কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বর্ণিত রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আলোচনা করো | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় ( Class 11 history chapter questions and answers in bengali ) রাষ্ট্রের প্রকৃতি এবং তার শাসনতন্ত্র অধ্যায়ের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর ( Class 11 history chapter 4 questions and answers ) দেবো। এবং সেইসঙ্গে একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড় প্রশ্ন উত্তর হিসাবে একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়( Class 11 history questions answers chapter 4 ) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন "কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বর্ণিত রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আলোচনা " এই প্রশ্নের উওর একাদশ শ্রেণির ইতিহাস নোট হিসাবে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বর্ণিত রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আলোচনা করো | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর
উওর : চতুর্থ শতকের ভারতের বিখ্যাত কূটনীতি পরায়ন ব্রাহ্মণ কৌটিল্য বা বিষ্ণুগুপ্ত তার " অর্থশাস্ত্র " গ্রন্থে রাজনীতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। বিষ্ণুগুপ্ত বা কৌটিল্যের রচিত অর্থশাস্ত্র গ্রন্থটির নাম শুনে স্বাভাবিকভাবে মনে হতে পারে,যে এটি ধন সম্পদ বা আর্থিক বিষয় বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু বাস্তবে এটি এমন একটি গ্রন্থ যেখানে কৌটিল্য তার নিজস্ব রাষ্ট্রনীতি বা রাজনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছেন।
কৌটিল্যের রচিত এই অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে আমরা রাজ্য পরিচালনা অথবা রাষ্ট্রপরিচালনা এবং রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে রাজার বিভিন্ন কর্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারি।
◆ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র বর্ণিত রাষ্ট্রনীতি -
◆ রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ : কৌটিল্য একটি রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রের বিভিন্ন ভাগ এর কথা উল্লেখ করেছেন. আমাদের দেহকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য যেমন পঞ্চ ইন্দ্রিয় ঠিক থাকা প্রয়োজন,ঠিক তেমনি একটি রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য - রাজা,আমললগোষ্ঠী, দুর্গ - শহর, অর্থভাণ্ডার,শাস্তি,বিধান ও বন্ধুরাজ্য - এই সাতটি উপাদান থাকা প্রয়োজন।
◆ রাষ্ট্রের আয়তন : কৌটিল্যে তার
অর্থশাস্ত্রের রাষ্ট্রের আয়তন সম্পর্কে স্পষ্ট করে কোনো মতবাদ প্রকাশ করেননি। কিন্তু অনেকে এটা মনে করেন যে - কৌটিল্য বৃহদায়তন রাষ্ট্রের পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি মনে করতেন যে একটি রাষ্ট্রের আয়তন যত বেশি হবে, সেও রাষ্ট্র থেকে সম্রাট ততো বেশি পরিমাণ রাজস্ব অথবা খাজনা আদায় করতে পারবেন।এবং সেই আদায় করা খাদ্যের মাধ্যমে রাজকোষ বা সাম্রাজ্যের অর্থভাণ্ডার যতই শক্তিশালী হয়ে উঠবে। সুতরাং রাষ্ট্রের আয়তন বৃহৎ হওয়া উচিত বলেই তিনি সমর্থন করতেন।
◆ রাজার ক্ষমতা : কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের রাজা অথবা সম্রাটকে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী বলে উল্লেখ করেছেন। রাজাকে হতে হবে কূটনীতি পরায়ন। সম্রাট অথবা রাজাই হবেন তার রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী এবং সর্বোচ্চ শাসক। সম্রাট বা রাজার উপরে কেউ থাকবে না।
◆ ধর্মনিরপেক্ষতা : কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ সম্রাট অথবা রাজা যে কোনো ধর্মেরই হোক না কেন,সেই রাষ্ট্রের অথবা সাম্রাজ্যের সমস্ত প্রজাকেও যে সম্রাটের অথবা রাজার ধর্ম গ্রহণ করতে হবে, তিনি সেরকম কথা বলেননি। রাজার রাজ্য প্রজারা তাদের নিজস্ব যে কোনো ধর্ম পালন করতে পারেন। এবং সেক্ষেত্রে রাজা বা সম্রাটের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না।।
◆ রাজার কার্যাবলী : অর্থশাস্ত্রে কৌটিল্য রাজার জন্য এবং তার রাজ্য পরিচালনার জন্য বিভিন্ন কাজের কথা উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ একটি রাজ্যকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য একজন রাজার কি কি করনীয়, তিনি তা খুব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।
◆ প্রজা কল্যান : কৌটিল্যের অর্থ শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে - একজন রাজা কখনোই স্বৈরাচারী হবেন না। অর্থাৎ তিনি কখনোই এমন কাজ করবেন না, যার দ্বারা তার প্রজাদের ক্ষতি হতে পারে। রাজা এমন কোনো কাজ করবে না, যার মাধ্যমে সেই রাজ্যের প্রজাদের উপর দুঃখ-কষ্ট ইত্যাদি নেমে আসবে।। সম্রাট হবে এমন একজন যে সবসময়ই তার রাজ্যের প্রজাদের কল্যাণের কথা ভাববে। এবং সেই অনুযায়ী প্রজা কল্যাণের জন্য বিভিন্ন কাজ করবে।
◆ প্রজাদের আর্থিক সাহায্য : কৌটিল্যে এই কথা উল্লেখ করেছেন যে - রাজাকে তার প্রজাদের- প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা দুর্ভিক্ষের সময় তাদের প্রজাদের গিয়ে পাশে দাঁড়াতে হবে। এবং মহামারি প্রতিরােধ, অসহায় বৃদ্ধ ও বিধবাদের ভরণ-পােষণের, ত্রান, খাদ্য সরবরাহ ইত্যাদির দায়িত্ব নিয়ে হতে ইত্যাদি।
◆ নগর ও দুর্গ নির্মাণ : বিভিন্ন বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য, কৌটিল্য রাষ্ট্রের কেন্দ্রস্থলে এবং রাষ্ট্রের চারিদিকে বিভিন্ন নগর দুর্গ তৈরি করার কথা উল্লেখ করেছেন।
◆ মন্ডলতত্ত্ব : কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্রের মন্ডল তত্ত্বের উল্লেখ করেছেন। কৌটিল্যের মতে মন্ডল তত্ত্ব হলো - সীমান্তবর্তী পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র হলো শত্রু কিন্তু তার পরবর্তী রাষ্ট্র হল মিত্র। রাজাকে এই মন্ডলতত্ত্ব অনুসারে কোনটি তার শত্রু দেশ এবং কোনটি তার মিত্রদেশ তা বুঝে নিতে হবে।
◆ যুদ্ধ : কুটিলতা অর্থশাস্ত্রে যুদ্ধকে সমর্থন করেছেন। তিনি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যেকোনো পন্থাকেই সমর্থন করেছেন। তিনি এও উল্লেখ করেছেন যে, যুদ্ধই হলো শান্তির একমাত্র পথ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে - কৌটিল্য একজন প্রাচীন ভারতের কূটনীতিবিদ হওয়া সত্ত্বেও,তিনি তার অর্থশাস্ত্রে রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে যে উৎকর্ষের প্রমাণ দিয়েছেন,তা সবসময়ই প্রশংসনীয়।
আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে তোমরা একাদশ শ্রেণির বড় প্রশ্ন উত্তর হিসেবে চতুর্থ অধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন "কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বর্ণিত রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আলোচনা " - এর উওর পেয়ে গেছো। একাদশ শ্রেণির ইতিহাস এই নোটটি যদি তোমাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য ইতিহাসের নোট বা অন্যান্য পোস্ট গুলো দেখতে পারো।
Tags :