১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্টের বিভিন্ন শর্তাবলী এবং গুরুত্ব |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ঃ ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি নিয়মিত এবং অনিয়মিত সাম্রাজ্যের ( West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় '১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্টের বিভিন্ন শর্তাবলী এবং গুরুত্ব আলোচনা করো বা 1793 খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্ট বা নিয়ন্ত্রণ আইনের বিভিন্ন শর্তাবলি উল্লেখ করো' প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। আর নিয়মিত ক্লাস 12 সহ অন্যান্য ক্লাসের নোট এবং মকটেস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে থাকো।
১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্টের বিভিন্ন শর্তাবলী এবং গুরুত্ব আলোচনা করো || 1793 খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্ট বা নিয়ন্ত্রণ আইনের বিভিন্ন শর্তাবলি উল্লেখ করো।।
ভূমিকাঃ ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলায় যথেষ্ট প্রভাব বৃদ্ধি পায়। এরপর একে একে বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সমগ্র ভারতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে থাকে এবং নিজেদের অবাধ কাজকর্মের প্রসার ঘটায়। কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড নর্থের আমলে ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এই অবাধ কাজকর্মের ওপর নিয়ন্ত্রন জারি করার উদ্দেশ্যে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে একটি আইন পাশ হয় যা রেগুলেটিং অ্যাক্ট বা নিয়ন্ত্রণ শাসন অথবা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আইন, ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে নামেও পরিচিত।।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আইন অথবা রেগুলেটিং অ্যাক্ট বা নিয়ন্ত্রণ আইনের মাধ্যমে মূলত দুই দিক থেকে ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাজ কর্মের ওপর নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছিল। যথা কোম্পানির পরিচালক সভায় বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ জারি করে এবং কোম্পানির শাসন ব্যবস্থার বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ জারি করে।।
কোম্পানির পরিচালক সভাঃ-
ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাজ কর্মের তদারকি করতো ইংল্যান্ডে অবস্থানকারী কোম্পানির পরিচালক সভা।। রেগুলেটিং অ্যাক্ট এর মাধ্যমে এই পরিচালক সভায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়। যেমন-
প্রথমতঃ পূর্বেকার ৫০০ পাউন্ড শেয়ারের পরিবর্তে বর্তমানে ১০০০ পাউন্ড শেয়ারের মালিকরা বণিক সভায় ভোটদানের অধিকার পাবে।
দ্বিতীয়তঃ পরিচালক সভার সদস্য সংখ্যা হবে ২৪ যারা ৪ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। এই সদস্যদের ১/৪ অংশ (অর্থাৎ ৬ জন) প্রতিবছর পর্যায়ক্রমে পদত্যাগ করবেন, আবার নতুন ৬ জন ৪ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন।
তৃতীয়তঃ সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে পরিচালক সভা ভারত শাসনের জন্য গভর্নর-জেনারেল ও তাঁর কাউন্সিলের সদস্যদের নিযুক্ত করবেন।
চতুর্থতঃ পরিচালক সভা প্রতি ৬ মাস অন্তর ভারত সম্পর্কিত সামরিক, বেসামরিক ও রাজস্ব-বিষয়ক তথ্যাদি সরকারকে জানাতে বাধ্য থাকবে।
কোম্পানির শাসনব্যবস্থাঃ-
রেগুলেটিং অ্যাক্ট-এ ভারত শাসনের বিষয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটানো হয়। যেমন –
প্রথমতঃ বাংলা, বোম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি নিয়ে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কেন্দ্রীয় সরকার গঠিত হয়। বাংলা প্রেসিডেন্সির গভর্নর-ই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান হন। তাঁর পদের নাম হয় গভর্নর জেনারেল। তিনি বোম্বাই এবং মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ওপর কর্তৃত্ব করার অধিকার পান। ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলার প্রথম গভর্নর-জেনারেল নিযুক্ত হন।
দ্বিতীয়তঃ গভর্নর-জেনারেলের কাজে সহায়তা করার জন্য ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি "কাউন্সিল' গঠিত হয়। এই সদস্যদের মেয়াদ ছিল ৫ বছর। ওয়ারেন হেস্টিংসের কাউন্সিলের প্রথম ৪ জন সদস্য ছিলেন ক্লেডারিং, মনসন, বারওয়েল ও ফিলিপ ফ্রান্সিস। কাউন্সিলের পরামর্শক্রমে গভর্নর-জেনারেল কার্য পরিচালনা করতেন ও সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত গ্রহণ করতেন। বাংলার অনুরূপ বোম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে একজন করে গভর্নর ও ৪ সদস্যবিশিষ্ট 'কাউন্সিল' গঠিত হয়।
তৃতীয়তঃ ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে একজন প্রধান বিচারপতি ও ৩ জন সাধারণ বিচারপতি নিয়ে কলকাতায় সুপ্রিমকোর্ট স্থাপিত হয়। এর প্রধান বিচারপতি ছিলেন স্যার এলিজা ইম্পে।
1793 খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্ট অথবা নিয়ন্ত্রণ শাসন আইন এর মূল্যায়ন-
1793 খ্রিস্টাব্দে লর্ড নর্থের আমলে পাস হওয়া রেগুলেটিং অ্যাক্ট বা নিয়ন্ত্রণ আইনের বেশ কিছু ভালো এবং খারাপ উভয় দিকই ছিল। যেমন -
• রেগুলেটিং অ্যাক্ট এর মাধ্যমে ভারতের গভর্নর-জেনারেল এবং তার সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতার কোনো সঠিক বন্টন না থাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের মধ্যে নানা ক্ষেত্রে বিরোধের সৃষ্টি হতো।
• বোম্বাই এবং মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি শহরে বাংলার গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা ঠিক কতটা,তা নির্ধারিত না হওয়ায় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিত।
• কলকাতা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট না হওয়ার কারণে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দেশীয় আদালতের বিচার কার্যে হস্তক্ষেপ করতো।
• গভর্নর জেনারেলের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির কোনো সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক না হওয়ার কারণে উভয়পক্ষের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই দেখা যেত।
• 1793 খ্রিস্টাব্দে রেগুলেটিং অ্যাক্ট অথবা নিয়ন্ত্রণ আইনের কিছু গুরুত্ব-
বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা সত্ত্বেও 1793 খ্রিস্টাব্দে লর্ড নর্থের আমলে পাস হওয়া রেগুলেটিং অ্যাক্ট অথবা নিয়ন্ত্রণ আইন এর কিছু গুরুত্ব ছিল। যেমন -
• সর্বপ্রথম এই মাধ্যমে ভারতে সঠিক শাসনব্যবস্থা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল এবং আইনের মাধ্যমে ভারতে একটি সুনির্দিষ্ট প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
• দ্বিতীয়ত রেগুলেটিং অ্যাক্ট ছিল ভারতের প্রথম লিখিত আইন যা পূর্বে কার এবং স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটানোর উদ্যোগ নিয়েছিল।
• তৃতীয়ত রেগুলেটিং অ্যাক্ট এর মাধ্যমে ভারতে নিয়মতান্ত্রিক শাসনের সূত্রপাত ঘটেছিল এবং ব্রিটিশ সরকার সর্বপ্রথম রেগুলেটিং অ্যাক্টের মাধ্যমেই কোম্পানির কাজ কর্মের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল।।
আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ঃ ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি নিয়মিত এবং অনিয়মিত সাম্রাজ্যের ( West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) থেকে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্টের বিভিন্ন শর্তাবলী এবং গুরুত্ব আলোচনা করো বা 1793 খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্ট বা নিয়ন্ত্রণ আইনের বিভিন্ন শর্তাবলি উল্লেখ করো' সম্পর্কে যে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।
Tags :
Class 12 history notes | hs history suggestion | wb class 12 history question answer and suggestion 2023 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি নিয়মিত ও অনিয়মিত সাম্রাজ্য প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 History question answer | wb class xii History question answer | hs History question answer & suggestion 2023