কার্যকারণ সম্বন্ধে অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক হিউমের মতবাদ | একাদশ শ্রেণীর দর্শন কার্যকারণ সম্বন্ধ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর
একাদশ শ্রেণীর দর্শন চতুর্থ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণীর দর্শন চতুর্থ অধ্যায়ের ( WB Class 11 Philosophy chapter 4 questions and answers in bengali ) " কার্যকারণ সম্বন্ধ " একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় " কার্যকারণ সম্বন্ধে অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক হিউমের মতবাদ " নিয়ে আলোচনা করবো। একাদশ শ্রেণীর দর্শন চতুর্দশ অধ্যায় থেকে যে প্রশ্নগুলি পরীক্ষা এসে থাকে,তার মধ্যে একটি হলো কার্যকারণ সম্বন্ধে অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক হিউমের মতবাদটির আলোচনা। তাই আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণীর দর্শন থেকে কার্যকারণ সম্পর্কিত কার্যকারণ সম্বন্ধে অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক হিউমের মতবাদ বিস্তারে আলোচনা করবো। wb class xi philosophy chapter 4 থেকে কার্যকারণ সম্বন্ধে অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক হিউমের মতবাদটি থেকে যেসমস্ত প্রশ্ন এসে থাকে, তার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।
কার্যকারণ সম্বন্ধে অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক হিউমের মতবাদ | একাদশ শ্রেণীর দর্শন কার্যকারণ সম্বন্ধ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর
ভূমিকা : অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকদের মধ্যে একজন অন্যতম ডেভিড হিউম। ডেভিড হিউম কার্যকারণ সম্পর্কে তিনি তার নিজস্ব মতবাদ প্রকাশ করেছেন। ডেভিড হিউমই হলেন কার্যকারণ সম্পর্কিত সতত সংযোগতত্ত্বের প্রধান প্রবক্তা। কার্যকারণ সম্পর্কে তাঁর বক্তব্যের দুটি দিক রয়েছে। একটি হলো নঞ্চর্থক এবং অপরটি হলো সদর্থক। ডেভিড হিউম মূলত তার এই নঞ্চর্থক এবং সদর্থক দিকের মাধ্যমেই কার্যকারণ সম্পর্কে তার মতামত ব্যাখ্যা করেছেন।
◆ ডেভিড হিউমের নঞ্চর্থক দিক : প্রথমত ডেভিড হিউমের মতে যা আমরা প্রতক্ষ্য করতে পারি, তার ই অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু যা আমরা ইন্দ্রিয়ানুভবে পাই না, তার অস্তিত্ব নেই। ডেভিড হিউমের মতে কার্য এবং কারণ হলো সম্পূর্ণ দুটি পৃথক ঘটনা। কারণ হলো কার্যের নিয়ত অপরিবর্তিত পূর্ববর্তী ঘটনা এবং কার্য হল কারণরর নিয়ত অপরিবর্তিত পরবর্তী ঘটনা।। কিন্তু কারণের মধ্যে কোনো শক্তি বা কার্য ও কারণের মধ্যে কোনো অনিবার্য সম্পর্ক আমরা ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভব করতে পারি না। সুতরাং যা আমরা ইন্দ্রিয়ের সাহায্য অনুভব করতে পারি না, তার অস্তিত্ব নেই। সুতরাং বলা যায় যে, কার্য ও কারণের মধ্যে কোনো অনিবার্য সম্পর্ক নেই।
ডেভিড হিউমের দ্বিতীয় মত :
ডেভিড হিউমের দ্বিতীয় মতে, কখনো পূর্বতঃসিদ্ধ যুক্তির সাহায্যেও অনিবার্য সম্পর্কে জ্ঞান হয় না যদি দুটি বিষয় বা ঘটনা সম্পূর্ণ ভাবে অভিন্ন হয়। কেবলমাত্র তখনই আমরা পূর্বতঃসিদ্ধ যুক্তির সাহায্যে অনিবার্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করি। হিউমের মতে কেবলমাত্র গাণিতিক বচনের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের অভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।
যেমন - 2 + 2 = 4 - এই গাণিতিক বচনটি বিশ্লেষক। কারণ এর বিপরীত কল্পনা করা যায় না। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা ভিত্তিক ব্যবহারিক জীবনে দুটি বস্তু বা বিষয় কখনোই অভিন্ন নয়।
দুধ খেলে শরীর পুষ্ট হয় - এই বচনে দুধ কারণ এবং পুষ্ট হওয়া হলো কার্য। কিন্তু এই ধারণাটিকে আমরা যতোই বিশ্লেষণ করি না কেন, দুধ থেকে আমরò কখনোই পুষ্ট হওয়ার ধারণা পাব না। সুতরাংন কার্য ও কারণের মধ্যে যদি সত্যিই কোনো সম্পর্ক থাকতো, তাহলে কারণকে বিশ্লেষণ করলেই কার্যের ধারণা পাওয়া যেত।। কিন্তু এক্ষেত্রে তা অনুপস্থিত।
◆ ডেভিড হিউমের সদর্থক দিক : হিউম তার সদর্থক দিক থেকে বলেন যে, কার্য এবং কারণের মধ্যে কোনো অনিবার্য সম্পর্ক নেই। কার্য ও কারণের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে তা, হলো সতত সংযত বা পৌনঃপুনিক সম্পর্ক। ডেভিড হিউমের মতে যাকে আমরা কার্যকরণ সম্বন্ধে বলি তা দুটি ঘটনার সতত সংযোগ ছাড়া আর কিছুই নয়। এই মত অনুযায়ী,যখন আমরা দুটি ঘটনাকে বারবার পরস্পর সংযুক্ত অবস্থায় দেখি তখন যে ঘটনা ঘটনাটি পূর্বে সংঘটিত হয় তাকে আমরা কারণ বলি এবং সেই ঘটনাটি সবসময় পরবর্তীতে হয় তাকে আমরা কার্য বলী। কারণ ও কার্যের মধ্যে একটা পৌনঃপুনিক পরম্পরার সম্পর্ক আছে। অর্থাৎ কারণ আগে ঘটে এবং কার্য পরে ঘটে। কার্য ও কারণের মধ্যে যে অনিবার্য সম্পর্ক আছে বলে আমরা মনে করি,,তা প্রকৃতপক্ষে বাস্তবে জগতে নেই। তা আছে আমাদের মনোজগতে। হিউম এটিকে একরকম অভ্যাসজাত কুসংস্কার নামে অভিহিত করেছেন। হিউম মতে আমরা দেখি যে, জল পান করলে তৃষ্ণা নিবারণ হয়। এই ঘটনাটি আমরা বারবার দেখার ফলে আমাদের মনে এটা এমন ভাবে যুক্ত হয়ে গেছে যে, যখন আমরা জল পান অর্থাৎ প্রথম ঘটনাটি ঘটতে দেখি, তখনই আমাদের।মনে দ্বিতীয় ঘটনাটি অর্থাৎ তৃষ্ণা নিবারণ হওয়ার ঘটনাটি ঘটার প্রত্যাশা জাগে। অর্থাৎ কারণকে দেখে কার্যের আশা করি। এটা আমাদের একটা মানসিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কাজেই কার্য কারণের মধ্যে পৌনঃপুনিক কথা আমি ভাবি, তা আসলে বাস্তবে নেই। সেটা হচ্ছে আমাদের মনোজগতের একটি অভ্যাস বা মানসিক প্রত্যাশা। আর আমাদের অভ্যাসজাত মানসিক প্রত্যাশা থেকেই কার্যকারণের মধ্যে অনিবার্য সম্পর্কের ধারণা সৃষ্টি হয়।।
◆ হিউমের মতবাদের মূল্যায়ন : হিউমের মতবাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দার্শনিক বহু অভিযোগ করেছেন। যেমন - প্রথমতঃ দুটি ঘটনা বা বস্তুর মধ্যে শুধুমাত্র সতত সংযত বা পৌনঃপুনিক সম্পর্ক থাকলেই তাকে কার্যকারণ সম্পর্ক বলা যায় না। দুর্গাপুরে সকাল ছয়টায় সাইরেন বাজএ অনেক কাজ করতে যায়। আর ঠিক একই সময়ে কলকাতাতেও বহুলোক কাজ করতে যায়। কিন্তু আমরা কি করে বলবো যে,দুর্গাপুরে সাইরেন বাজাটা কলকাতার লোকের কাজ করতে যাওয়ার কারণ।
দ্বিতীয়তঃ ডেভিড হিউমের মতে কারণ এবং কার্যকে আমরা বহুবার একসঙ্গে ঘৎএ দেখেছি বলে আমাদের ধারণা যে, কারণ ঘটলে কার্য অবশ্যই ঘটবে। কিন্তু তার এই ধারণা ঠিক নয়। কারণ অনেক সময় এমন হয় যে,আমরা অনেক কিছুই ঘটতে দেখিনা বা প্রত্যাশা করি না। কিন্তু তা ঘটে। যেমন - আমরা অনেক সময় ধারণা করি, পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটলে পৃথিবী ধ্বংস হবে। কিন্তু আমরা কখনই পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ এবং পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার ঘটনাকে বারবার ঘটতে দেখিনি। কিন্তু তবুও এই ঘটনা ঘটার প্রত্যাশা করি। সুতরাং বলা যায় যে, অভ্যাগত প্রত্যাশা থেকেই কার্যকরণ সম্বন্ধের ধারণা উদ্ভুদ্ধ হয়নি।
আশাকরি আজকের এই ব্লগ পোষ্ট থেকে তোমরা একাদশ শ্রেণীর দর্শন চতুর্থ অধ্যায়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন - " কার্যকারণ সম্বন্ধে অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক হিউমের মতবাদ কী কী? " সেই সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পেরেছো। যদি আজকের এই কার্যকারণ সম্বন্ধে অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক হিউমের মতবাদের আলোচনাটি ভালো লেগে থাকে,তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটে করা একাদশ শ্রেণীর দর্শনের বিভিন্ন অধ্যায়ে অন্যান্য পোস্টগুলো পড়ে দেখতে পারো।
Tags :