দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর এবং সাজেশন 2023 |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ঃ ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি নিয়মিত এবং অনিয়মিত সাম্রাজ্যের (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'অবশিল্পায়ন কাকে বলে? অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো' প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। আর নিয়মিত ক্লাস 12 সহ অন্যান্য ক্লাসের নোট এবং মকটেস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে থাকো।
অবশিল্পায়ন কাকে বলে? অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো
ভূমিকাঃ যখন কোনো স্থানে খুব দ্রুত শিল্পের অগ্রগতি বা উন্নতি ঘটে তখন তাকে শিল্পায়ন বলে। ঠিক একইভাবে যখন কোনো স্থানে শিল্পের অবনতি ঘটে অথবা শিল্পের অগ্রগতি রোধ হয় তখন তাকে অবশিল্পায়ন বলা হয়। ভারতের ব্রিটিশদের আগমনের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এবং সেইসঙ্গে কোম্পানির কর্মচারীদের বাণিজ্যের অগ্রগতি হলেও ভারতীয় বণিকদের সেরকম ভাবেও বাণিজ্যের কোনো অগ্রগতি ঘটেনি। তার চেয়েও বড় কথা ভারতীয় বণিকদের বাণিজ্য একদমই থেমে গিয়েছিল। এই অবস্থাই ভারতের অবশিল্পায়ন নামে পরিচিত। ব্রিটিশদের আগমনের পর ভারতে অবশিল্পায়নের প্রধান কারণ ছিল -
ভারতীয় পণ্য বিদেশে রপ্তানিতে বাধাঃ-
ভারতে অবশিল্পায়নের প্রধান কারণ ছিল পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ভারতীয় পণ্য রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা। ব্রিটিশদের আগমনের আগে ভারতের সঙ্গে অন্যান্য দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক খুবই মজবুত ছিল। যখন ভারতীয় বস্ত্রশিল্পের জনপ্রিয়তা অনেকটাই বেড়ে যায় তখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কলকারখানায় মন্দা দেখা যায়, শ্রমিক ছাটাই শুরু হয়, তাঁতিরা বেকার হয়ে পড়ে। ফলে ইউরোপের দেশগুলোতে বাণিজ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় বণিকরা নিজেদের দেশের সরকারের কাছে বাণিজ্য সংরক্ষণের দাবি জানায় ফলে সরকার চাপে পড়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট আইনের মাধ্যমে ইংল্যান্ড সহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে ভারতের বস্ত্র আমদানি বন্ধ করে দেয়।
ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবঃ-
ভারতের অবশিল্পায়নের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শিল্প বিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ডে বিভিন্ন কারখানায় অল্প সময়ের মধ্যেই প্রচুর পরিমাণ শিল্পপণ্য উৎপাদন করা হতো। এর ফলে ইংল্যান্ডের বণিকরা কারখানায় উৎপাদিত সেই সমস্ত সস্তা শিল্পপন পৃথিবীর অন্যান্য দেশে রপ্তানি করতে থাকে। অল্প সময়ের মধ্যেই ইংল্যান্ড ভারতের বাজার দখল করে ফেলে। এরফলে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।।
প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাবঃ-
ভারতীয় বস্ত্র শিল্পের প্রধান উপাদান হলো এদেশের অভ্যন্তরীণ কাঁচামাল। কাঁচামালের উপর ভিত্তি করেই ভারতের বস্ত্র শিল্প দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু ব্রিটিশদের আগমনের পর ভারতীয় বণিকরা যথেষ্ট পরিমাণে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারত না। যার ফলে তাদের বাণিজ্য চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোম্পানির কর্মচারীরা এদেশের কৃষকদের অগ্রিম দাদন দিয়ে তাদের নিজেদের হয়ে কাঁচামাল উৎপাদনে বাধ্য করতো এবং অতি অল্প মূল্যে তাদের কাছেই সেই কাঁচামাল বিক্রি করতে হতো। এতে চাষির ক্ষতি হলেও তাদের কিছু করার ছিল না। কোম্পানি এবং কোম্পানির কর্মচারীদের কাছে বিক্রি করা চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ধীরে ধীরে কাঁচামাল উৎপাদনের কাজ থেকে সরে আসে। একই ভাবে ভারতীয় বণিকরাও কাঁচামাল সংগ্রহ করতে না পেরে শিল্প ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ফলে দেখা যায় চরম বেকারত্বের সমস্যা।।
অসম শুল্কনীতিঃ-
ইউরোপের বণিকদের এদেশে এবং অন্যান্য দেশে শিল্প পণ্য রপ্তানি করার ক্ষেত্রে ঠিক যে পরিমাণ শুল্ক দিতে হতো,ভারতীয় বণিকদের তার থেকে দ্বিগুন পরিমান কত শুল্ক দিতে হতো। ভারতীর বণিকদের অনেক বেশি শুল্ক দিতে হতো বলে তাদের লাভের পরিমাণ খুবই কম ছিল। ঠিক একইভাবে ভারতীয় বণিকরা রেলের মাধ্যমে যখন শিল্পপণ্য ও কাঁচামাল একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেত, তখন তাদের ওপর প্রচুর পরিমাণ শুল্ক ধার্য করা হতো। ফলে এত পরিমান শুল্ক দেওয়ার ফলে ভারতীয় বণিকদের হাতে লাভের পরিমাণ খুবই কম আসতো। এছাড়াও ইংল্যান্ডের শিল্প পণ্য ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে ছেয়ে গেলে তারা অভ্যন্তরীণ বাজারে লাভের অংশ খুঁজে পেত না। এছাড়া অত্যধিক রপ্তানি করের ফলে তারা বাইরের দেশেও বাণিজ্যে লাভ করতে পারতো না। মূলত এই সমস্ত কারণে ভারতে অবশিল্পায়ন দেখা দিয়েছিল।।
অবশিল্পায়ন বা দেশীয় শিল্প বাণিজ্য ধ্বংসের ফলাফলঃ-
ভারতীয় শিল্প ও বাণিজ্যের ধ্বংসের ফলাফল ছিল গভীর ও ভয়ানক। যেমন -
কাঁচামাল রপ্তানিঃ-
ভারতীয় শিল্প ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি ভারতের কাঁচামাল ইংল্যান্ডে রপ্তানি হতে শুরু করে। ভারতে উৎপাদিত কাঁচা তুলো, কাঁচা রেশম, নীল, চা, প্রভৃতি কাঁচামাল নিয়মিত ইংল্যান্ডের কারাখানাগুলিতে চলে যেতে থাকে। এর ফলে ভারত শিল্পপ্রধান দেশ থেকে কৃষিপ্রধান দেশে পরিণত হয়।
বেকারত্ব বৃদ্ধিঃ-
শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংসের ফলে দেশে তীব্র বেকার সমস্যা দেখা দেয়। বেকার শিল্পী ও কারিগররা অন্য পেশায় মন দেয় এবং অধিকাংশই কৃষিকার্যে নিযুক্ত হয়। ফলে কৃষির ওপর চাপ বাড়ে। এভাবে দেশে কৃষিজীবী ও ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।
নগরের অবক্ষয়ঃ-
অষ্টাদশ শতকে ঢাকা, মুরশিদাবাদ, সুরাট, মসুলিপট্টম, তাঞ্ঝোর প্রভৃতি ছিল শিল্পসমৃদ্ধ ও ঘনবসতিপূর্ণ নগর। শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংসের ফলে এসব নগর ক্রমে জনবিরল হতে থাকে এবং নগরের অবক্ষয় শুরু হয়।
দারিদ্র্য বৃদ্ধিঃ-
শিল্প বাণিজ্য ধ্বংসের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হলে ভারত একটি দরিদ্র দেশে পরিণত হয়। দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ ও মহামারি ভারতীয় জনজীবনের নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠে। ড. বিপান চন্দ্রের মতে, ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যনীতি ব্রিটিশ শিল্প ও শিল্পপতিদের স্বার্থেই পরিচালিত হয়েছিল। এর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ভারতবাসীকে জীবনধারণের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির জন্য ব্রিটেনের মুখাপেক্ষী করে রাখা এবং ভারত থেকে ব্রিটিশ পণ্যের জন্য কাঁচামাল আহরণ।
আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ঃ ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি নিয়মিত এবং অনিয়মিত সাম্রাজ্যের (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) থেকে 'অবশিল্পায়ন কাকে বলে? অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো' সম্পর্কে যে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।
Tags :
Class 12 history notes | hs history suggestion | wb class 12 history question answer and suggestion 2023 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর |দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি নিয়মিত ও অনিয়মিত সাম্রাজ্য প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 History question answer | wb class xii History question answer | hs History question answer & suggestion 2023