ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথা কি ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথার অবসান এর কারণ কি? || WB Class 12 History Question Answer 2023

0


ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথা কি ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথার অবসান এর কারণ কি? || WB Class 12 History Question Answer 2023
WB Class 12 History Question Answer 2023

ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথা কী? 

উওরঃ চীন একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হওয়ায় চীন প্রথমত বিদেশি বণিকদের সঙ্গে কোনো বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী ছিল না। 1516 খ্রিস্টাব্দে রাফায়েল পেরস্ট্রেলা নামে এক পর্তুগিজ চীনে পৌঁছান এবং সেখানে বাণিজ্য করে প্রচুর মুনাফা লাভ করেন। এরপর ইউরোপের অন্যান্য বণিক সম্প্রদায় চীনে গিয়ে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করে। কিন্তু চীন তাদের সঙ্গে বাণিজ্য করার বিষয়ে আগ্রহী ছিল না। চীন কোনো বন্দর তাদের জন্য খুলে দেয়নি।  প্রথমদিকে চীন বিদেশি বণিকদের জন্য ফরমোজা, নিংগপো, অ্যাময় প্রভৃতি বন্দর বিদেশী বণিকদের জন্য খুলে দিয়েছিল। কিন্তু সেই সমস্ত বন্দরে বাণিজ্য করে তাদের সেরকম ভাবেও কোন লাভ হতো না। 1637 খ্রিস্টাব্দে ইংরেজরা সর্বপ্রথম ক্যান্টন বন্দরে প্রবেশ করে। কিন্তু সেখানে তাদের উচ্চ শুল্ক দিয়ে বাণিজ্য করতে হতো বলে ব্রিটিশ কোম্পানির সেরকম ভাবে কোনও লাভ হয়নি। এজন্য তারা নিজেদের বাণিজ্য ক্যান্টন থেকে সরিয়ে নিয়ে উত্তর দিকে নিংগপো বন্দরের দিকে সরিয়ে নেয়। কিন্তু চীনা সরকার উত্তর দিকের বন্দরে বিদেশী বণিকদের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। যার ফলে 1757 খ্রিস্টাব্দের পরবর্তীকালে ক্যান্টন ই হয়ে ওঠে বিদেশিদের একমাত্র বাণিজ্যিক বন্দর। এরপর 1759 খ্রিস্টাব্দে এক নির্দেশনায় দ্বারা চীনা সরকার একমাত্র ক্যান্টনকেই বিদেশী বণিকদের বাণিজ্য করার জন্য উন্মুক্ত বলে ঘোষণা করে।। এভাবে 1757 সালের পর ক্যান্টনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তি গুলির যে বাণিজ্য গড়ে উঠেছিল, তাই ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথা নামে পরিচিত।।

ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথা অবসানের কারণ কি ছিল? 

ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথার অবসান এর বিভিন্ন কারণ ছিল তার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো -

ব্যবসা বন্ধের হুমকিঃ- 

প্রথম থেকেই চীন বিদেশী বণিকদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী ছিল না। কিন্তু যদিও পরে চিন বিদেশী বণিকদের জন্য ক্যান্টন বন্দর খুলে দিয়েছিল, কিন্তু ক্যান্টন বন্দরে বাণিজ্য করতে হলে বিদেশিদের বিভিন্ন নিয়ম নীতি পালন করতে হতো।  বিদেশীদের উপর বিভিন্ন বাণিজ্যিক শর্ত আরোপ করে এবং বিদেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হতো। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিদেশি বণিকরা চীনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়।

ইংল্যান্ডের দৌত‍্যঃ- 

ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথা অবসানের প্রধান কারণ ছিল ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডই মূলত ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথার অবসান ঘটিয়েছিল। এর কারণ ছিল, ইংল্যান্ড বারবার চীনের কাছ থেকে মর্যাদা সম্পন্ন বাণিজ্যিক সুবিধা আদায়ের জন্য বেশ কয়েকবার চীন সরকারের কাছে দূত প্রেরণ করেছিল। কিন্তু বিভিন্ন বার দূত প্রেরণ করার পরেও কোনো ফলাফল দেখা যায়নি। শান্তিপূর্ণভাবে মর্যাদাসম্পন্ন বাণিজ্যিক অধিকার না পাওয়ায় চীন বলপ্রয়োগের নীতি অনুসরণ করেছিল। 

আফিম ব্যবসাঃ- 

উনবিংশ শতকের শুরু থেকে ব্রিটিশরা ভারত থেকে চোরাপথে চীনে আফিম রপ্তানির কাজ শুরু করে। যার ফলে ক্যান্টন বাণিজ্যের চরিত্র বদলাতে শুরু করে। আফিমের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে চীনের সঙ্গে ব্রিটেনের বিরোধ বাধে এবং 1839 খ্রিষ্টাব্দে প্রথম আফিমের যুদ্ধ হয়। প্রথম ইঙ্গ চীন যুদ্ধে  ব্রিটিশরা চীনকে বাজেভাবে পরাজিত করে। যার ফলে চীন বাধ্য হয়ে ইংল্যান্ডের সঙ্গে 1842 খ্রিষ্টাব্দে প্রথম নানকিং এর চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। নানকিং চুক্তির ফলে চীন সরকার বাধ্য হয়ে বিদেশী বণিকদের জন্য ক্যান্টন সহ আরো পাঁচটি বন্ধ খুলে দিতে বাধ্য হয় এবং এভাবেই ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথার অবসান ঘটে

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top