাঁর কোন এক দূর সম্পর্কের বোনপোর ( নিরঞ্জন ) সঙ্গে যামিনী বিয়ে ঠিক করেছিলেন। এবং তারপর নিরঞ্জন এবং যামিনী যখন বড় হয়, তখন নিরঞ্জন যামিনী মাকে কথা দেয় যে, সে যামিনীকে বিয়ে করবে। এই কথা বলে নিরঞ্জন শহরে চলে যায়। কিন্তু এই কথার দীর্ঘদিন পরেও নিরঞ্জন আর ফিরে আসে না। কিন্তু যামিনীর মা নিরঞ্জনের সেই কথার উপর এতটাই বিশ্বাসী ছিলেন যে, তিনি মনে প্রাণে এটা বিশ্বাস করতেন যে- নিরঞ্জন ঠিকই একদিন ফিরে আসবে। এবং সে যামিনীকে নিশ্চয়ই বিয়ে করবে। কিন্তু বাস্তব এটাই যে, জামিনের মায়ের সেই বিশ্বাসকে সত্যি করতে নিরঞ্জন আর কখনোই ফিরে আসে না।।
সবশেষে দেখা যায়,তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে নানা পরিস্থিতি যামিনীকে যেম এক অদ্ভুত চরিত্রের অধিকারী করে তুলেছে। ঠিক একইভাবে নিজ কন্যাকে সঠিক হাতে তুলে দেওয়ার চিন্তা, নানা বাধাবিপওি, দারিদ্র্য ইত্যাদি যামিনীর মাকেও ধীরে ধীরে অদ্ভুত ভাবে নানা রকম চরিত্রের অধিকারী করে তুলেছে।।