![]() |
দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিবর্তন এবং কয়েকটি মৌলিক ধারণা অধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কাকে বলে? আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিকাশের ধারাটি আলোচনা করো। ' এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। এবং পরবর্তীতে আমরা উচ্চ মাধ্যমিকের রাষ্ট্রবিজ্ঞান সহ আরও অন্যান্য বিষয়ের সমস্ত নোটস + অনলাইন মকটেস্ট তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কাকে বলে? আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিকাশের ধারাটি আলোচনা করো।
উওরঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক হলো এমন একটি বিষয়, যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, বিভিন্ন অরাষ্ট্রীয় সংগঠন, ক্ষমতা, বিশ্বরাজনীতি, বিশ্বপরিবেশ, বিশ্বশান্তি, যুদ্ধ, বাণিজ্য, রাজনৈতিক মতাদর্শ ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করে।।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিকাশের ধারাটির সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশ মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে এবং পরেই হয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশের ধারনা যে তার আগে শুরু হয়নি সেটা ভুল। কারণ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগেও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ধারণা গড়ে উঠেছিল। এবং বিভিন্ন পর্যায়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিকাশ ঘটিছিল। যেমন -
প্রাক শিল্প বিপ্লব পর্বে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশঃ
প্রাক শিল্প বিপ্লবের পর্বে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অস্তিত্ব ছিল। তৎকালীন সময়ের বিভিন্ন পন্ডিত ব্যক্তিদের রচনায় রাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র সম্পর্কিত সংক্রান্ত নানা বিষয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। এর থেকেই এটা বলা যায় যে, প্রাক শিল্প বিপ্লব পর্বেও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশ শুরু হয়েছিল।
শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী পর্বে আন্তর্জাতিক সম্পর্কঃ
ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী পর্বে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছিল। তার কারণ ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের ফলে অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে কাচামাল সংগ্রহ করা এবং বিদেশী বাজার দখল করে সেখানে শিল্পজাত দ্রব্য রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে অপর একটি রাষ্ট্রের সম্পর্ক গড়তে শুরু করে। এছাড়াও বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলির মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজার দখলকে কেন্দ্র করেও দ্বন্দ্ব, বিভিন্ন গোপন চুক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশ ঘটে।।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশঃ
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশ সবচেয়ে বেশি ঘটেছিলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা, ধ্বংসলীলা ইত্যাদি মানুষকে শান্তিকামী করে তোলে। এর ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বা পররাষ্ট্র নির্ধারণ ও রুপায়ণের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ থাকার দাবীতে 1814 সালে লন্ডনে ইউনিয়ন অফ ডেমোক্রেটিক কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এছাড়াও সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসনের বিভিন্ন পদক্ষেপ বিশেষ করে তার 14 দফা নীতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং চিন্তন কেন্দ্রের ভূমিকাঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে একটি পৃথক শাস্ত্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস করে এবং এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পঠন-পাঠনের উদ্দেশ্যে 1927 সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় প্রতিষ্ঠিত হয় গ্রাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশের এটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ এখানেই বিশ্বের মধ্যে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী দেওয়া শুরু হয়েছিল যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশের বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল।। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ান ইন্সটিটিউড অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স, নিউজিল্যান্ড ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স,লন্ডন ইন্সিটিউট অফ ওয়াল্র্ড আফেয়ারস ইত্যাদি বিশেষভাবে আন্তর্জাতিক আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশের যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের যথেষ্ট বিকাশ ঘটেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত হোক জাতিসংঘ এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিল। জাতিসংঘ এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বিশ্বজুড়ে শান্তিরক্ষার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে মিত্রতার সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করেছে। তাই তা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এছাড়াও,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের চিন্তন কেন্দ্রগুলি, যেমন - ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ রিভিউ,অস্ট্রেলিয়ান জার্নাল অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স, ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ পার্সপেক্টিভস, ফরেন পলিসি অ্যানালিলিস প্রভৃতি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
Tags :