নিরপেক্ষ ন্যায় কাকে বলে? || নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈধতার দশটি নিয়ম || নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈধতা বিচার

0

 

নিরপেক্ষ ন্যায় কাকে বলে? || নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈধতার দশটি নিয়ম || নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈধতা বিচার
নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈধতার দশটি নিয়ম || নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈধতা বিচার

আজকের এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা উচ্চ মাধ্যমিক দর্শন পঞ্চম অধ্যায় বা দ্বাদশ শ্রেণী দর্শন পঞ্চম অধ্যায় (WBCHSE Class 12 Philosophy Questions Answers Chapter 5) নিরপেক্ষ ন্যায়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন "নিরপেক্ষ ন্যায় কাকে বলে? || নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈধতার দশটি নিয়ম || নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈধতা বিচার" এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।

নিরপেক্ষ ন্যায় কাকে বলে? || নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈধতার দশটি নিয়ম || নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈধতা বিচার

উওরঃ- 

নিরপেক্ষঃ নিরপেক্ষ ন্যায় হলো এক ধরনের অবরোহনমূলক মাধ্যম অনুমান যেখানে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি যুক্তি বাক্য থেকে একটি নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত বাক্য প্রতিষ্ঠিত হয়।।

যেমন -

সকল মানুষ হয় মরনশীল ( প্রধান যুক্তিবাক্য)

রাম হয় মানুষ ( অপ্রধান যুক্তিবাক্য)

সুতরাং, রাম হয় মরনশীল ( সিদ্ধান্ত বাক্য )

নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈধতার দশটি নিয়ম || নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈধতা বিচার || Ten Rules of Impartial Justice Validity

ন্যয় অনুমান এক প্রকার অবরোহনমূলক মাধ্যম হনুমান বলে ন্যায় অনুমান শুধুমাত্র যুক্তির আকার গত বৈধতাকে প্রমাণ করে এর বস্তুগত সত্যতাকে প্রমাণ করে না।

ন্যায় অনুমানের এই আগারগত সত্যতাকে প্রমাণ করার জন্য ন্যায় অনুমানের গঠন এবং আকারকে যথাযথভাবে উপস্থাপিত করার জন্য তর্ক বিদগন ন্যায় অনুমানের মোট দশটি নিয়ম বা সূত্রের কথা উল্লেখ করেছেন। যদি কোনো নয় অনুমানের ক্ষেত্রে সেই ১০টি সূত্র বা নিয়মকে মেনে না চলা হয় তাহলে সেই ন্যায় অনুমানটি অবৈধ হয় এবং যদি সেই মেনে চলা হয় তাহলে ন্যায় অনুমানটি বৈধ রূপে গণ্য করা হয়।। ন্যায় অনুমানের গঠন এবং আকারকে সঠিকভাবে প্রমাণ করার জন্য যে দশটি সূত্রের কথা উল্লেখ করা হয়, তাহল- 

1- প্রত্যেকটি ন্যায় অনুমানের শুধুমাত্র তিনটি বচণ থাকবেঃ- 

ন্যায় অনুমান একটি অবরোহন মুলক মাধ্যম অনুমান। মাধ্যম অনুমান বলে ন্যায় অনুমানের দুটি যুক্তি বাক্য থেকে সিদ্ধান্তটি অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়।। ন্যায় অনুমান গঠিত হয় দুটি যুক্তি বাক্য বা আশ্রয় বাক্য এবং একটি সিদ্ধান্ত বাক্যের সমন্বয়ে। কোনো ন্যায় অনুমানের ক্ষেত্রে যুক্তি বাক্যের সংখ্যা দুটির কম হতে পারে না। এবং কোন ন্যায় অনুমানের ক্ষেত্রে যদি যুক্তিবাক্যের সংখ্যা ২ এর বেশি হয়ে যায় তাহলে সেখানে চতুষ্পদ গঠিত দোষের উদ্ভব ঘটে।।

2- প্রত্যেকটি ন্যায় অনুমানে শুধুমাত্র তিনটি পদ থাকবেঃ- 

ন্যায় অনুমানের দ্বিতীয় নিয়মে বলা হয় যে, কোন ন্যায় অনুমানের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র তিনটি পদ থাকবে। এক্ষেত্রে তিনটি পদ হলো হেতু পদ, সাধ্যপদ এবং পক্ষপদ। 

ন্যায় অনুমানের প্রধান যুক্তি বাক্য এবং সিদ্ধান্তে এই প্রত্যেকটি পদ অর্থাৎ হেতুপদ,পক্ষপথ এবং সাধ্যপদ দুবার করে ব্যবহৃত হয়।। এগুলোকে ইংরেজি M, S এবং P অক্ষর দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যদি তিনটির কম বা বেশি পদ থাকে তাহলে তর্কবিদরা তাকে ন্যায় অনুমান রূপে স্বীকার করেন না।  ন্যায় অনুমানের এই নিয়মটিও তার গঠনের সঙ্গে জড়িত।।

3- যুক্তিবাক্য দুটির মধ্যে হেতু পদ অবশ্যই একবার না একবার হতেই হবেঃ- 

ন্যায় অনুমানের ক্ষেত্রে তিনটি পদ থাকে। একটি হেতুপদ, একটি পক্ষপদ এবং অপরটি হল সাধ্যপদ। এই তিনটি পদের মধ্যে প্রধান যুক্তিবাক্য এবং অপ্রধান যুক্তি বাক্যের মধ্যে এই হেতুপদকে একবার না একবার বাপ্য হতেই হবে।। যদি দেখা যায় যে, প্রধান যুক্তি বাক্য এবং অপ্রধান যুক্তি বাক্য দুটির মধ্যে কোনোটির একটিতেও হেতু পদ ব্যাপ্ত হয়নি, তাহলে যে দোষের উদ্ভব করে তা হচ্ছে অব্যাপ্য হেতু দোষ।

4- যে পদ যুক্তিবাক্যে ব্যাপ্য নয় সে পদ সিদ্ধান্তে ব্যপ্য হতে পারে নাঃ-

ন্যায় অনুমানের দ্বিতীয় নিয়ম অনুসারে প্রতিটি ন্যায় অনুমানের তিনটি পদ থাকবে। এগুলো হলো M, S এবং P। এই তিনটি পদের মধ্যে হেতু পদ প্রধান যুক্তি বাক্য বা অপ্রধান যুক্তি বাক্যে একবার না একবার ব্যাপ্য হয়েই যায়। কিন্তু বাকি দুটি অর্থাৎ পক্ষপদ এবং সাধ্যপদ যদি প্রধান যুক্তি বাক্যে ব্যাপ্য না হয়ে সিদ্ধান্ত বাক্যে বাপ্য হয় অথবা পক্ষপদ যদি অপ্রধান যুক্তি বাক্যে ব্যাপ্য না হয় সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হয়, তাহলে অনুমানটি অবৈধ রূপে গণ্য হয়।। 

• কোনো ন্যায় অনুমানের ক্ষেত্রে সাধ্যপদ যদি প্রধান যুক্তি বাক্যে ব্যাপ্য না হয়ে সিদ্ধান্ত বাক্যে ব্যাপ্য হয়, তাহলে যে দোষের উদ্ভব ঘটে তা হল অবৈধ সাধ্য দোষ। 

• এবং যদি কোন ন্যায় অনুমানের ক্ষেত্রে পক্ষপদ অপ্রধান যুক্তিবাক্যে ব্যাপ্য না হয়ে সিদ্ধান্ত বাক্যে ব্যাপ্য হয়, তাহলে যে দোষের উদ্ভব ঘটে তা হল অবৈধ পক্ষদোষ।।

5- দুটি যুক্তি বাক্য যদি না-বাচক হয় তাহলে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় নাঃ-

ন্যায় অনুমানের পঞ্চম নিয়ম অনুসারে বলা হয়েছে, ন্যায় অনুমানের ক্ষেত্রে যদি প্রধান যুক্তি এবং অপ্রধান যুক্তি বাক্য উভয়ই নঞর্থক বা না-বাচক প্রকৃতির হয়, তাহলে সেই প্রকার বচন থেকে কোন সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না।। 

যেমন- 

• কোনো মানুষ নয় মরনশীল 

• কোনো কোনো পশু নয় মানুষ 

• কোনো কোনো পশু নয় মরনশীল

6- যদি দুটি যুক্তিপাক্ষের মধ্যে একটি নঞর্থক হয় তাহলে সিদ্ধান্তটিও নঞর্থক হবেঃ- 

ন্যায় অনুমানের এই নিয়ম অনুসারে বলা হয়েছে, প্রধান যুক্তি বাক্য যদি না বাচক হয় এবং অপ্রধান যুক্তি বাক্য যদি হ্যাঁ-বাচক হয়, তাহলে সিদ্ধান্তটি অবশ্যই না বাচক হবে। অথবা প্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি হ্যাঁ-বাচক এবং অপ্রধান যুক্তি বাক্য যদি না-বাচক হয় তাহলেও সিদ্ধান্তটি অবশ্যই না-বাচক হবে।।

উদাহরণ :- 

• কোনো চোর নয় সাধু (E)

• রাম হয় চোর (A)

• সুতরাং, রাম নয় সাধু (E)

7- যদি উভয় যুক্তি বা সদর্থক হয় তাহলে সিদ্ধান্তটি সদর্থক হবেঃ-

দুটি যুক্তিবাক্যই সদর্থক হওয়ার অর্থ হল প্রধান এবং অপ্রধান—উভয় যুক্তিবাক্যেরই সদর্থক হওয়া। প্রধান যুক্তিবাক্যটি সদর্থক হলে সেখানে হেতুপদের সঙ্গে সাধ্যপদের সম্পর্ককে স্বীকার করা হয়। আবার অপ্রধান যুক্তিবাক্যটিও সদর্থক হলে, সেখানেও হেতুপদের সঙ্গে পক্ষপদের সম্বন্ধ স্বীকৃত হয়। ফলে, সিদ্ধান্তে পক্ষপদ এবং সাধ্যপদের সম্বন্ধটি অবশ্যই স্বীকৃত হয়। সুতরাং দাবি করা সংগত যে, দুটি যুক্তিবাক্যই যদি সদর্থক হয়, তবে সিদ্ধান্তটিও সদর্থক হবে।

যেমন- 

• সকল কবি হয় মরনশীল(A)

• রাম হয় কবি(A)

• সুতরাং, রাম হয় মরনশীল (A)

8- যদি প্রধান যুক্তি বাক্য এবং অপ্রধান যুক্তিবাক্য বিশেষ হয় তাহলে কোন সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় নাঃ-

নিরপেক্ষ ন্যায়ের অষ্টম নিয়ম অনুসারে যদি প্রধান যুক্তি বাক্যটি বিশেষ হয় এবং অপ্রধান যুক্তি বাক্যটিও বিশেষ হয়ে যায় তাহলে তার থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না।।

 প্রধান যুক্তি বাক্য এবং অপ্রধান যুক্তি বাক্য উভয়ই বিশেষ হলে অব্যাহে তো দোষ অবৈধ সাধ্য দোষ অবৈধ পক্ষ দোষ ঘটে। তাই এগুলো অবৈধ।

9- যুক্তিবাক্য বিশেষ হলে সিদ্ধান্ত বাক্যটিও বিশেষ হবেঃ- 

নিরপেক্ষ ন্যায়ের নবম নিয়ম অনুসারে প্রধান যুক্তি বাক্য যদি সামান্য হয় এবং অপ্রধান যুক্তি বাক্য যদি বিশেষ হয় তাহলে সিদ্ধান্ত বা কঠিন অবশ্যই বিশেষ হবে।

এক্ষেত্রে কিছু কিছু জোড় অবৈধ হবে। যেমন - E এবং O, I এবং O এছাড়াও এরকম আরও কিছু জোড়।

10- প্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি বিশেষ হয় এবং অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি নঞর্থক হয়, তাহলে কোনো সিদ্ধান্ত লাভ করা যায় নাঃ- 

ন্যায় অনুমানের এই নিয়মটির বিষয়ে বলা হয় যে, প্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি বিশেষ হয়, তাহলে অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি নিশ্চিতভাবেই সামান্য হবে। কারণ দুটি যুক্তিবাক্যই বিশেষ হতে পারে না। এটা ন্যায় অনুমানের অষ্টম নিয়মের পরিপন্থী। ফলে, সিদ্ধান্তটি অবশ্যই সামান্য হবে এবং সামান্য হলে তা A অথবা E হবে। কিন্তু অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি নঞর্থক হওয়ার ফলে তা A বচন না হয়ে, E বচন রূপেই গণ্য হবে। সুতরাং এক্ষেত্রে ন্যায়ের আকারটি হবে (I)(E)। অর্থাৎ প্রধান যুক্তিবাক্যটি হবে 'I ' বচন এবং অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি হবে ‘E ’বচন। প্রধান ও অপ্রধান যুক্তিবাক্যের এধরনের জোড়ের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটি অবশ্যই 0 বচন হবে। সেক্ষেত্রে প্রধান যুক্তিবাক্যে সাধ্যপদটি অব্যাপ্যরূপে পরিগণিত হলেও, সিদ্ধান্তে O বচনের বিধেয়তে তা ব্যাপ্য হয়ে পড়ে। ফলে যে পদ আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য নয়, সে পদ সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হয়ে ন্যায়ের চতুর্থ নিয়মটিকে লঙ্ঘন করে। স্বাভাবিক পরিণতিতে তা অবৈধ সাধ্য দোষের (Fallacy of Illicit Major) সৃষ্টি করে। অতএব একথা বলা সংগত যে, প্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি বিশেষ হয় এবং অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি নঞর্থক হয়, তাহলে কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত পাওয়া সম্ভব হয় না।।


Tags : উচ্চ মাধ্যমিক দর্শন পঞ্চম অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর | দ্বাদশ শ্রেণী দর্শন পঞ্চম অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর | WBCHSE Class 12 Philosophy Questions Answers | নিরপেক্ষ ন্যায় অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top