দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সংস্কারগুলির বিবরণ দাও। তাঁকে ‘মুক্তিদাতা জার’ বলা হয় কেন ?

0

 

দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সংস্কারগুলির বিবরণ দাও। তাঁকে ‘মুক্তিদাতা জার’ বলা হয় কেন ? || নবম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর
নবম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় 


আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে নবম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় উনবিংশ শতকের ইউরোপ রাজতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সংঘাত  অধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ 4 মার্কের প্রশ্ন 'দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সংস্কারগুলির বিবরণ দাও। তাঁকে ‘মুক্তিদাতা জার’ বলা হয় কেন ?' এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। 

দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সংস্কারগুলির বিবরণ দাও। তাঁকে ‘মুক্তিদাতা জার’ বলা হয় কেন ?

পটভূমিঃ প্রথম নিকোলাসের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র দ্বিতীয় আলেকজান্ডার রাশিয়ার সিংহাসনে আরোহন করেন (১৮৫৫ খ্রীঃ)। রাশিয়ার তখন দারুন দুর্দিন। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে জারতন্ত্রের অন্তঃসারশূন্যতা প্রকাশ হয়ে পড়ে । ফলে রুশ-জনগণ জারতন্ত্রের প্রতি তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করতে থাকে। এদিকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল শোচনীয়। অসাম্য আর শোষণে পরিপূর্ণ ছিল সারাদেশ। এমতাবস্থায় দ্বিতীয় আলেকজান্ডার শাসনভার গ্রহণ করে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে অগ্রসর হতে শুরু করেন। তিনি ছিলেন বাস্তববাদী, তাই নিজে স্বৈরতন্ত্রের গোঁড়া সমর্থক হলেও তিনি শাসনকাজে উদারনীতি অনুসরণ করতে থাকেন। জনকল্যাণমূলক একাধিক সংস্কার প্রবর্তন করে তিনি গণ অসন্তোষকে প্রশমিত করতে সচেষ্ট হন।

শাসন-কঠোরতা হ্রাসঃ 

প্রথমেই তিনি শারীতির কঠোরতা হ্রাস করেন। তাঁর পিতার আমলে আন্দোলন করার অপরাধে বহু ব্যক্তিকে নির্বাসিত করা হয়েছিল। দ্বিতীয় আলেকজান্ডার পুনরায় স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দেন এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মুদ্রন যন্ত্রের উপর বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করেন। নৈরাজ্যবাদী দার্শনিক ক্রপটকিনের ভাষায়— এরফলে দেশ পূর্ববর্তী রাজত্বকালের ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন থেকে জেগে উঠল।

ভূমিদাস প্রথার অবসানঃ 

দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য কাজ হল ভূমিদাস প্রথার অবসান। রাশিয়া ছিল কৃষিনির্ভর দেশ। তাই ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগেও রাশিয়াতে ভূমিদাস প্রথা প্রচলিত ছিল। এইসব ভূমিদাসকে অমানুষিক পরিশ্রম করে বাঁচতে হত। এদের না ছিল কোন অধিকার, না ছিল কোন স্বাধীনতা। দ্বিতীয় আলেকজান্ডার এই অমানবিক রদ করার উদ্যোগ নেন। তিনি অভিজাত পরিষদে বলেন (১৮৫৬ খ্রীঃ) যে, "নিচুতলা থেকে কবে এই কু-প্রথা দূরীকরণের চেষ্টা হবে তার জন্য অপেক্ষা না করে উপরতলা থেকেই এ প্রথা বিলোপ করা উচিত। কিন্তু অভিজাতরা আবেদনে সাড়া দেননি।

মুক্তিদাতা জারঃ

অতঃপর এই প্রথা বিলোপ করার পন্থা ও পদ্ধতি তৈরীর জন্য তিনি একটি কমিশন নিয়োগ করেন (১৮৫৭খ্রীঃ)। দেশের কায়েমী স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিরা আলেকজান্ডারের তীব্র বিরোধিতা করেন। কিন্তু তাদের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে ১৮৬১ খ্রীঃ এক আদেশনামা করে তিনি ভূমিদাসদের মুক্তি ঘটান। মুক্তির ঘোষণাপত্রে বলা হয়—১) অতঃপর ভূমিদাসরা স্বাধীন ও মুক্ত নাগরিকের মর্যাদা পাবে। 

২) তাদের উপর ভূস্বামীদের কোন অধিকার থাকবে না। 

৩) ভূমিদাসরা নিজ নিজ চাদ জমির একাংশ ভোগ করবে। 

৪) এজন্য জমিদারদের যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, তা আপাততঃ সরকার প্রদান করবে। কৃষকরা ৪৯ টি কিস্তিতে তা পরিশোধ করতে পারবে। 

৫) কৃষকরা যে জমি পাবে তার পরিচালনা ও মালিকানা গ্রাম্য সমবায় বা 'মীর' নামক সংস্থার হাতে থাকবে। এইজন্য তাকে 'মুক্তিদাতা জার' বলা হয়।

জেমস্টেডোঃ

দ্বিতীয় আলেকজান্ডার রাশিয়ার স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে প্রশাসনিক দুর্বলতা দূর করতে সচেষ্ট হন। ১৮৬৪খ্রীঃ 'জেমস্টেভো' আইন দ্বারা এই স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তিত হয়। ৩৫০ জেলায় একটি করে 'জেমস্টেভো' নামক কাউন্সিল ও কর্মপরিষদ গঠিত হয়। জেলা কাউন্সিল কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয় প্রাদেশিক কাউন্সিল। ৩৪টি প্রাদেশিক কাউন্সিল ছিল। জমির মালিক, শহরবাসী ও কৃষক এই তিন শ্রেণীর মানুষ জেমস্টেভোর প্রতিনিধি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করত। রাস্তাঘাট, সেতু রক্ষণাবেক্ষণ, প্রাথমিক শিক্ষা, জনস্বাস্থ, বাণিজ্য, কৃষি উন্নয়ন প্রভৃতি কাজগুলি জেমস্টেভো তত্ত্ববধান করত।

বিচার ও শিক্ষা সংস্কারঃ 

দ্বিতীয় আলেকজান্ডার বিচারব্যবস্থার বহু পরিবর্তন সাধন করেন। শাসনবিভাগ থেকে বিচারবিভাগকে পৃথক করা হয়। বিচারকদের শাসনবিভাগ থেকে বিচারবিভাগকে পৃথক করা হয়। বিচারকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার উপর জোর দেওয়া হয়, প্রকাশে এবং জুরীর সাহায্যে বিচারের সুযোগ দেওয়া হয়। এইভাবে তিনি দেশে 'আইন শাসন' প্রবর্তন করেন। তাঁর আমলে ব্যাপক শিক্ষা প্রসার ঘটেছিল। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যালয় নির্মাণ করে বিদ্যালাভের সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়। তবে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে তাঁর আগ্রহ ছিল না। 

শিল্পায়নঃ

শিল্পায়নের জন্যও আলেকজান্ডারের রাজত্বকাল স্মরণীয়। ভূমিদাসপ্রথার বিলুপ্তির ফলে শিল্প-শ্রমিকদের যোগান বৃদ্ধি পায়। রেলপথ প্রসারিত হওয়ার পর বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়। সেইসময় বস্ত্রশিল্পে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয় এবং রাশিয়াতে কয়লা ও খনিজ শিল্পের সূচনা ঘটে।

উপসংহার, সুতরাং পরিশেষে বলা যায় যে রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার রাশিয়ার বিভিন্ন ধরনের উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন এবং সমস্ত পদক্ষেপ বাস্তবে কার্যকর করার জন্যেও তিনি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।।


আশাকরি যে, আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে নবম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় ( WBBSE Class 9 History Question Answer & Notes in Bengali ) থেকে যে 'দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সংস্কারগুলির বিবরণ দাও। তাঁকে ‘মুক্তিদাতা জার’ বলা হয় কেন ?' এর উওর দেওয়া হয়েছে তা তোমাদের ভালো লেগেছে। যদি ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিও।।

Tags : 

নবম শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর ২০২৩ | ক্লাস 9 ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর ২০২৩ |  উনবিংশ শতকের ইউরোপ রাজতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সংঘাত অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর | নবম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর ২০২৩ | class 9 history first chapter notes in bengali 2023 |  wb class 9 history questions answers 2023 | wb class 9 history suggestion 2023 | History question answer 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top