মাধ্যমিক ভূগোল

0

  ১.১. বায়ুমন্ডলের যে স্তরে আবহাওয়ার গোলযোগ দেখা যায় সেই স্তরটি হল-

ক) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার খ) মেসোস্ফিয়ার

গ) ট্রপোস্ফিয়ার ঘ) আয়নোস্ফিয়ার


১.২. বৈপরীত্য উত্তাপ সংঘটিত হয় যখন-

ক) উচ্চতা বৃদ্ধিতে উষ্ণতা হ্রাস পায়

খ) উচ্চতা বৃদ্ধিতে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়

গ) উচ্চতা বৃদ্ধি বা হ্রাসে উষ্ণতা অপরিবর্তিত থাকে

ঘ) অক্ষাংশের মান বৃদ্ধিতে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়।


১.৩. ভারতের ডেট্রয়েট বলে পরিচিত-

ক ) জামসেদপুর খ) আমেদাবাদ

গ) পুনে ঘ) চেন্নাই।


১.৪. ভারতের একটি কার্পাস গবেষনা কেন্দ্রটি অবস্থিত-

ক) লক্ষ্ণৌ খ) নাগপুর

গ) কটক ঘ) মুম্বাই।


২। নিম্নলিখিত বাক্যগুলি শুদ্ধ হলে পাশে 'শু' এবং অশুদ্ধ হলে পাশে 'অ' লেখো:


২.১. স্থলবায়ু দিনের বেলায় প্রবাহিত হয়।

উওরঃ অশুদ্ধ 

২.২. ভারতের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে প্রথম রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ।

উওরঃ অশুদ্ধ  

২.৩. ভারতের জনঘনত্ব প্রতি বর্গ কিমিতে 382 জন।

উওরঃ শুদ্ধ 

২.৪. উপসাগরীয় স্রোত হল একটি শীতল স্রোত।

উওরঃ শুদ্ধ 


৩। একটি বা দুটি শব্দে উত্তর দাওঃ (যে কোন চারটি)


৩.১. কোন সাগরের উপকূল নেই?

উওরঃ ক্যাস্পিয়ান সাগরে। 


৩.২. Normal lapse rate কী?

উওরঃ বায়ুমণ্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতি এক কিমিতে ৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়া উষ্ণতা কমতে থাকে একে নরমাল ল্যাপস রেট বলে।


৩.৩. ভারতের ইলেক্ট্রনিকস্ শহর কাকে বলে?

উওরঃ বেঙ্গালুরুকে 


৩.৪. সোনালী চতুর্ভূজ কোন পরিবহন মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত?

উওরঃ সড়ক পথ।


৩.৫. ভারতের কোন রাজ্যে সবচেয়ে বেশী ধান উৎপাদন হয়?

উওরঃ পশ্চিমবঙ্গ।


৪। শূন্যস্থান পূরণ কর:


৪.১. ন্যাপথা_______শিল্পের প্রধান কাঁচামাল।

উওরঃ পেট্রোরসায়ন 

৪.২. বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোত বিক্ষিপ্ত হয়_____শক্তির প্রভাবে।

উওরঃ কোরিওলিস বল।

৪.৩. ২০১১ খ্রীষ্টাব্দের আদমসুমারি অনুসারে ভারতে সর্বনিম্ন জনঘনত্ব সম্পন্ন রাজ্যটি হল___।

উওরঃ অরুনাচল প্রদেশ

৪.৪. নিরক্ষীয় অঞ্চলে ____ ধরনের বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়।

উওরঃ পরিচলন।



৫। নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও:


৫.১. অ্যালবেডো কী?

উওরঃ পৃথিবীর ১০০ ভাগ সূর্য রশ্মির মধ্যে ৩৪ শতাংশ বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন মাধ্যম এবং উপাদান দ্বারা প্রতিফলিত এবং বিচ্ছুরিত হয়ে পুনরায় মহাশূন্যে ফিরে যায়। এই রশ্মি বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করতে পারে না।। এই নিষ্ক্রিয় সৌরতাপ কেই পৃথিবীর অ্যালবেডো বলা হয়। 


অথবা ; সিজিগি কী?

উওরঃ জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুসারে যখন সূর্য,চাঁদ ও পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করে এবং অমাবস্যা তিথিতে যখন চাঁদ- পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে থাকে তখন তাকে সিজিগি বলে।


৫.২. বৈপরীত্য উত্তাপ?

উওরঃ যখন কোনো স্থানে উচ্চতা বাড়লেও উষ্ণতা বাড়েও না এবং কমেও না, সেই অবস্থাকে বৈপরীত্য উষ্ণতা বলে।


অথবা, বানডাকা কী?

উওরঃ ভরা ফোটানোর সময় সমুদ্রের জল প্রবল গতিতে,নদীর মোহনা অঞ্চল দিয়ে উল্টো খাতে প্রবেশ করতে থাকে এবং প্রচুর জলোচ্ছাস ঘটায়।একে বলা হয় বান ডাকা বলে। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি নদীতে এবং সুন্দরবনের বানডাকা নদীতে দেখা যায়।


৫.৩. সবুজ বিপ্লব বলতে কী বোঝ?

উওরঃ ভারতবর্ষে ১৯৬০ এর দশকে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে উচ্চ ফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, জলসেচ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় যার ফলস্বরূপ ফসলের উৎপাদন অত্যাধিক পরিমানে বৃদ্ধি পায়, যাকে সবুজ বিপ্লব বলে। সবুজ বিপ্লবের প্রধান ফসল হল গম ও ধান। ভারতবর্ষে সবুজ বিপ্লব প্রথম দেখা যায় পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশে।

▪ এম এস স্বামীনাথনকে ভারতের সবুজ বিপ্লবের জনক বলা হয়।


অথবা--

শিকড় আলগা শিল্প বলতে কী বোঝ?

উওরঃ বিশুদ্ধ কাচামাল নির্ভর শিল্পগুলির ক্ষেত্রে পরিবহণ ব্যয়ের গুরুত্ব অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় শিল্পকেন্দ্রগুলি যেমন উৎস অঞ্চলে গড়ে উঠতে পারে, তেমনই অন্যান্য সুযোগ সুবিধাহেতু দূরবর্তী কোনো স্থানেও সাবলীলভাবে গড়ে উঠতে পারে । তাই এইপ্রকার শিল্পগুলি শিকড় আলগা শিল্প (Footloose Industry) নামে পরিচিত ।


৫.৪. জনঘনত্ব কী?

উওরঃ জনঘনত্ব বলতে বোঝায় কোন দেশ বা নিদিষ্ট অঞ্চলের মোট আয়তনের তুলনায় ঐ দেশ বা অঞ্চলে প্রতিবর্গ কিমিতে কত সংখ্যক লোক বসবাস করে তার পরিমানকে বোঝায়। অর্থাৎ জনঘনত্ব হল কোনো নিদিষ্ট আয়তনের ভূভাগ ও ঐ ভূভাগে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যার অনুপাত।

জনঘনত্ব =  মোট জনসংখ্যা / মোট আয়তন 

অথবা--

স্থিতিশীল উন্নয়ন বলতে কী বোঝ?

উওরঃ স্থিতিশীল উন্নয়ন বলতে বোঝায় সম্পদকে এমনভাবে ব্যবহার করা যাতে তা বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মেটানোর সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা মেটাতেও সক্ষম হয়।




প্রশ্নঃ বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতি গুলি আলোচনা করো


ভূমিকাঃ সূর্যকিরণ সরাসরি বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করতে পারে না। বায়ুমণ্ডল কয়েকটি পদ্ধতিতে উত্তপ্ত হয়। যেমন-

১. পরিবহনঃ পদার্থের অণুগুলি স্থান পরিবর্তন না করে যদি একটি অণু থেকে পার্শ্ববর্তী অণুতে তাপ সঞ্চালিত হয় তাকে পরিবহন পদ্ধতি বলে। যতক্ষণ না তাপের সমতা আসে ততক্ষণ এই পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালিত হতে থাকে। সূর্যের তাপে প্রথমে ভূপৃষ্ঠে উত্তপ্ত হয়। উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠ থেকে সংলগ্ন বায়ুস্তর উত্তপ্ত হয়, সংলগ্ন বায়ুস্তর থেকে পার্শ্ববর্তী বায়ুস্তরে তাপের পরিবাহিত হয়। স্থির বায়ুতে এই প্রক্রিয়ায় তাপ সঞ্চালিত হয় বা উত্তপ্ত হয়।  


২. পরিচলন পদ্ধতিঃ    সূর্যের তাপে প্রথমে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়। উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে ভূপৃষ্ঠের সংলগ্ন বায়ু উত্তপ্ত ও হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। ফলে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন অঞ্চলে শূন্যস্থানের সৃষ্টি হয়। শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য উপরিভাগ থেকে অপেক্ষাকৃত শীতল এবং ভারী বাতাস ছুটে আসে। এই বাতাসও উষ্ণ ও হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। এইভাবে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতিকে পরিচলন পদ্ধতি বলে।


৩. বিকিরণ পদ্ধতিঃ কোন মাধ্যম ছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানের তাপ সঞ্চালিত হওয়াকে বিকিরণ পদ্ধতি বলে। সূর্য এবং পৃথিবীর মাঝে এক বিশাল অংশ বায়ুশূন্য বা শূন্য মাধ্যম রয়েছে। এই শূন্য মাধ্যমের মধ্য দিয়ে সূর্যরশ্মি ক্ষুদ্রতরঙ্গ রূপে পৃথিবীতে পৌঁছায় এবং পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে। এছাড়াও-

৪. অ্যাডভেকশনঃ  উত্তপ্ত বাতাস ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বা অনুভূমিকভাবে প্রবাহিত হয়ে অপেক্ষাকৃত শীতল অঞ্চলে উপস্থিত হয় এবং সেখানকার বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে। একে অ্যাডভেকশন বলে।


প্রশ্নঃ ভরা কোটার এবং মরা কোটালের মধ্যে পার্থক্য কী?


প্রশ্নঃ রবিশস্য এবং খারিফ শস্যের মধ্যে পার্থক্য লেখো




প্রশ্নঃ রেলপথের দুটি সুবিধা এবং অসুবিধা আলোচনা করো।






প্রশ্নঃ বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।


উত্তরঃ ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা সর্বত্র সমান নয়। নানা প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে উষ্ণতার পার্থক্য ঘটে।


ক) অক্ষাংশঃ বায়ুর উষ্ণতার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক হলো অক্ষাংশ। অক্ষাংশের মান বৃদ্ধি পেলে উষ্ণতা হ্রাস পায়। নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে উত্তর মেরু বা দক্ষিণ মেরুর দিকে অগ্রসর হলে উষ্ণতা কমে যায়। প্রতি ১ ডিগ্রি অক্ষাংশে ০.২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হারে উষ্ণতা কমে।


খ) উচ্চতাঃ সাধারণভাবে দেখা যায় প্রতি এক হাজার মিটার উচ্চতায় প্রায় 6.4 ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে তাপমাত্রা হ্রাস পায়। তাই একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও সমতলের তুলনায় প্রচুর স্থানের তাপমাত্রা কম হয়।


গ) স্থলভাগ ও জলভাগের বন্টনঃ জলভাগ অপেক্ষাস স্থলভাগ দ্রুত উষ্ণ ও শীতল হয়। একই পরিমাণ সৌর শক্তি দ্বারা নির্দিষ্ট পরিমাণ জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ তিনগুণ বেশি উষ্ণ হয়। সেই জন্য একই অক্ষাংশে অবস্থিত মহাদেশীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল বেশি ঠান্ডা এবং উপকূল অঞ্চল সমভাবাপন্ন প্রকৃতির হয়।


ঘ) বায়ুপ্রবাহঃ বায়ুপ্রবাহ তাপ বহন করে তাই কোন অঞ্চলের উপর দিয়ে উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত হলে সেখানকার তাপমাত্রা বাড়ে আবার শীতল বায়ু প্রবাহিত হলে তাপমাত্রা কমে।


ঙ) ভূমির ঢালঃ ভূমির যে ডালের উপর সূর্যালোক লম্বভাবে পরে সেই ঢালে উষ্ণতা অপেক্ষাকৃত বেশি হয় এর বিপরীত ঢালে সূর্যালোক তীর্যকভাবে পড়ে ও উষ্ণতা তুলনামূলকভাবে কম হয়।


চ) সমুদ্রস্রোতঃ সমুদ্র উপকূলের সন্নিকটে উষ্ণ বা শীতল সমুদ্রস্রোত উপকূলীয় জলবায়ুকে দারুন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

যেমন- উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ, উত্তর সাগর শীতকালে বরফ আবৃত হয় না। কিন্তু বাল্টিক সাগর বরফাচ্ছন্ন হয়।


ছ) মৃত্তিকাঃ বিভিন্ন প্রকার মৃত্তিকার তাপগ্রহণ এবং তাপ বিকিরণ ক্ষমতা বিভিন্ন রকম হয়। তাই মৃত্তিকা গঠনের পার্থক্যের জন্য বায়ুমন্ডলে তাপমাত্রার তারতম্য হয়। যেমন - পলিমাটি তুলনায় ল্যাটেরাইট মাটির তাপগ্রহণ ও বিকিরণ ক্ষমতা বেশি।


জ) শিল্পায়নঃ বর্তমান যুগ যন্ত্র সভ্যতার যুগ। এই যুগে নানা শিল্পাঞ্চলে কলকারখানা থেকে নির্গত তাপ বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে। অধিক সংখ্যায় যানবাহন ও কলকারখানা নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড কার্বন-মনোক্সাইড নাইট্রোজেন অক্সাইড প্রভৃতি গ্রীন হাউস গ্যাস বেশি পরিমাণে তাপ শোষণ করে এইসব স্থানে বাড়িয়ে দেয়। 


ঝ) মেঘাচ্ছন্নতাঃ আকাশে ঘন মেঘের আবরণ একদিকে যেমন দিনের বেলা সৌরশক্তিকে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছাতে বাধা দেয় অপরদিকে রাত্রিবেলা ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকৃত তাপকেও মহাশূন্যে পৌঁছাতে দেয় না ফলে মেঘের আবরণ থাকলে দিনের বেলা উত্তাপ কমে আবার রাত্রেবেলা উত্তাপ বাড়ে তাই মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি অনেক গরম হয়। 


প্রশ্ন : ভূপৃষ্ঠের বায়ুচাপ বলয়গুলির সঙ্গে নিয়ত বায়ুপ্রবাহের সম্পর্ক কী ?


বায়ুচাপের পার্থক্যই নিয়ত বায়ুপ্রাহের প্রধান কারণ । যেখানে বায়ুর চাপ বেশি, সেখান থেকে যে দিকে বায়ুর চাপ কম, সেদিকেই বায়ু প্রবাহিত হয় । এই নিয়ম মেনে পৃথিবীর চারটি স্থায়ী উচ্চচাপ বলয় থেকে তিনটি স্থায়ী নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সারা বছর ধরে নিয়মিতভাবে ও নির্দিষ্ট গতিতে প্রবাহিত বায়ুই হল নিয়ত বায়ুপ্রবাহ । নিয়ত বায়ুপ্রবাহ তিন রকমের, যথা— আয়ন বায়ু, পশ্চিমাবায়ু ও মেরুবায়ু ।

(১) আয়ন বায়ুর সঙ্গে বায়ুচাপ বলয়ের সম্পর্ক :

(ক) উত্তর গোলার্ধে কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সারা বছর ধরে আয়ন বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে ।

(খ) মোটামুটিভাবে ৩০০ থেকে ৫০ উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যে আয়নবায়ু প্রবাহিত হয় । ফেরেলের সূত্র অনুসারে উত্তর গোলার্ধে এই বায়ুপ্রবাহ ডান দিকে কিছুটা বেঁকে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ছুটে আসে ।

(গ) উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আসে বলে উত্তর গোলার্ধে এই বায়ুপ্রবাহের নাম উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু

(ঘ) দক্ষিন গোলার্ধে আয়নবায়ু ফেরেলের সূত্র অনুসারে খানিকটা বাঁ দিকে বেঁকে দক্ষিন-পূর্ব দিক থেকে ছুটে আসে । দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে আসে বলে দক্ষিণ গোলার্ধে এই বায়ুপ্রবাহের নাম দক্ষিন-পূর্ব আয়ণ বায়ু

(ঙ) নিরক্ষরেখা নিকটবর্তী নিরক্ষীয় ক্রান্তীবলয় অঞ্চলে ৫০ উত্তর অক্ষাংহ থেকে ৫০ দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত স্থানে  উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিন-পূর্ব আয়ণ বায়ু মিলিত হয় বলে ওই অঞ্চলে কোনো বায়ুপ্রবাহ থাকে না 

(২) পশ্চিমাবায়ুর সঙ্গে বায়ুচাপ বলয়ের সম্পর্ক : পশ্চিমাবায়ু উভয় গোলার্ধে সাধারণত ৩০০ থেকে ৬০০ অক্ষরেখার মধ্যে ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সারা বছর ধরে প্রবাহিত হয় । এই বায়ু ফেরেলের সূত্র মেনে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমাবায়ু হিসেবে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাঁ দিকে বেঁকে উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমাবায়ু হিসাবে প্রবাহিত হয় ।

(৩) মেরুবায়ুর সঙ্গে বায়ুচাপ বলয়ের সম্পর্ক : মেরুবায়ু সাধারণত উভয় গোলার্ধে মোটা মুটি ৭০০ থেকে ৮০০ অক্ষরেখার মধ্যে মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে মেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সারা বছর ধরে প্রবাহিত হয় । এই বায়ু উত্তর গোলার্ধে উত্তর-পূর্ব মেরুবায়ু এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব মেরুবায়ু নামে প্রবাহিত হয় ।



প্রশ্নঃ চা উৎপাদনের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ আলোচনা করো


চা চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ পৃথিবীর সকল দেশের চা উৎপাদন হয় না। চা উৎপাদনের জন্য কিছু অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রয়োজন হয়।


** চা উৎপাদনের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ ;

ভারতে অর্থকরী পানীয় ফসলগুলির মধ্যে চা অন্যতম। বৈদিশিক বাজারে চা রপ্তানী করে ভারতবর্ষ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। ভারতের মূলত: উত্তরপূর্ব পার্বত্য অঞ্চলে এবং পশ্চিমঘাট পর্বতমালার দক্ষিণভাগে চা চাষ হতে দেখা যায়।

ভারতে চা চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশগুলি হল—

(i) উষ্ণতা : গড়ে চা চাষের জন্য 20°C - 25°C তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়। চা পাতা রোপণের সময় 20°C, চা গাছ বড় হবার সময় 18°C-20°C তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়। চা পাতা তোলা ও শোকানোর জন্য সর্বোচ্চ 32°C তাপমাত্রা চা গাছ সহ্য করতে পারে।

(ii) বৃষ্টিপাত :  চা চাষের জন্য গড়ে 200cm-250cm বার্ষিক বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়।

(iii) আর্দ্র জলবায়ু :  চা গাছ রোপণের সময় জলবায়ু আর্দ্র থাকা প্রয়োজন। তবে চা গাছ বৃদ্ধির সময় এবং চা পাতা তোলার সময় জলবায়ু অবশ্যই শুষ্ক হতে হবে।

(iv) ভূমির প্রকৃতি :   চা চাষের জন্য ঢালু পার্বত্য ভূমি প্রয়োজন। চা গাছের গোড়ায় জল দাঁড়ালে চা গাছ নষ্ট হয়ে যায়। তাই জল দাঁড়াতে পারে না এরকম ঢালু জমি চা চাষের জন্য আদর্শ।

(v) মৃত্তিকা : উচ্চ জলনিকাশি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জৈব অম্লধর্মী মৃত্তিকায় চা চাষ ভাল হয়। সাধারণতঃ উর্বর লৌহমিশ্রিত দোআঁশ মৃত্তিকায় চা চাষ ভাল হয়। চা-এর ভাল ফলনের জন্য মাঝে মাঝে নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সারের প্রয়োগ প্রয়োজন। উপপৃষ্ঠীয় স্তরের মৃত্তিকার গভীরতা 2 মিটারের মতো হলে চা গাছের বৃদ্ধি ভাল হয়।


(vi) ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষের উপস্থিতি : 

          চা গাছ যেহেতু বেশী তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না, তাই চা গাছের সুস্থ বৃদ্ধির জন্য চা বাগানের মধ্যে মাঝারি উচ্চতার গাছ রোপণ করা হয়। এই গাছের ছায়া চা গাছের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। 



প্রশ্নঃ পূর্ব ও মধ্য ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের প্রাকৃতিক কারণ :


ভূমিকা : যেকোনো স্থানে কোনো একটি শিল্পের বিকাশ বা একদেশীভবনের ভবনের জন্য দুই ধরনের পরিবেশ থাকা প্রয়োজন। যথা শিল্প বিকাশের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ ও শিল্পের বিকাশের জন্য অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ। পূর্ব ও মধ্য ভারতে অধিকাংশ লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্র গড়ে ওঠার জন্য অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ দুইই লক্ষ্য করতে পারি। - 


আকরিক লোহাঃ লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্রের প্রধান কাঁচামাল গুলির মধ্যে আকরিক লোহাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ব মধ্য ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আকরিক লোহা খুবই সহজে পাওয়া যায়। যেমন-বিহারের সিংভূম, ওডিশার ময়ূরভঞ, ছত্তিশগড়ের বাইলাডিলা প্রভৃতি অঞ্চলে উচ্চমানের ম্যাগনেটাইট ও হেমাটাইট জাতীয় আকরিক লােহা পাওয়া যায়  যা পূর্ব ও মধ্য ভারতের লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্র গড়ে ওঠার একটি অন্যতম কারণ।


কয়লাঃ লৌহ ইস্পাত শিল্পের ক্ষেত্রে কয়লা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।।  পূর্ব ও মধ্য ভারত অঞ্চলের ঝরিয়া, বােকারাে, গিরিডি এবং ওডিশার তালচের প্রভৃতি কয়লাক্ষেত্র থেকে প্রচুর পরিমাণে বিটুমিনাস জাতীয় কয়লা উত্তোলন করা হয়। যা এই শিল্পের উন্নতির ক্ষেতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।।


চুনাপাথর, ডলােমহিট ও ম্যাঙ্গানিজের প্রাচুর্য‍্যঃ

ওডিশার বীরমিত্রপুর থেকে চুনাপাথর, গাংপুর ও সুন্দরগড় থেকে ডলােমাইট; কোরাপুট, কালাহাণ্ডি, গাংপুর থেকে ম্যাঙ্গানিজ পাওয়া যায়।


জল সরবরাহঃ বেশিরভাগ শিল্পেই বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে জল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পক্ষেত্রে জল বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য শিল্পের মতোই লৌহ ইস্পাত শিল্পের ক্ষেত্রে জল খুব গুরুত্বপূর্ণ।। এক্ষেত্রে পূর্ব মধ্য ভারতের বিভিন্ন নদী - দামােদর, সুবর্ণরেখা, মহানদী, ব্রাত্মণী প্রভৃতি নদীর জল পাওয়ার সুবিধা আছে।


বিদ্যুৎঃ প্রায় সব শিল্পের ক্ষেত্রেই বিদ্যুৎ প্রয়োজন। শিল্পের বিভিন্ন কাজ কর্মের জন্য অপরিহার্য ।  পূর্ব মধ্য ভারত অঞ্চলের দামােদর অববাহিকা ও হীরাকুদের জলবিদ্যুৎ দুর্গাপুর, পত্রাতু, বােকারাে প্রভৃতি কয়েকটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে।


পূর্ব ও মধ্য ভারতে লৌহ ইস্পাত শিল্পের একদেশী ভবনের অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ :


পরিবহনঃ যে কোনো শিল্পের ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।। যেকোনো শিল্পের অগ্রগতি বা উন্নতির ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যবস্থাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পূর্ব ও মধ্য ভারতের  পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মাধ্যমে এবং কয়েকটি সড়কপর্থের মাধ্যমে খনি অঞ্চল থেকে কাঁচামাল নিয়ে আসার সুবিধা হয় এবং ইস্পাত পাঠানাের সুবিধা আছে। এই বিশেষ সুবিধার জন্য পূর্ব ও মধ্য ভারতের লৌহ ইস্পাত শিল্পের জন্য যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে।


শ্রমিকঃ বিভিন্ন শিল্পের অগ্রগতির ক্ষেত্রে শ্রমিকের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।। শিল্পে শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যায়।। পূর্ব মধ্য ভারতের লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্রের জন্য দক্ষ শ্রমিক এর অভাব হয় না।।  যার ফলে পূর্ব ও মধ্য ভারতের লৌহ ইস্পাত শিল্প  যথেষ্ট উন্নতি করেছে।

সুতরাং, পূর্ব ও মধ্য ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের জন্য অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং  অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ দুটোই রয়েছে। তাই ভারতের অধিকাংশ লৌহ-ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র পূর্ব ও মধ্য ভারতে গড়ে উঠেছে।।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top