সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড়ো প্রশ্ন উওর || WBBSE Class 7 History Question Answer 2023

0

সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড়ো প্রশ্ন উওর || WBBSE Class 7 History Question Answer 2023
সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড়ো প্রশ্ন উওর


আজের এই পোস্টের মাধ্যমে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় দিল্লি সুলতানি - তুর্কো - আফগান শাসন (WBBSE Class 7 History Question Answer & Notes in Bengali ) থেকে কয়েকটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ 8 Mark  প্রশ্ন উওর ( West Bengal Board Class 7 History Question Answer & Suggestion ) তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো (WBBSE Class vii Question Answer & Suggestion 2022 )। আর আমরা প্রতিদিন তোমাদের জন্য নোটস শেয়ার করে যাবো। তাই তোমরা আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিদিন ভিজিট করতে থাকো।।


1- সুলতান রাজিয়া সম্পর্কে যা জানো লেখো।


উত্তর : মধ্যযুগীয় ভারতের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য নারী ছিলেন রাশিয়া সুলতানা। যদিও সেই যুগে কোন নারীকে সিংহাসনে বসতে দেখা যায়নি,কিন্তু তবুও রাজিয়াই একমাত্র যিনি মুঘল সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেছিলেন। ১২১১ খ্রিস্টাব্দে সুলতান কুতুবউদ্দিনের জামাই ইলতুৎমিস দিল্লির সিংহাসনে বসেন। ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে ইলতুৎমিস মারা যান। তাঁর ছেলেরা ছিল অকর্মণ্য। তাই মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর বিদুষী কন্যা রাজিয়াকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারিণী হিসেবে মনোনীত করে যান। কিন্তু দিল্লির অভিজাতবর্গ এবং ওমরাহরা স্ত্রীলোকের প্রভুত্ব স্বীকার অমর্যাদাকর মনে করে ইলতুৎমিসের ছেলে রুকনউদ্দিন ফিরোজকে সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু অপদার্থতা ও অযোগ্যতার কারণে চারদিকে বিদ্রোহ দেখা দিলে ওমরাহরা বাধ্য হয়ে রাজিয়াকে সিংহাসনে বসান ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে। রাজিয়া ছিলেন এক অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন নারী। তিনি পুরুষের পোশাকে দরবারে আসতেন এবং দক্ষতার সঙ্গে শাসনকাজের সবকিছু সম্পন্ন করতেন। সামরিক প্রতিভাও যথেষ্ট ছিল। তাঁর কর্মদক্ষতা ও অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় পেয়ে আমির-ওমরাহদের একদল তাঁর প্রতি হিংসাপরায়ণ হয়ে উঠলেন। তাঁরা গোপনে রাজিয়ার বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু করলেন। সেইসময়ে ৪০জন তুর্কি ওমরাহ রাজ্যের সর্বময় কর্তা হয়েছিলেন। এদের বলা হত চল্লিশ চক্র। এরা স্ত্রীলোকের শাসন পছন্দ না করে বিদ্রোহী হন। সরহিন্দের শাসনকর্তা ইতিয়ারউদ্দিন আল্‌ল্গুনিয়া রাজিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। আনিয়াকে দমন করতে গিয়ে রাজিয়া পরাজিত ও বন্দি হলেন। এদিকে আমির-ওমরাহরা তাঁর অন্য এক ভাই মুইজউদ্দিন বাহরামকে দিল্লির সিংহাসনে বসালেন। আবার, সুচতুর রাজিয়া সরহিন্দের শাসক আলতুনিয়াকে বিবাহ করে আল্গুনিয়ার সাহায্যে দিল্লির সিংহাসন পুনরুদ্ধার করতে অগ্রসর হলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মুইজউদ্দিনের হাতে উভয়েই পরাস্ত ও নিহত হলেন। 

2- মোহম্মদ বিন তুঘলক কী কী প্রধান কাজ করেছিলেন? 

উঃ মোহম্মদ বিন তুঘলক তার শাসনকালে যেই উল্লেখযোগ্য কাজ গুলি করে যান, সেগুলো হলো- 

(১) বাড়তি কর সংগ্রহ করার জন্য দোয়াব অঞ্চলে রাজস্ব বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সুলতান। অনাবৃষ্টির ফলে সেখানে শস্যের ক্ষতি হয়েছিল। প্রজারা কর দিতে পারেননি। তারা বিদ্রোহ করে। সুলতান বাড়তি কর মকুব করেন। নষ্ট হওয়া ফসলের জন্য ক্ষতিপুরণ দেন। কৃষকদের সাহায্য করার জন্য সুলতান তকাতি ঋণ দান প্রকল্প চালু করেছিলেন। (২) দিল্লির অধিবাসীদের বিরোধিতা এবং মোঙ্গল আক্রমণের ভয় থেকে রক্ষা পেতে ও দাক্ষিণাত্যকে শাসন করতে দেবগিরিতে দ্বিতীয় রাজধানী তৈরি করেন। শহরের নতুন নাম হয় দৌলতাবাদ। সুলতানের হুকুমে দিল্লি থেকে দৌলতাবাদে যেতে গিয়ে পথে অনেক মানুষ প্রাণ হারান। কয়েকবছর পরে সুলতান আবার রাজধানী দৌলতাবাদ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যান দিল্লিতে। (৩) মুল্যবান ধাতু সোনা ও রুপোর ঘাটতি মেটাতে তামার মুদ্রা চালু করেন সুলতান। ওই মুদ্রা যাতে জাল না করা যায় তার জন্য আগে থেকে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। অনেকে তামার মুদ্রা জাল করে। বাজার থেকে জাল মুদ্রা তুলে নিতে রাজকোষ থেকে অনেক সোনা ও রুপোর মুদ্রা ব্যয় করতে বাধ্য হন সুলতান। 

(৪) সুলতান কয়েকজন অনভিজাত, সাধারণ ব্যক্তিকে প্রশাসনে উঁচু পদে বসিয়েছিলেন। 


3- মোহম্মদ বিন তুঘলকের পরিকল্পনাগুলি আলোচনা করো। 


উত্তরঃ সুলতানি আমলে সবচেয়ে বিতর্কিত সুলতান ছিলেন গিয়াসুদ্দিন তুঘলকের জ্যেষ্ঠ পুত্র জুনা খাঁ। তিনি মোহম্মদ বিন তুঘলক উপাধি গ্রহণ করে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। মোহম্মদ বিন তুঘলকের ২৬ বছরের রাজত্বকালে তাঁর বিভিন্ন পরিকল্পনাগুলি একদিকে যেমন সমাদৃত হয়েছে, অপরদিকে তেমনি নিন্দিত হয়েছে। তাঁর সমকালীন লেখকেরা তাঁকে বিভিন্ন কারণে দোষ দিলেও, আধুনিক ঐতিহাসিকেরা তাঁর পরিকল্পনার যৌক্তিকতা স্বীকার করতে পারেননি। যদিও তাঁর পরিকল্পনাগুলিকে কার্যকর করার পন্থা ও সময়কাল সঠিক ছিল না। তাঁর পরিকল্পনাগুলি নিম্নলিখিত ছিল- 

রাজধানী পরিবর্তনঃ তুঘলকের সবচেয়ে বিতর্কিত কাজ ছিল দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর। বারনী বলেছেন যে, দেবগিরিতে সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ছিল এবং এখান থেকে দাক্ষিণাত্যে শাসন নিয়ন্ত্রণ সহজ ছিল। এ ছাড়া মোঙ্গল আক্রমণের সম্ভাবনা কম থাকায় এবং দিল্লিবাসীদের সঙ্গে সুলতানের সম্পর্ক ভালো না থাকায় তিনি রাজধানী দেবগিরিতে (দৌলতাবাদ) স্থানান্তরিত করেছিলেন। তিনি কেবল রাজকর্মচারীদেরই সেখানে নিয়ে যাননি, দিল্লির সব অধিবাসীদেরও নিয়েছিলেন। ফলে ওই অঞ্চলে পানীয় জল, বাসস্থান ও কৃষিকার্যের অভাব দেখা দেয়। ১৩৩১ খ্রিস্টাব্দে আবার তিনি দিল্লিতে রাজধানী স্থাপন করেন। ঐতিহাসিক নিজামির মতে, সুলতান একটি শক্তিশালী দ্বিতীয় শাসনকেন্দ্র স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। হাবিবের মতে, দক্ষিণের হিন্দুদের একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী সৃষ্টির জন্য তিনি দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। সুলতানের এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়, যদিও ব্যর্থতার কারণ অযৌক্তিক পরিকল্পনা নয়, এর কারণ হল পদ্ধতি ও প্রয়োগের অভাব।

নতুন মুদ্রাঃ মোহম্মদ বিন তুঘলকের আর একটি বিতর্কিত পরিকল্পনা ছিল নিদর্শক মুদ্রা প্রচলন। বারনির মতে নিদর্শক মুদ্রার ধাতু ছিল তামা। কিন্তু ফেরিস্তার মতে, ধাতু ছিল ব্রোঞ্জ। সুলতান নিদর্শক মুদ্রা প্রবর্তন করে রূপা-মুদ্রার সম মানে তা গ্রহণ করতে বলেন। বারনির মতে, অর্থনৈতিক সংকটের জন্য সুলতান নিদর্শক মুদ্রা প্রবর্তন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর অভিমতকে আধুনিক ঐতিহাসিকেরা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন না। তার কারণ, পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হলে সুলতান প্রতিটি নিদর্শক মুদ্রার বিনিময়ে সোনা বা রুপা দিয়েছিলেন। আধুনিক ঐতিহাসিকদের মতে, ওই সময় সমগ্র বিশ্বজুড়ে রুপার যে ঘাটতি দেখা দেয় তার ফলে সোনা ও রুপার বিনিময়ে হারে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সোনা ও রুপার বিনিময় হার বজায় • রাখা ও রুপার ঘাটতি পুরণের জন্য 'নিদর্শক মুদ্রা' প্রবর্তিত হয়েছিল। নিদর্শক মুদ্রা প্রবর্তনের ফলে আর্থিক বিপর্যয় দেখা দেয়। বিভিন্ন বিদেশিয় মুদ্রাগুলি সংগ্রহ করতে না চাওয়ায় বৈদেশিক ব্যাবসাবাণিজ্যে জটিলতার সৃষ্টি হয়।

দোয়াবের কর বৃদ্ধিঃ- মোহম্মদ বিন তুঘলক সিংহাসনে আরোহণ করেই গঙ্গা-যমুনার দোয়াব অঞ্চলে কৃষকদের করভার বৃদ্ধি করেন। কিন্তু সুলতানের কর্মচারীদের অত্যাচারের ফলে ওই অঞ্চলে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এর ফলে সুলতান প্রজাদের কৃষিঋণ দেন। বিভিন্ন ব্যবস্থার মাধ্যমে জলসেচের ব্যবস্থা করেন ও কর হ্রাস করার আদেশ দেন। (ঘ) আলাউদ্দিন খলজির অর্থনৈতিক সংস্কারগুলির পরিচয় দাও।

4- আলাউদ্দিন খলজির অর্থনৈতিক সংস্কারগুলির পরিচয় দাও। 

উওর : আলাউদ্দিন খলজি ছিলেন দিল্লির সুলতানির সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট। কেবল তাঁর সামরিক অভিযানের জন্যই নয়, কয়েকটি সুপরিকল্পিত ও সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে তিনি নিজেকে স্মরণীয় করে রেখেছেন। 

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণঃ- 

ঐতিহাসিক বারনি তাঁর 'তারিখ-ই-ফিরোজশাহি' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, বিশাল সেনাবাহিনী প্রতিপালনের উদ্দেশ্যেই আলাউদ্দিন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেঁধে দেন। এই সেনাবাহিনীর বেতন মেটাবার কারণে রাজকোষে প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হয়। এজন্য তিনি কর দেওয়ার ব্যবস্থা করেন এবং বাজারে সমস্ত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেঁধে দেন। সমস্ত হিন্দু ও মুসলমান বণিকদের পঞ্জীভূত হতে হত এবং তাদের পণ্যসম্ভার বদারুণ দরজার আদল নামে খোলা জায়গায় বিক্রির জন্য আনতে হত। ধনী ও সম্ভ্রান্ত মুলতানি ব্যবসায়ীদের রাজকোষ ভিতরে সরাই থেকে অর্থ অগ্রিম দেওয়া হত। যাতে তারা প্রচুর পরিমাণে দ্রব্য সামগ্রী কিনতে পারেন এবং বাজারে আনতে পারেন। হার পরিদর্শন ও তদারকির জন্য 'দেওয়ান-ই-রিয়াসৎ' ও 'সাহানা-ই-মাণ্ডি' নামে দুজন কর্মচারী নিযুক্ত হন। তারা নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতেন। নিজের প্রতিও আলাউদ্দিনের যথেষ্ট অনুরাগ ছিল। কুতুব মসজিদের কাছে তিনি একটি খুব সুন্দর প্রবেশদ্বার নির্মাণ করিয়েছিলেন। এটি 'আলাই দরওয়াজা' নামে পরিচিত। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, বারনি তাঁর পরবর্তী গ্রন্থ 'ফতেপা-ই-জাহান্দরি'তে উল্লেখ করেছেন যে, জনসাধারণের ভাল কামনাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। কবি আমির খসরু তাঁর 'খাজা-ইন-উলফতু’-তে মন্তব্য করেছেন যে, জনসাধারণের কল্যাণেই সম্রাটের উদ্দেশ্য ছিল। হাবিব, নিজামি ও ড. ইরফান হাবিব উল্লেখ করেছেন যে, কোথাও আলাউদ্দিন খলজি বলেননি যে, সেনাবাহিনীর সুবিধার জন্যই তিনি জিনিসপত্রের দাম বেঁধে দেন। আলাউদ্দিন খলজির সঙ্গে হামিদউদ্দিনের যে কথোপকথন হয়েছিল তাতে দেখা যায় যে, আলাউদ্দিন জনসাধারণের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। ঐতিহাসিক লেনপুলের মতে, মূল্য নিয়ন্ত্রণের ফলে সাধারণ জনগণ বিশেষভাবে উপকৃত হয়। ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়ান বোনাপার্টের মতো আলাউদ্দিন বিশ্বাস করতেন যে, রাষ্ট্রের সাফল্য নির্ভর করে সমস্ত শ্রেণির জনগণকে স্বল্পমূল্যে খাদ্য সরবরাহের মাধ্যমে।

কৃষি ও সরকারের যোগাযোগ স্থাপনঃ- আলাউদ্দিনই প্রথম সুলতান যিনি কৃষকদের সঙ্গে সরকারের প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপন করেন এবং কৃষকদের ঠিক কী পরিমাণ অর্থ দেয় তাও স্থির করেন। তা ছাড়া স্থানীয় প্রধানেরা অর্থাৎ মুরদম, খুৎ, চৌধুরি ইত্যাদিরা কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি সরকারের প্রত্যক্ষ সম্বন্ধস্থাপন করেন। ইকতা' বলতে মোটামুটি জায়গিরকে বোঝানো হত। যারা কর আদায় করতেন অর্থাৎ 'আমিন', 'মুকদ্দম’, ‘খু’ইত্যাদির ওপর কঠোর দৃষ্টি রাখা হয়েছিল যাতে তাঁরা ক্ষমতার অপব্যবহার না করতে পারেন। আলাউদ্দিনের ব্যবস্থার ফলে রাজস্ব বৃদ্ধি পায়, রাজস্ব আদায়কারীদের অবস্থান অবনতি হয় ও কৃষকরাও করভারে জর্জরিত হয়। সমসাময়িক কবি আমির খসরু কৃষকদের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে বলেছেন, “রাজমুকুটের প্রতিটি মুক্তা দরিদ্র কৃষকদের অশ্রুসিক্ত চক্ষু থেকে ঝরিত জমাট রক্তবিন্দু।" 


5- দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যের পতনের কারণসমূহ উল্লেখ করো।


উত্তর : দিল্লির সুলতানি শাসনের পতন অথবা অবসানের পেছনে নির্দিষ্ট কোন একটি কারণ লুকিয়ে ছিল না। দিল্লির সুলতানি সাম্রাজের পতনের পেছনে বিভিন্ন কারণ লুকিয়ে ছিল। যেমন-  

(১) দিল্লি সুলতানির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কুতুবউদ্দিন আইবক। তাঁর পরবর্তী সুলতানি শাসকগণ ছিলেন প্রত্যেকেই সমরকুশলী। প্রকৃতপক্ষে সুলতানি শাসন ছিল সামরিক শক্তির উপর নির্ভরশীল। এর পেছনে তেমন জনসমর্থন ছিল না। শুধু সামরিক শক্তির উপর ভর করে কোনো সাম্রাজ্য বেশিদিন টিকে থাকা সম্ভব নয়। 

(২) সুলতানি সাম্রাজ্যের বিশালতা এই সাম্রাজ্যের পতনের এক সুবৃহৎ কারণ। ভৌগোলিক দূরত্ব ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার জন্য একজন শাসকের পক্ষে বিরাট সাম্রাজ্য ঠিক ঠিক পরিচালনা করা সম্ভব ছিল না। 

(৩) দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্য ছিল সুলতানের ব্যক্তিগত দক্ষতার উপর নির্ভরশীল। ফিরোজ তুঘলকের পর দুর্বল সুলতানরা তাই সুলতানি সাম্রাজ্যকে ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। 

(৪) ফিরোজ তুঘলক অভিজাত-পদ বংশানুক্রমিক করে দেওয়ায় প্রশাসনে অকর্মণ্য ও অযোগ্য ব্যক্তির আধিক্য ঘটে। যা সুলতানি সাম্রাজ্যকে নড়বড়ে করে দেয়। 

(৫) সুলতানি সাম্রাজ্যের ত্রুটিপূর্ণ রাজস্ব নীতি রাজকোশ ও জনসাধারণের উপরে বোঝার সৃষ্টি করেছিল। ফলে রাষ্ট্র কাঠামো ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়েছিল। 

(৬) সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন, ফিরোজ শাহ তুঘলক হিন্দুদের উপর নানা বৈষম্যমূলক কর চাপিয়ে হিন্দুদের বিরাগভাজন হন। হিন্দুদের অসহযোগিতা সাম্রাজ্যের শক্তিহানি ঘটায়। 

(৭) মোহম্মদ-বিন-তুঘলকের বিভিন্ন ব্যর্থ পরিকল্পনা সুলতানি সাম্রাজ্যকে দুর্বল করে দিয়েছিল। তা ছাড়া তিনি মুসলমান সম্প্রদায়কে তুষ্ট করার জন্য বিভিন্ন সুযোগসুবিধা দান করেন। ফলে হিন্দুরা বেশ অসন্তুষ্ট হয়। 

(৮) ফিরোজ তুঘলকের ধর্মীয় অনুদান নীতি সাম্রাজ্যের দুর্বলতার কারণ। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার দিল্লি মূলতানি পতনের জন্য ফিরোজ তুঘলকের নীতি ও শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলিকে দায়ী করেছেন। 

(৯) অভ্যন্তরীণ দিক থেকে যখন সুলতানি সাম্রাজ্য দুর্বল তখন তৈমুরলঙের দিল্লি আক্রমণে দেশের অবস্থা করুণ হতে শুরু করে। তার প্রায় একশো বছর পরে বাবরের দিল্লি আক্রমণ সুলতানি সাম্রাজ্যের চিরতরে অবসান ঘটায়। দিল্লি সুলতানির শেষ সুলতান ছিলেন ইব্রাহিম লোদি। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে ইব্রাহিম লোদি পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবরের কাছে পরাজিত হন। শুরু হয় মোগল সাম্রাজ্য।


Tags : 

সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর | চতুর্থ অধ্যায় দিল্লি সুলতানি - তুর্কো - আফগান শাসন অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর | ক্লাস 7 ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর  | wbbse class 7 history history question answer chapter 3 | wb class 7 history question answer 2022 | history notes for wbcs | wbcs history notes | history notes for ssc | history question answer & notes 2023

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top