উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ঃ ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি নিয়মিত এবং অনিয়মিত সাম্রাজ্যের (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'ভারতে রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য ও ফলাফল কী ছিল?' প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। আর নিয়মিত ক্লাস 12 সহ অন্যান্য ক্লাসের নোট এবং মকটেস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে থাকো।
ভারতে রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য ও ফলাফল গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।
ভারতে রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমরা আগেই আলোচনা করেছি। যদি কেউ সেটি না পড়ে থাকো তাহলে নিচের লিংক থেকে সেই নোটটি পেতে পারো। 👇
ক্লিক করো👉- ভারতের রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য
ভূমিকাঃ 1853 খ্রিস্টাব্দের দিকে বাংলার বড়লাট লর্ড ডালহৌসির আমলে ভারতে রেলপথ স্থাপন শুরু হয়। বড়লাট লর্ড ডালহৌসির আমল থেকে শুরু করে ভারতে 1947 পর্যন্ত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রেলপথ স্থাপনের কাজ চলতে থাকে। এই দীর্ঘ সময় ধরে ভারতে ব্রিটিশদের রেলপথ স্থাপনের মূলত দুই ধরনের প্রভাব পড়েছিল। যথা - ভারতে রেলপথ স্থাপনের সদর্থক প্রভাব বা ভালো প্রভাব এবং ভারতে রেলপথ স্থাপনের নঞর্থক প্রভাব অথবা খারাপ প্রভাব। নিম্নে ভারতে রেলপথ স্থাপনের এই দুই দিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। -
ভারতে রেলপথ স্থাপনের সুফল-
1853 খ্রিস্টাব্দে থেকে শুরু করে 1947 খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে যে রেলপথ স্থাপিত হয়েছিল, তার কিছু সুফল দেখা দিয়েছিল। যেমন-
প্রশাসনিক ঐক্য স্থাপনঃ-
ভারতে রেলপথ স্থাপিত হওয়ার ফলে ভারতের প্রেসিডেন্সি শহরগুলি ছাড়াও ভারতের দুর-দুরান্তে অবস্থিত বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের সঙ্গেও যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলে দেশের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে ওঠায় একটি প্রশাসনিক ঐক্য গড়ে ওঠে। ফলে এদেশে ব্রিটিশ শাসনের ভীত আরও মজবুত হয়ে ওঠে।
দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ-
ভারতে রেলপথ স্থাপনের ফলে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে ভারতীয়দের সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। রেলের মাধ্যমে ভারতীয়রা দ্রুত একস্থান থেকে অন্য স্থানে দ্রুত সংবাদ প্রেরণ, বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন, মালপত্র পরিবহন, পারিবারিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ইত্যাদি সম্পর্ক স্থাপন করতে পেরেছিলেন। ফলে রেলপথ স্থাপন ভারতীয়দের মধ্যে ঐক্যস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য বৃদ্ধিঃ-
রেলপথ স্থাপনের ফলে মূলত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য দুইভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
যথা- রেলপথ স্থাপনের ফলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে দ্রুত বন্দরে এবং বন্দর থেকে ইংল্যান্ডের কারখানায় প্রেরণ করতে পারতো। এবং দ্বিতীয়তো ইংল্যান্ড থেকে এদেশে আমদানি করা বিভিন্ন শিল্পদ্রব্য রেলপথের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে সেখানে অভ্যন্তরীণ বাজার দখল করতো। এর ফলে মূলত দুই ভাবেই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়।
ভারতীয় বণিকদের বাণিজ্য বৃদ্ধিঃ-
রেলপথ স্থাপনের ফলে শুধুমাত্র যে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এবং তার কর্মচারীদের বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছিল তা নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতীয় বণিকরাও এর সুবিধা লাভ করেছিলেন। রেলপথ স্থাপনের ফলে ভারতীয় বণিকরা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ এবং তাদের বিভিন্ন শিল্পদ্রব্য বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে সেখানে বিক্রি করার সুযোগ পেয়েছিলেন। এর ফলে ভারতীয় অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেইসঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় ভারতীয় বণিকরা শিল্পদ্রব্য রপ্তানির ক্ষেত্রেও সুবিধা পেয়েছিলেন।
শিল্প স্থাপনঃ-
ভারতের রেলপথ স্থাপনের ফলে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে ইউরোপের বিভিন্ন শিল্পপতিরা ভারতের শিল্প স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠে এর ফলে ভারতে বিভিন্ন হালকা এবং ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প গড়ে। ঠিক একই ভাবে পরবর্তীকালে বিভিন্ন ভারতীয় শিল্পপতিরা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প ছাড়াও অন্যান্য শিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আগ্রহী হয়ে ওঠে।।
কর্মসংস্থানঃ-
ভারতে রেলপথ ব্যবস্থার সূচনা হলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে থাকা ভারতীয় রেলে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। যদিও সেখানে অধিকাংশ উচ্চপদে ইউরোপীয়রা সুযোগ পেত,কিন্তু তবুও নিম্ন পদগুলিতে ভারতীয়রা কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছিল। ফলে বহু ভারতীয় সেখানে কাজ করে সংসার চালানোর সুযোগ পেয়েছিলেন।
ভারতীয় রেলপথ বিস্তারের কুফলঃ-
ভারতের রেলপথ বিস্তারের ক্ষেত্রে যেমন বিভিন্ন সুফল বা সদর্থক দিক দেখা গিয়েছিল, ঠিক একই ভাবে ভারতে রেলপথ বিস্তারের ফলে বিভিন্ন কুফলও দেখা গিয়েছিল। যেমন -
সম্পদের বহির্ণমনঃ-
রেলপথ নির্মাণের জন্য বার্ষিক ৫ শতাংশ হার সুদে গ্যারান্টিপ্রথার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মূলধন বিনিয়োগ করা হয়। এর ফলে সুদ ও মুনাফা হিসেবে প্রচুর পরিমাণ অর্থ প্রতি বছর ইংল্যান্ডে চলে যেতে থাকে।
বর্ণবৈষম্যের বিভিন্ন প্রকাশঃ-
রেলে ভারতীয়দের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হত। মালপত্র পরিবহণে শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে ভারতীয়দের বেশি ভাড়া দিতে হত এবং শ্বেতাঙ্গ যাত্রীরা ভারতীয় যাত্রীদের লাঞ্ছনা করত।
এদেশে ভারীশিল্পের প্রসার না ঘটাঃ-
রেলের ইঞ্জিন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতিগুলি ইংল্যান্ড থেকে ভারতে আমদানি করে এদেশে রেলপথ নির্মিত হয়। ফলে ভারতে রেলপথ নির্মিত হলেও এদেশে ভারীশিল্পের বিশেষ প্রসার ঘটেনি।
কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বৈষম্যঃ-
রেলপথের প্রসারের ফলে সরকারি উচ্চপদে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব পদে শ্বেতাঙ্গদেরই নিযুক্ত করা হত। রেলের উচ্চপদগুলিতে মাত্র ১০ শতাংশ ভারতীয় নিযুক্ত ছিল।
দুর্ভিক্ষের প্রাদুর্ভাবঃ-
রেল যোগাযোগের দ্বারা দুর্ভিক্ষকবলিত অঞ্চলে খাদ্য পাঠানো সহজতর হলেও পরোক্ষভাবে এই রেল ব্যবস্থাই আবার দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির জন্য দায়ী ছিল। কারণ, রেলের মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য দেশের অন্যত্র, এমনকি বন্দরগুলিতে খুব দ্রুত পৌঁছানো যেত। এর ফলে বিদেশে নির্বিচারে রপ্তানির ফলে উৎপাদক অঞ্চলে খাদ্যের ঘাটতি ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।
জলপথ ও সেচের ক্ষতিঃ-
দেশের বিস্তীর্ণ অংশে রেলপথ এবং নদীনালার ওপর রেলের সেতু নির্মিত হলে নদীনালায় পলি সঞ্চিত হয়ে অলস্রোত কমে আসে এবং নদীর পরিবহণযোগ্যতা হ্রাস পায়। ফলে জলপথে পরিবহণ এবং কৃষিজমিতে সেচের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দেশীয় শিল্প বাণিজ্যের সর্বনাশঃ-
রেলের মাধ্যমে ভারতের দূরদুরান্তের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিলাতি পণ্যসামগ্ৰী ছড়িয়ে পড়ে। ফলে দেশীয় পণ্যগুলি অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয় এবং দেশীয় শিল্প-বাণিজ্য মার খায়।
শাসনের ফাঁস কঠিন হওয়াঃ-
সারা ভারত জুড়ে রেলপথের প্রসারের ফলে ভারতবাসীর ওপর ব্রিটিশ শাসকদের বজ্রমুষ্টি আরও শক্ত হয়। দেশের কোনো প্রান্তে কোনো বিদ্রোহ বা বিরোধিতার সামান্য সম্ভাবনা দেখা দিলে রেলপথের মাধ্যমে খুব শীঘ্র সেখানে পৌঁছে গিয়ে সরকারি বাহিনী তা দমন করতে সক্ষম হয়।
সুতরাং পরিশেষে বলা যায়, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ভারতে রেলপথ বিস্তার শুরু করেছিল,তা অনেকাংশেই সফল হয়েছিল। ভারতের রেলপথ স্থাপনে তৎকালীন সময়ের ভারতীয়দের তুলনায় ব্রিটিশরাই বেশি উপকৃত হয়েছিল। কিন্তু একথা অস্বীকার করা যায় না যে, ব্রিটিশদের রেলপথ পরবর্তীকালে ভারতীয়দের যথেষ্ট উপকার করেছিলো।
আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ঃ ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি নিয়মিত এবং অনিয়মিত সাম্রাজ্যের (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) থেকে 'ভারতে রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য ও ফলাফল কী ছিল?' সম্পর্কে যে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।
Tags :
Class 12 history notes | hs history suggestion | wb class 12 history question answer and suggestion 2023 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি নিয়মিত ও অনিয়মিত সাম্রাজ্য প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 History question answer | wb class xii History question answer | hs History question answer & suggestion 2023