আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে গেটেল রাষ্ট্রের কোন্ বৈশিষ্ট্যটিকে চিহ্নিত করেছেন? পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা কী রাষ্ট্র? তোমার বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করো।
উওর : আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে গ্রেটেল রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতা বৈশিষ্ট্যটিকে চিহ্নিত করেছেন।
• পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা রাষ্ট্র নয়। এর স্বপক্ষে আমার যুক্তি হলো -
• অধ্যাপক গার্নারের সংজ্ঞা অনুযায়ী একটি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তার জনসমষ্টি বা জনগণ, নির্দিষ্ট ভূখন্ড একটি সুগঠিত সরকার এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সার্বভৌমিকতা থাকা প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরার ক্ষেত্রে এই চারটি বৈশিষ্ট্য আছে কিনা তা আলোচনা করলেই আমরা এর সঠিক যুক্তি দেখতে পাই। যেমন -
• জনসমষ্টিঃ-
রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে জনসমষ্টি বা জনগণ প্রথম এবং প্রধান উপাদান। কারণ জনগণকে ছাড়া কখনোই কোনো রাষ্ট্র গড়ে উঠতে পারে না। যদি আমরা পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরার ক্ষেত্রে দেখি তাহলে পশ্চিমবঙ্গে এবং ত্রিপুরার (2011 সালের জনগণনা অনুযায়ী) জনসংখ্যা হলো - 91, 347, 736 এবং 3, 671,032। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরাকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে ভাবতে গেলে রাষ্ট্রের যে প্রথম উপাদানটি প্রয়োজন, তা পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা উভয়ের ক্ষেত্রেই রয়েছে।
• নির্দিষ্ট ভূখন্ডঃ-
রাষ্ট্র গঠনের দ্বিতীয় উপাদানটি হলো নির্দিষ্ট ভূখন্ড। পশ্চিমবঙ্গের এবং ত্রিপুরার ক্ষেত্রে তাদের নির্দিষ্ট ভূখন্ড রয়েছে। রাষ্ট্রে যে মোট জনসংখ্যা বাস করে সেই রাষ্ট্রের জনগণের বসবাসের জন্য একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ড প্রয়োজন। জনগণের বসবাস ছাড়াও বিভিন্ন কারণে রাষ্ট্রের ভূখণ্ড থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গের এবং ত্রিপুরা উভয়ের ক্ষেত্রেই আমরা রাষ্ট্রগঠনের দ্বিতীয় উপাদানটি লক্ষ্য করতে পারি। পশ্চিমবঙ্গের মোট আয়তন হল 88,752 বর্গ কিলোমিটার এবং ত্রিপুরার ক্ষেত্রে তার আয়তন হল 10,491.69 বর্গ কিলোমিটার।
• সরকারঃ-
রাষ্ট্র রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে তৃতীয় প্রয়োজনীয় উপাদান টি হল রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি সরকারের অস্তিত্ব থাকা। রাষ্ট্রের বিমুর্ত ধারণাকে বাস্তবায়িত করা হয় সরকারের মাধ্যমে। সরকারকে রাষ্ট্রের মস্তিষ্ক বলা হয়। কারন কার্য ক্ষেত্রে রাষ্ট্র বলতে সরকারকে বোঝায়।। পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরার সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে জনগণের নির্বাচিত সরকারের অস্তিত্ব রয়েছে। সুতরাং রাষ্ট্রগঠনের তৃতীয় বৈশিষ্ট্যটিও পশ্চিমবঙ্গে এবং ত্রিপুরায় রয়েছে।
• সার্বভৌমিকতার অনুপস্থিতিঃ-
উপরোক্ত তিনটি উপাদানের অস্তিত্ব থাকার ফলে আমরা পশ্চিমবঙ্গে এবং ত্রিপুরাকে স্বাভাবিকভাবে রাষ্ট্র হিসেবে ভাবতে পারি। কিন্তু রাষ্ট্র গঠনের যে উপাদানটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক সার্বভৌমিকতা। এবং এই দুই প্রকার সার্বভৌমিকতা পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা উভয়ের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় না। অধ্যাপক গেটেল সার্বভৌমিকতাকে আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি বলে বর্নণা করেছেন। কারণ সার্বভৌমিকতার হলো রাষ্ট্রগঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। জনগণ, নির্দিষ্ট ভূখন্ড, একটি সুগঠিত সরকার থাকা সত্ত্বেও যদি কোনো সংগঠনের সার্বভৌম ক্ষমতা না থাকে তাহলে তাকে রাষ্ট্র বলে অভিহিত করা যায় না।। পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরার ক্ষেত্রে উপযুক্ত তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও এই দুটি রাজ্যের সার্বভৌম ক্ষমতা নেই। পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরাকে কেন্দ্রীয় সরকারের যে-কোন নির্দেশ এবং অধ্যাদেশ প্রভৃতি মেনে চলতে হয়।। সুতরাং এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে এবং ত্রিপুরার সার্বভৌম ক্ষমতার অভাব দেখা যায়। সার্বভৌমিকতা না থাকার জন্য পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরাকে রাষ্ট্র বলা যায়না।