মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল PDF Download
উওর : ভারতে ব্রিটিশ শাসন চলাকালীন, ব্রিটিশ শাসন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে সমস্ত উপজাতি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল, তার মধ্যে সুগার মুন্ডার পত্র বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে নেতৃত্বে সংঘটিত হওয়া 1899-90 খ্রিস্টাব্দের মুন্ডা বিদ্রোহ ছিল একটি অন্যতম উপজাতি বিদ্রোহ।
◆ মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ : বিরসা মুন্ডা 1899 খ্রিস্টাব্দে মুন্ডাদের উপর হওয়া জমিদার,মহজন এবং ব্রিটিশ শাসনের বিভিন্ন অত্যাচার এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য তিনি মুন্ডাদের ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দেশ্য, বিরসা মুন্ডা মুন্ডা বিদ্রোহের নেতা হিসেবে উঠে আসেন। বিরসা মুন্ডা এবং মুন্ডা উপজাতির এই বিদ্রোহ করার পেছনে একাধিক কারণ ছিল। যেমন -
◆ খুৎকাঠি বা খুৎকঠন্তি প্রথার অবসান : খুৎকাঠি প্রথা হলো এমন একটি প্রথা যেটি প্রধানত মুন্ডা সমাজে প্রচলিত ছিল। এই প্রথা অনুযায়ী মুন্ডা সমাজে কোনো একটি জমির উপর একাধিক মুন্ডার মালিকানা প্রচলিত ছিল। অর্থাৎ সংক্ষেপে বলতে গেলে জমির যৌথ মালিকানা। কিন্তু ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর মুন্ডা সমাজের প্রচলিত এই খুৎকাঠি প্রথা বা জমির যৌথ মালিকানার অবসান ঘটানো হয়। এবং ব্যক্তিগত মালিকানা যাকে মাঝিহাম বলা হতো,তার প্রতিষ্ঠা করা হয়। ব্যক্তিগত মালিকানা সৃষ্টি হওয়ায়, মুন্ডাদের প্রত্যেককে নিজের জমির জন্য অধিক পরিমাণে খাজনা দিতে হতো। ফলে মুন্ডাদের রকম আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো।
◆ বেগার শ্রম : বেগার শ্রম বলতে সংক্ষেপে বোঝায় বিনা পারিশ্রমিকে এ কাজ করা। নিরক্ষর অথবা অল্পশিক্ষিত মুন্ডাদের নানারকম কর অথবা ঋণের বোঝা চাপিয়ে বিভিন্ন সময়ে জমিদাররা এবং অনেক সময় ইংরেজ কর্মচারীরাও, নিজেদের হয়ে বেগার শ্রম দিতে বাধ্য করতো। যদি মুন্ডারা কোনো কারণে বেগার শ্রম দিতে না চাইতো, তাহলে তাদের কপালে থাকতো বিভিন্ন রকম শারীরিক অত্যাচার।
◆ জমির দখল : ইংরেজ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর অনেক সময় এমনও হয়েছে যে,নিরীহ বা অল্পশিক্ষিত কৃষিজীবী মুন্ডাদের তাদের নিজস্ব জমি অর্থাৎ যে জমিগুলো তারা জঙ্গল থেকে উদ্ধার করেছিল,সেই জমিগুলো বাইরের লোকেরা এসে দখল করে নিচ্ছে। এবং তার বিরুদ্ধে মুন্ডারা কোনো প্রতিবাদ ই করতে পারছে না।
◆ ধর্ম রূপান্তর : মুন্ডা বিদ্রোহের পেছনে খ্রিস্টান মিশনারীদেরও ভূমিকা ছিল। খ্রিস্টান মিশনারীরা নানারকম প্রলোভন বা ধর্মের ভয় ইত্যাদি দেখিয়ে সহজ সরল মুন্ডা সমাজের মানুষদের খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করতে থাকে।
◆ মুন্ডা সমাজের আইন-কানুন পরিবর্তন : অন্যান্য উপজাতি গুলির মতো মুন্ডা সমাজেও তাদের কিছু নিজস্ব ধর্মীয় আইন কানুন অথবা সামাজিক নিয়ম নীতি প্রচলিত ছিল। কিন্তু ইংরেজ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর, ইংরেজরা মুন্ডা সমাজেরতাদের নিজস্ব আইন কানুন সরিয়ে সেখানে জটিল ব্রিটিশ শাসনের আইন কানুন প্রবর্তন করে। যার ফলে এভাব্ব মুন্ডাদের মানসিক দিক থেকে আঘাত করা হয়।
◆ মুন্ডাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা : অন্যান্য নানা অত্যাচার ছাড়াও, মুন্ডাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাও করা হয়েছিল। ইউরোপীয়রা মুন্ডাদের নানা রকম ভালো কাজের লোভ দেখিয়ে এবং ভালো মজুরির বিনিময়এ আসামের চা বাগানে নিয়ে যায়। এবং এরপর সেখানে তাদের কাজ করানো শুরু হয়। কিন্তু আসামের চা বাগানে আসার পর সেখানে তাঁদের অমানবিক খাঁটনি করানো হতো। এবং তার পরেও চলছতো তাদের ওপর নানা রকম শারীরিক অত্যাচার।
উপসংহার : উপরিক্ত নানা শোষণ এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে বিরসা মুন্ডা বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়। বিরসা একাই মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান নেতা হিসেবে এগিয়ে আসে। এবং তার নেতৃত্বেই মুন্ডারা ব্রিটিশ শাসন এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর বিশৃঙ্খলা বা প্রবল বিক্ষোভ নামের উলগুলান শুরু করে।
মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য কি ছিল? | মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান উদ্দেশ্য কি ছিল?
উওর : মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য কি ছিল অথবা মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান উদ্দেশ্য কি ছিল,তা আমরা মুন্ডা বিদ্রোহের কারণগুলি সম্পর্কে আলোচনা করলেই বুঝতে পারি। বিরসা মুন্ডার " মুন্ডা " বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য গুলির মধ্যে ছিল -
• মুন্ডাদের জন্য একটি স্বাধীন মুন্ডারাজ প্রতিষ্ঠা করা।
• মুন্ডা সমাজে ব্রিটিশ নিয়মকানুন সরিয়ে তাদের প্রচলিত নিয়ম কানুন পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা।
• মুন্ডাদের উপর থেকে জমিদার এবং মহাজনদের অত্যাচার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা।
• মুন্ডা সমাজের প্রচলিত জমির যৌথ মালিকানা অথবা খুৎকাঠি প্রথা পুনরায় ফিরিয়ে আনা ইত্যাদি।
মুন্ডা বিদ্রোহের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা মুন্ডা বিদ্রোহের ফলাফল গুলি লেখো।
ভূমিকা : ব্রিটিশ শাসন এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রায় 6000 মুন্ডারা বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে 1899 খ্রিষ্টাব্দের 24 শে জানুয়ারি মুন্ডা বিদ্রোহ শুরু করেছিল। কিন্তু 1900 খ্রিষ্টাব্দের 9 ই জানুয়ারি, তীর-ধনুক নিয়ে যুদ্ধ করা মুন্ডারা আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত ইংরেজ সেনাবাহিনীর কাছে সম্পূর্ণ ভাবে পরাজিত হয়। বিদ্রোহের শেষে এই বিদ্রোহের প্রধান নেতা বিরসা মুন্ডা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন এবং রাচি জেলে তিনি তার প্রাণ ত্যাগ করেন। এবং বিরসা মুন্ডার মৃত্যুর পর সম্পূর্ণভাবেই মুন্ডা বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু মুন্ডা বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও মুন্ডা বিদ্রোহের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল ছিল। যেমন -
◆ বেগার শ্রম বন্ধ : মুন্ডা বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার মুন্ডাদের বেগার শ্রমের দিকটা কিছুটা হলেও বুঝতে পারে। এবং এই বিদ্রোহের পর মুন্ডাদের বেগার শ্রমকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়।
◆ ছোটনাগপুর টেনেন্সি অ্যাক্ট : মুন্ডা বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার 1908 খ্রিস্টাব্দে ছোটনাগপুর টেন্যান্সি অ্যাক্টের দ্বারা মুন্ডা সমাজে প্রচলিত খুৎকাঠি প্রথা ফিরিয়ে দেয়। অর্থাৎ তাদের জমি যৌথ মালিকানা পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
◆ প্রশাসনের সহযোগিতা : মুন্ডা বিদ্রোহের পর সরকার মুন্ডাদের বিভিন্ন অভাব-অভিযোগের দিকে গুরুত্ব দেয় এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহন করে। এবং এভাবে আদিবাসী মুন্ডারা কিছুটা হলেও আইনি অধিকার বা সহযোগিতা লাভ করে।
◆ বিরসা সম্প্রদায় : মুন্ডা সমাজে বিরসা মুন্ডাই ছিল মুন্ডাদের ধরতি আবা অর্থাৎ পৃথিবীর পিতা। মুন্ডা সমাজের বিরসা এতটাই সম্মানীয় ছিলেন যে,মুন্ডা বিদ্রোহের পর মুন্ডা সমাজে " বিরসা " নামক একটি পৃথক উপজাতির শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়।
শ্রেণি | দশম |
বিষয় | ইতিহাস |
অধ্যায় | প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ |
প্রশ্ন | L.A |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | 3 |
PDF Fize | 300KB |