উদারনীতিবাদ বলতে কি বোঝায়? উদারনীতিবাদের বৈশিষ্ট্য |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায় বা উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায় কয়েকটি প্রধান রাজনৈতিক মতাদর্শের (WBCHE Class 12 Political Science Question Answer Chapter 1 In Bengali ) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় "উদারনীতিবাদ কাকে বলে এবং উদারনীতিবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর" এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। এবং পরবর্তীতে আমরা উচ্চ মাধ্যমিকের রাষ্ট্রবিজ্ঞান সহ আরও অন্যান্য বিষয়ের সমস্ত নোটস + অনলাইন মকটেস্ট তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।।
উদারনীতিবাদ কাকে বলে? উদারনীতিবাদের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো
অথবা, উদারনীতিবাদ বলতে কি বোঝায়? উদারনীতিবাদের বৈশিষ্ট্য লেখ
অথবা
উদারনীতিবাদ কি উদারনীতিবাদের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
ভূমিকাঃ উদারনীতিবাদ হল একটি প্রাচীন রাজনৈতিক মতবাদ, যে মতবাদ রাষ্ট্রের গুরুত্বের চেয়ে ব্যক্তির গুরুত্বকে অধিক করে মনে করে। এই মতবাদ অনুযায়ী ব্যক্তির জন্য রাষ্ট্র! রাষ্ট্রের জন্য ব্যক্তি নয়। অর্থাৎ উদারনীতিবাদ এমন একটি রাজনৈতিক মতবাদ যেখানে ব্যক্তির অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়, বাক স্বাধীনতা ইত্যাদির ক্ষেত্রে সর্বাধিক স্বাধীনতা প্রদান করার পক্ষপাতী। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা অনুযায়ী, উদারনীতিবাদ হল এমন এক ধারণা যা সরকারি কাজের নীতি ও পদ্ধতিরূপে, সমাজ গঠনের নীতিরূপে এবং ব্যক্তি ও সমাজের এক জীবনাদর্শরূপে ‘স্বাধীনতা'-কে প্রতিষ্ঠিত করে। উদারনীতিবাদে ব্যক্তিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় । উদারনীতিবাদ মনে করে আগে ব্যক্তি, পরে রাষ্ট্র। এই তত্ত্ব অনুসারে ব্যক্তির জন্য রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের জন্য ব্যক্তি নয় (Liberal ism is an idea committed to freedom as a method and policy in government, as an organising principle in society, and a way of life for the individual and the community)।
উদারনীতিবাদের কয়টি প্রধান বৈশিষ্ট্য
উদারনীতিবাদের মোট তিনটি ধারা রয়েছে যথা। সনাতন অথবা সাবেকি উদারনীতিবাদ, আধুনিক বা সংশোধনমূলক উদারনীতিবাদ এবং নয়া উদারনীতিবাদ। এই তিনটি উদারনীতিবাদের মধ্যে আমরা উদারনীতিবাদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট লক্ষ্য করতে পারি। সেগুলি হল -
ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদঃ-
সাবেকি উদারনীতিবাদ অনুসারে রাষ্ট্র হল একটি শক্তিশালী স্থায়ী প্রতিষ্ঠান যার কাজ হল ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা এবং সম্পত্তির অধিকারকে রক্ষা করা। এগুলো হলো জনগণের অহস্তান্তরযোগ অধিকার। কিন্তু রাষ্ট্র যদি তার কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয় তাহলে জনগণ রাষ্ট্রের বিরোধিতা করতে পারবে এবং তার বিলোপ সাধন করতে পারবে। কিন্তু তার সাধন করা মানে শুধুমাত্র সরকারের পরিবর্তন করাকে বোঝায়।
হিতবাদ বা উপযোগিতাবাদঃ-
সাবেকি উদারনীতিবাদের এইদিক অনুসারে রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য হলো সর্বাধিক ব্যক্তির সর্বাধিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ নিশ্চিত করা। বেন্থাম মনে করতেন যে নিজের সর্বাধিক পরিমাণ সুখ কিভাবে আসবে তার শ্রেষ্ঠ বিচারক হলো ব্যক্তি নিজেই, রাষ্ট্র নয়। তাই ব্যক্তিগত কর্ম ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করা চলে না।
রাজনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠাঃ-
উদারনীতিবাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা। তাদের মতে ক্রমবর্ধমান জনগণ জনগণের পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়। তাই তাদের গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ করা উচিত। এবং গণতান্ত্রিক উপায়ে সবার মধ্যে রাজনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করে সবার স্বার্থ রক্ষা করা উচিত।
রাজনৈতিক এবং পৌর অধিকারের স্বীকৃতিঃ
উদারনীতিবাদ জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক এবং পৌর অধিকার দানের কথা বলে। এই অধিকারের মাধ্যমে জনগণ বিভিন্ন সভা-সমিতিতে যোগ,স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার, সরকারী কাজের সমালোচনা করার অধিকার,জীবনের অধিকার,ধর্মের অধিকার, শিক্ষার অধিকার?সামাজিক সাম্যের অধিকার,নির্বাচন করা এবং নির্বাচিত হওয়ার অধিকার ইত্যাদির স্বপক্ষে গুরুত্ব দেয়।
একদলীয় ব্যবস্থার বিরোধিতাঃ-
উদারনীতিবাদ রাষ্ট্রে বহু রাজনৈতিক দলের উপস্থিতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। বহু রাজনৈতিক দল উপস্থিত থাকলে জনগণের রাজনৈতিক জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। ফলে রাষ্ট্রে সঠিক গণতন্ত্রের স্বরূপ বজায় থাকে। এবং ক্ষমতায় থাকা দলও জনগণের স্বার্থ কাজ করতে বাধ্য থাকে।
গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকারের পরিবর্তনঃ-
আধুনিক উদারনীতিবাদ অনুসারে গণতান্ত্রিক এবং সঠিক উপায়ে সরকার পরিবর্তনের কথা বলা হয়। এই মতবাদ অনুসারে সাংবিধানিক এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে সরকারের পরিবর্তন করা উচিত। যেহেতু জনগণের হাতেই ক্ষমতা থাকে,সুতরাং জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সরকারের পরিবর্তন করবে।
সবার ভোটাধিকার প্রদানঃ-
আধুনিক উদারনীতিবাদ প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার প্রদান করার পক্ষপাতি। উদারনীতিবাদ অনুসারে যেহেতু গণতন্ত্র জনগণের শাসন, সেকারণেই সার্বভৌমিকতার বাস্তবায়নের জন্য জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে সমানভাবে ভোটদানের অধিকার দেওয়া আবশ্যক।
নিরপক্ষ আদালতের উপস্থিতিঃ-
সংশোধন মূলক উদারনীতিবাদীরা একটি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নিরপেক্ষ আদালতের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করার পক্ষপাতী। এরুপ আদালত একদিকে যেমন সংবিধানের রক্ষাকর্তা হিসেবে কাজ করে, অন্যদিকে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারসমূহ সংরক্ষণ করার কাজ করে।
ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারঃ-
সংশোধন মূলক উদারনীতিবাদীরা ব্যক্তির ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন। উদারনীতিবাদীরা মনে করেন, প্রতিটি ব্যক্তির যদি সম্পত্তির অধিকার না থাকে তাহলে তারা কোনো ধরনের কাজকর্মে উৎসাহ পাবে না। ফলে দেশের সামগ্রিক উন্নতি দেওয়া হবে।
জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রনীতিঃ-
আধুনিক বা সংশোধনমূলক উদারনৈতিক গণতন্ত্রের জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করার কথা বলা হয়। সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে গতিশীল ব্যবস্থা, শিল্প-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ, ক্ষেত্রবিশেষে জাতীয়করণকরণের কথা বলা হয়।।
উপসংহার, উদারনীতিবাদের তিনটি ধারা অর্থাৎ সাবেকি,আধুনিক এবং সমকালীন অথবা নয়া উদারনীতিবাদ এর উপরিক্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছাড়াও আরও একাধিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।। কিন্তু সমালোচকরা উদারনীতিবাদকে রক্ষণশীল মতবাদ, বুর্জোয়া শ্রেণির রাষ্ট্রদর্শন এবং চরম ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী ও ভোগবাদী মৌলবাদের দর্শনরূপে আখ্যা দিয়েছেন। তবে এই মতবাদের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল যে—অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সংগতি রেখে এটি বিবর্তিত হয়েছে। তা ছাড়া ভবিষ্যৎ সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনের গতিপ্রকৃতির একটি প্রতিচ্ছবিও এই মতবাদের মধ্যে লক্ষ করা যায়। সেজন্য আজকের বিশ্বায়নের দুনিয়ায় উদারনীতিবাদের গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে একেবারে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।
আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিবর্তন এবং কয়েকটি মৌলিক ধারণা অধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসাবে যে 'জাতীয় স্বার্থ কাকে বলে? জাতীয় স্বার্থ কত প্রকার ও কী কী বা জাতীয় স্বার্থের শ্রেণীবিভাগ করো।' উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে তা তোমাদের কাজে লাগবে।।
Tags :