বিভিন্ন ধরণের আদালতের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
[1] সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট:
ভারতের অর্থও বিচারব্যবস্থায় সবার শীর্ষে রয়েছে সুপ্রিমকোর্ট (Supreme Court)। সুপ্রিমকোর্টকে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত বা যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত বলা হয়। সুপ্রিমকোর্টের পরবর্তী পর্যায়ে আছে রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্ট (High Court)। সংবিধানের ২৯৪ নং ধারায় বলা হয়েছে, ভারতের প্রত্যেক রাজ্যে একটি করে হাইকোর্ট থাকবে। তবে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী অনুসারে পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন করে দুই বা ততোধিক রাজ্যের বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য মাত্র একটি হাইকোর্ট গঠন করতে পারে। ভারতে বর্তমানে ২৯টি অঙ্গরাজ্য এবং ৭টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য সর্বমোট ২১টি হাইকোর্ট রয়েছে।
[2] অধস্তন আদালতসমূহ:
হাইকোর্টের পরবর্তী পর্যায়ে রয়েছে অধস্তন আদালতগুলি (Subordinate Courts)। এই অধস্তন আদালতগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়-0 জেলার অধস্তন আদালতসমূহ @ মহানগরীয় অঞ্চলের অধস্তন আদালত। জেলার অধস্তন আদালতগুলিকে ২টি ভাগে ভাগ করা যায় [i] দেওয়ানি আদালত, [ii] ফৌজদারি আদালত। দেওয়ানি আদালতগুলি আবার ৪টি পর্যায়ে বিভক্ত— (a) জেলা বিচারকের আদালত, (b) অবর বিচারকের আদালত, (c) মুন্সেফের আদালত, (d) ন্যায় পঞ্চায়েত। অন্যদিকে, জেলার ফৌজদারি আদালতগুলির ৩টি শ্রেণি রয়েছে। এগুলি হল- (a) দায়রা আদালত, (b) অবর ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত [ এই আদালতে দু-ধরনের ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন বিজেরবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট এ নির্বাহী ম্যাজি8] (c) পঞ্চায়েত আদালত [ ফৌজদারি আদালতের সর্বনিম্নস্তরে অবস্থিত এই আদালতে গ্রামের ছোটোখাটো বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়।
মহানগরীয় অঞ্চলের (কলকাতা, চেন্নাই, মুম্বাই প্রভৃতি মহানগরীতে) সর্বোচ্চ আদালত হল মহানগরীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত। এর পরবর্তী পর্যায়ে রয়েছে নগর দেওয়ানি আদালত এবং ক্ষুদ্র আদালত। মহানগরীয় অঞ্চলের ফৌজদারি আদালতগুলি হল নগর দায়রা আদালত এবং প্রেসিডেন্সি ক্ষুদ্র আদালত |
[3] অন্যান্য আদালতসমূহ:
ভারতের বিচারব্যবস্থায় এ ছাড়া রয়েছে অন্যান্য আদালতসমূহ। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিক মালিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য শিল্প আদালত (Industrial Court and Tri bunals), সামরিক বাহিনীর জন্য সামরিক আদালত (Military Courts), সরকারি কর্মী, স্থানীয় সংস্থা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মীদের চাকরি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য প্রশাসনিক আদালত (Administra tive Tribunal)।
[4] লোক আদালতঃ
লোক আদালত ভারতের বিচারব্যবস্থার একটি সাম্প্রতিক মৌলিক সংযোজন। বিগত শতাব্দীতে ১৯৮০-এর দশকে লোক আদালতের সূচনা ঘটে। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এবং মামলার ব্যয়ভার হ্রাসের জন্য লোক আদালত গঠিত হয়।
[5] ক্রেতা আদালতঃ
ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় ক্রেতা আদালতও সাম্প্রতিককালের একটি অভিনব সংযোজন। ফৌজদারি বা দেওয়ানি আদালতের মতো চিরাচরিত আদালতগুলির থেকে এর গঠন ও কার্যাবলি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। মূলত ক্রেতা সাধারণের স্বার্থ দেখাই এর প্রধান কাজ। কোনো ক্রেতা যখন কোনো দ্রব্য বা পরিষেবা অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করতে গিয়ে প্রতারিত বা বঞ্চিত হন তখন তার প্রতিকারের জন্য এগিয়ে আসে ক্রেতা আদালত। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে 'ক্রেতা সুরক্ষা আইন' অনুসারে এই আদালত গঠন করা হয়।