বাংলার সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান কী ছিল? || দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর

0

 

উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা | সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান কী ছিল
বাংলার সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান কী ছিল?

আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ঃ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া (West Bengal Board Class ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও তাঁর নেতৃত্বাধীন আজাদ হিন্দ ফৌজের অবদান History Question Answer & Suggestion 2023) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা বা সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান কী ছিল' প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। 

বাংলার সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান কী ছিল? || দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর

ভূমিকাঃ উনিশ শতক থেকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার করতে শুরু করলে বাংলায় নবজাগরণের সূচনা ঘটতে শুরু করে,সেই সময় যেসমস্ত ব্যক্তিরা বাংলার সমাজ সংস্কার করে বাংলার উন্নতি ঘটাতে চেয়েছিলেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রগণ্য ছিলেন রাজা রামমোহন রায় রাজা। সেকারণেই রামমোহন রায়কে ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ, ভারতীয় নবজাগরণের অগ্রদূত, আধুনিক ভারতের জনক, আধুনিক ভারতের ইমাসরাস, ভারত পথিক ছাড়াও আরও নানা সম্মানিও উপাধি দিয়ে তাকে সম্মানিত করা হয়।। রাজা রামমোহন রায় মূলত তিন ভাবে বাংলার সমাজ সংস্কারে নিজের অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। সমাজের কল্যাণের জন্য এবং বিভিন্ন সামাজিক প্রথা দূর করে সমাজকে উন্নত করে তোলার জন্য তিনি ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দ্বিতীয়ত তিনি সতীদাহ প্রথা বন্ধ করে বিধবা নারীদের প্রাণ রক্ষা করেছিলেন এবং তৃতীয়তঃ তিনি নিজ উদ্যোগে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে সমাজের সার্বিক কল্যাণ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা ছিল অনেকটা। যেমন - 

শিক্ষা বিস্তারে সমাজ সংস্কারে রামমোহন রায়ের ভূমিকাঃ- 

রাজা রামমোহন রায় সর্বপ্রথম এটা উপলব্দি করতে পেরেছিলেন যে, ভারতের সার্বিক কল্যাণ তখনই সম্ভব যখন এদেশে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটবে। ব্রিটিশ সরকার ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে উদাসীন হওয়ার কারণে তিনি নিজ উদ্যোগেই সর্বপ্রথম ভারতে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। রাজা রামমোহন রায় তৎকালীন সময়ে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ভয়ঙ্কর কূপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস, ধর্মীয় গোঁড়ামি, জাতিভেদ প্রথা, শিক্ষার অভাব বা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার অভাব বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি সমাজ থেকে আধুনিক শিক্ষার অভাবকে দূর করে  পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে তিনি সমাজকে আধুনিক করে তোলার বিভিন্ন উদ্যোগ নেন। 

অ্যাংলো হিন্দু স্কুলঃ-

তৎকালীন সময়ে খুবই কম পরিমাণ ইংরেজি বিদ্যালয় ছিল। তাই সমাজে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব ছিল প্রচুর। তাই রাজা রামমোহন রায় এই অভাব দূর করতে 1815 খ্রিস্টাব্দে তিনি নিজের উদ্যোগেই কলকাতায় " অ্যাংলো হিন্দু স্কুল নামক " একটি ইংরেজী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলে।

বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠাঃ-

তৎকালীন সময়ে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ভয়ঙ্কর কূপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস, ধর্মীয় গোঁড়ামি, জাতিভেদ প্রথা, শিক্ষার অভাব বা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার অভাব দূর করে সমাজকে আধুনিক করার উদ্দেশ্যে রাজা রামমোহন রায় 1826 খ্রিস্টাব্দে বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই কলেজ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজ থেকে নানা কুসংস্কার দূর করে সমাজে পাশ্চাত্য পদার্থবিদ্যা ও সমাজবিজ্ঞানের ধারণা প্রসার করা।

সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠাঃ-

রাজা রামমোহন রায় হিন্দু ধর্ম এবং বাংলার সমাজ থেকে বিভিন্ন কুপ্রথা,অস্পৃশ্যতা,জাতিভেদ প্রথা,অন্ধবিশ্বাস,ভুল ধর্মীয় রীতি-নীতি এবং সমাজের কিছু ভয়ঙ্কর নিয়মকানুন দূর করে, সমাজকে আধুনিক করে তুলে সমাজের উন্নয়ন করার উদ্দেশ্যে তিনি একজন তরুণ যুবককে নিয়ে 1828 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসভা নামক একটি সভা গড়ে তোলেন। এই সভার প্রধান ছিলেন মূলত রাজা রামমোহন রায় নিজেই। কিন্তু পরবর্তীকালে, অর্থাৎ এর ঠিক 2 বছর পর 1830 খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্ম সভার নাম পরিবর্তিত হয়ে "ব্রাহ্মসমাজ" করা হয়।

সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনঃ- 

রাজা রামমোহন রায় 1828 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসভা বা 1830 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজ গঠন করার পর, তিনি সেই সময়কার সমাজের একটি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কুপ্রথা " সতীদাহ প্রথা " -র বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। যদিও এই সময়ে ব্রাহ্ম সমাজের সকল নেতারা সেরকমভাবেও এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে আসেননি, কিন্তু ব্রাহ্ম সমাজের প্রধান রাজা রামমোহন রায় সমাজে প্রচলিত সেই ভয়ঙ্কর প্রথার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। রামমোহন রায় সেইসময়কার কিছু প্রগতিশীল চিন্তাধারা যুক্ত কিছু মানুষের সইস্বাক্ষর যুক্ত একটি আবেদনপত্র সরকারের কাছে জমা দেন। এবং সেখানে তিনি সতীদাহ প্রথা বন্ধের দাবি জানান। সরকার রাজা রামমোহন রায়ের এই আবেদন মেনে নিয়ে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক 1829 খ্রিস্টাব্দে 4 জ ডিসেম্বর 17 নং রেগুলেশন জারি করে সতীদাহ প্রথা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করে। ব্রাহ্মসমাজের অথবা রাজা রামমোহন রায়ের এই আন্দোলনের ফলেই সেই সময় সমাজের একটি ভয়ঙ্কর কুপ্রথা বন্ধ হয়।

ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরোধীতাঃ-

রাজা রামমোহন রায় বিভিন্ন ধর্মে প্রচারিত জাতিভেদ প্রথা,অস্পৃশ্যতা, বহুত্ববাদ, ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধবিশ্বাস,কুপ্রথা ইত্যাদি গুলির তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। রাজা রাজা রামমোহন রায়ের কাছে পৌত্তিলিকতা, পুরহিততন্ত্র, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ছিল অর্থহীন। রাজা রামমোহন রায় নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা এবং একেশ্বরবাদের সমর্থনে একটি পুস্তিকাও রচনা করেছিলেন।

নারীদের অধিকারের সমর্থনেঃ-

রাজা রামমোহন রায় সমাজের উন্নয়নের ক্ষেত্রে নারীশিক্ষাকে প্রসারকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সতীদাহ প্রথা বন্ধের মাধ্যমে স্বামীর মৃত্যুর পর নারীদের বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে আসেন। এবং ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তিনি নারীদের শিক্ষার সমর্থন,সমাজে নারীদের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।

রাজনৈতিক সংস্কারঃ-

রাজা রামমোহন রায় রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায় 1821 খ্রিস্টাব্দে সংবাদ কৌমুদী নামক একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি এই পত্রিকায় রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক দিক গুলি আলোচনা করতেন।

উপসংহারঃ- 

সবশেষে বলা যায় যে, রাজা রামমোহন রায় সেই সময়ের একজন আধুনিক চিন্তাশীল মানুষ হয়েও তার মধ্যে যথেষ্ট আধুনিক মানসিকতা ছিল। রাজা রামমোহন রায়ের সেই আধুনিক মানসিকতার জন্যই তিনি সমাজের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ভালো -মন্দ দিকগুলো সম্পর্কে বুঝতে পেরেছিলেন। এবং তাই তিনি সমাজ সংস্কারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। সমাজের বিভিন্ন ভয়ঙ্কর কূপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস, ধর্মীয় গোঁড়ামি, জাতিভেদ প্রথা, শিক্ষার অভাব বা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার অভাব দূর করে এবং সমাজে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার অভাব দূর করার জন্য তিনি নিজ উদ্যোগে এবং নানা ক্ষেত্রে আলেকজান্ডার ডাফ,ডেভিড হেয়ার প্রমুখ পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থকদের নানাভাবে সমর্থন করে তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটান। এবং সতীদাহ প্রথার বন্ধ, ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে নারীদের উন্নয়ন এবং বিভিন্ন ধরনের পুস্কত- পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে তিনি সমাজে আধুনিক চিন্তাধারার প্রসার ঘটান।


আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ঃ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023) থেকে 'উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা | সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান কী ছিল' সম্পর্কে যে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।

Tags : 

Class 12 history notes | hs history suggestion | wb class 12 history question answer and suggestion 2023 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা | সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান কী ছিল | সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 History question answer  | hs History question answer 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top