দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর 2023 |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ঃ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'ভারতের শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব এবং শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো বা ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা করো' প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। এবং উচ্চমাধ্যমিক সহ অন্যান্য ক্লাসের নোটস পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে থাকো।।
ভারতের শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব এবং শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো || ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা করো
ভূমিকাঃ- 1757 খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধ এবং 1764 খ্রিস্টাব্দের বক্সারের যুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার ভারতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ব্রিটিশ সরকার অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে ভারতের অভ্যন্তরেই বিভিন্ন শিল্প কারখানা গড়ে তোলে। সেই শিল্প-কারখানায় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রমিক নিয়োগ শুরু হয়। প্রথম দিকে শ্রমিকদের অবস্থার ভালো থাকলেও ধীরে ধীরে শ্রমিকদের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার এবং শোষনের শিকার সেই শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হতে শুরু করে। এবং সেই ক্ষোভের কারণেই তারা বিভিন্ন নেতার নেতৃত্বে শ্রমিক আন্দোলনে শামিল হয়।
ভারতের শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভবঃ-
1757 খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধ এবং 1764 খ্রিস্টাব্দের বক্সারের যুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার ভারতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ব্রিটিশ সরকার অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে ভারতের অভ্যন্তরেই বিভিন্ন শিল্প কারখানা গড়ে তোলে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীদের উদ্যোগে এদেশে লৌহ ইস্পাত, শিল্প,কাগজ শিল্প,চা শিল্প, পাট শিল্প,কয়লা শিল্প,সুতিবস্ত্র শিল্প, সিমেন্ট,কাচ, দেশলাই রাসায়নিক প্রভৃতি শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল এই সমস্ত কলকারখানা গুলিতে কাজ অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজন ছিল বিরাট সংখ্যক শ্রমিকের। সেই চাহিদা মেটানোর জন্যেই ভারতের অত্যন্ত গরীব সাধারন মানুষদের তারা শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করেছিল। মূলত এভাবেই ভারতে শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে।।
ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের কারণঃ-
ভারতে যে কয়েকটি শ্রমিক আন্দোলন হয়েছিল,তার পেছনে নির্দিষ্ট কয়েকটি কারণ ছিল। সেই কারণ গুলির মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো-
• বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কর্মরত ভারতীয় শ্রমিকদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত নিম্নমানের মজুরি দেওয়া হতো।
• ভারতীয় শ্রমিকদের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল। শ্রমিকদের যে মজুরি দেওয়া হতো,তাদের তাদের সংসার চালানো মুশকিল হয়ে যেত।
• দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়া শ্রমিকদের আর্থিক সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছিলো।
• অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের কাজের সময় সীমার তুলনায় ভারতীয় শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা ছিল অনেক বেশি।
• উপরিক্ত কারণ গুলির বিরুদ্ধে তিলক এবং শ্রীমতি অ্যানি বেসান্তের হোমরুল আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলন শ্রমিকদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং এই সমস্ত কারণেই ভারতীয় শ্রমিকরা,শ্রমিক আন্দোলন শুরু করেন।
ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের সূচনাঃ-
উপরোক্ত কারণগুলোর জন্য ভারতের সর্বপ্রথম শ্রমিক আন্দোলনের সূচনা 1917 খ্রিস্টাব্দে। ভারতে সর্বপ্রথম আমেদাবাদের বস্ত্রশিল্পের কাজে নিযুক্ত শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ব্যাপক ধর্মঘট শুরু করে। এছাড়াও এই সময় রেলওয়ে কারখানা, গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেলওয়ে,বোম্বাইয়ের বস্ত্রশিল্প, ডাক বিভাগের শ্রমিকরাও ধর্মঘটে সামিল হয়। এরপর 1919,20 খ্রিষ্টাব্দে বাংলা, বোম্বাই, মাদ্রাসা ছাড়াও আরও একাধিক স্থানে রেল কারখানা, চা বাগান,বস্ত্র শিল্প, চট কারখানা, সিমেন্ট কারখানা,প্রভৃতিতে ব্যাপক ধর্মঘট শুরু হয়।।
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন গঠনঃ-
ভারতের বিভিন্ন স্থানে শুরু হওয়া সেই সমস্ত শ্রমিক আন্দোলন গুলিকে আরও জোরদার করার জন্য ভারতের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় নেতাদের উদ্যোগে বেশ কিছু শ্রমিক সংগঠন গড়ে ওঠে। এর মধ্যে 1918 খ্রিস্টাব্দে বি.পি.ওয়াদিয়ার নেতৃত্রে মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন, জাতীয় কংগ্রেসের উদ্যোগে 1920 খ্রিস্টাব্দে নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস, ভারতীয় কমিউনিস্ট নেতাদের উদ্যোগে গঠিত ওয়ার্কস এন্ড প্রেজেন্ট পার্টি, 1931 খ্রিস্টাব্দের রেড ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস, 1934 খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস সোস্যালিস্ট পার্টি প্রভৃতি শ্রমিক সংগঠন গড়ে ওঠে।।
শ্রমিক আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকাঃ-
১৯২০ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার তাসখন্ডে এবং ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কানপুরে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ভারতীয় কমিউনিস্ট নেতারা ভারতের শ্রমিক আন্দোলন গুলিকে আরো শক্তিশালী করে তোলার এবং শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯২৮ সালে ওয়ার্কস এন্ড প্রেজেন্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। এই পার্টি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তারা শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা নির্ধারণ, তাদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ,ব্যক্তি স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অর্জন, জমিদারি প্রথার বিলোপ সাধন করার আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তারা এই বিষয়ে জনমত গঠনের জন্য, গণবানী, শ্রমিক, সোসালিস্ট, লেবার কিষণ গ্যাজেট ইত্যাদি সংবাদপত্র প্রকাশ করেছিলেন।।
ভারতের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন এবং কমিউনিস্ট পার্টির ওয়ার্কস এন্ড প্রেজেন্ট পার্টির নেতৃত্বে ভারতের শ্রমিক আন্দোলন জোড়ালো হয়ে ওঠে। বোম্বাই, বাংলা, বিহার, মাদ্রাসে রেল কোম্পানিতে, বস্ত্র শিল্পে, চা শিল্পে, পাট শিল্প প্রভৃতি শিল্পে ব্যাপক শ্রমিক আন্দোলন এবং ধর্মঘট শুরু হয়।।
শ্রমিক আন্দোলন দমনঃ-
ব্রিটিশ সরকার ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের তীব্রতা এবং জোড় বুঝতে পারে। সেই কারণে সরকার সমস্ত শ্রমিক আন্দোলন গুলি দমন করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ভারতের শ্রমিক আন্দোলন দমনের জন্য ব্রিটিশ সরকার ভারতের কমিউনিস্ট নেতাদের প্রভাব রোধের চেষ্টা করে। এজন্য তারা ভারতে শিল্পবিরোধ বিল এবং জননিরাপত্তা বিল নামে দুটি শ্রমিক স্বার্থবিরোধী বিল পাস করে। শিল্প বিরোধ বিলের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার ভারতে সমস্ত রকম শ্রমিক আন্দোলন এবং ধর্মঘটকে বেআইনি বলে ঘোষণা করে। এবং জন নিরাপত্তা বিলের মাধ্যমে তারা ভারতে কমিউনিস্টদের প্রভাব রোধ করে। শ্রমিক আন্দোলন থেকে দূরে রাখার জন্য ব্রিটিশ সরকার 33 জন কমিউনিস্ট নেতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রচনা করে। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত সেই মিথ্যে মামলায় কয়েকজন বিদেশি নেতাসহ ভারতের নামকরা কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ আনা হয় এবং তাদের দীর্ঘ মেয়াদী এবং অন্যান্য শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। যার ফলে তারা শ্রমিক আন্দোলন থেকে দূরে সরে যায়। কিন্তু এত কিছুর পরেও ব্রিটিশ সরকার কখনোই ভারতে সম্পূর্ণরূপে শ্রমিক আন্দোলন এবং ধর্মঘটকে দমন করতে পারেনি।।
আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ঃ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023) থেকে 'ভারতের শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব এবং শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো বা ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা করো' সম্পর্কে যে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।
Tags :
Class 12 history notes | hs history suggestion | wb class 12 history question answer and suggestion 2023 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর |উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা | সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান কী ছিল | সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 History question answer | hs History question answer