আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করো || ইতিহাস লেখার আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

0

 

আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করো || ইতিহাস লেখার আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর

আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস প্রথম অধ্যায় অতীত স্মরণ (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করো বা ইতিহাস লেখার আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো'র উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। এবং পরবর্তীতে আমরা উচ্চ মাধ্যমিকের ইতিহাস সহ আরও অন্যান্য বিষয়ের সমস্ত নোটস + অনলাইন মকটেস্ট তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।।

আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করো || ইতিহাস লেখার আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

ভূমিকাঃ- ইতিহাস হল সমাজ বিজ্ঞানের একটি অন্যতম প্রাচীন এবং গুরুত্বপূর্ণ শাখা। ইতিহাস রচিত হয় মূলত অতীতকালে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সত্য ঘটনার যথাযথ তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক অতীতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ধরনের ঘটনা যেগুলো মানব সমাজ এবং এই পৃথিবীর সঙ্গে জড়িত, সেই ঘটনাগুলোকে নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা করার মাধ্যমে তা লিখিত আকারে প্রকাশ বা ইতিহাস হিসেবে প্রকাশ করেন। সর্বপ্রথম প্রাচীন গ্রিসের হেরোডোটাশ সর্বপ্রথম ইতিহাস রচনা শুরু করেছিলেন। এজন্য হেরোডোটাসকে ইতিহাসের জনক বলা হয়। পরবর্তীতে প্রাচীন গ্রিসের আরেকজন ঐতিহাসিক থুকিডিডিস প্রথম বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ইতিহাসের রচনা শুরু করেন এজন্য থুকিডিডিসকে বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাস চর্চার জনক বলা হয়। এরপর আধুনিককালে আরবের ইমন খালদুন ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিলেন এজন্য ইমন খালদুনকে আধুনিক ইতিহাস চর্চার জনক বলা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন ঐতিহাসিক উনবিংশ শতকে আধুনিক ইতিহাস চর্চার বিকাশ ঘটান এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের প্রয়াসে আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি গড়ে উঠেছে।। যে পদ্ধতি অনুসরণ করে আধুনিক ইতিহাস লেখা হয় তাই হল আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি।

যথার্থ এবং সুসংবদ্ধ ইতিহাস লেখার জন্য ঐতিহাসিকদের যে আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়,তা হল - 

উৎস অনুসন্ধানঃ- 

আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতির প্রথম ধাপ হলো ঐতিহাসিকদের উৎস অনুসন্ধান করা। উৎস বলতে কোনো কিছুর শুরুকে বোঝায়। কিন্তু ইতিহাসের ক্ষেত্রে উৎস বলতে কোনো ঐতিহাসিক উপাদানকে বোঝায় যথাযথ এবং সুসংবদ্ধ ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম ঐতিহাসিকদের বিভিন্ন ধরনের উৎস অনুসন্ধান করতে হয়।যেমন বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, পত্র, লেখ মুদ্রা,বিভিন্ন গুহাচিত্র,নকশা, মানচিত্র?বিভিন্ন পত্র, আবেদন পত্র,সরকারি নথিপত্র, সংবাদপত্র, বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থ ইত্যাদি। এ সমস্ত ঐতিহাসিক উৎস বা ঐতিহাসিক উপাদানের মাধ্যমে ঐতিহাসিকরা ইতিহাস রচনা করেন।

ঐতিহাসিক উৎসের শ্রেণীবিভাগঃ- 

আধুনিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকরা সর্বপ্রথম বিভিন্ন ঐতিহাসিক উৎস অনুসন্ধান করে থাকেন।  বিভিন্ন ঐতিহাসিকের উৎস অনুসন্ধান করার পরবর্তী ধাপ হলো ঐতিহাসিক উপাদান গুলির শ্রেণীবিভাগ করা। ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক উপাদান গুলির বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। সেই সমস্ত ঐতিহাসিক উপাদান গুলি সমান গুরুত্বপূর্ণ নয়। সেই কারণে ঐতিহাসিকরা, উপাদান গুলি ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেই প্রয়োজন অনুসারে অতিপ্রয়োজনীয়, মোটামুটি প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় হিসেবে শ্রেণীবিভাগ করে থাকেন।। এভাবে ঐতিহাসিক অনুসন্ধান এবং তার শ্রেণীবিভাগ করা হয়ে গেলে পরবর্তীতে তারা ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।।

উৎস সম্পর্কে গবেষণাঃ

আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতির তৃতীয় ধাপ হলো বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাদানের উৎস সম্পর্কে গবেষণা করা। ঐতিহাসিক উৎস অনুসন্ধান করার পরবর্তীতে সেগুলি সম্পর্কে যথেষ্ট গবেষণা করে থাকেন  উৎস থেকে তথ্য উদঘাটন করার জন্য ঐতিহাসিককে গভীর এবং নিরপেক্ষ গবেষণা করতে হয়। গবেষণার মাধ্যমে ঐতিহাসিক নিজেকে সেই যুগে নিয়ে যান, যেই যুগ থেকে সেই ঐতিহাসিক উপাদানটি এসেছে। ঐতিহাসিক সেই যুগের নিজেকে নিয়ে গিয়ে এটা জানার চেষ্টা করেন যে, সেই উৎসটি ঠিক কেন এবং কী পরিস্থিতিতে বা কোন পটভূমিতে সৃষ্টি হয়েছিল। যেমন পলাশীর যুদ্ধের রাজনৈতিক ইতিহাস লিখতে গিয়ে একজন ঐতিহাসিক যে সমস্ত দলিল-দস্তাবেজ ও চিঠিপত্র ইত্যাদি সংগ্রহ করে থাকেন, তা সম্পর্কে গবেষণা করতে গিয়ে তিনি এটা জানার চেষ্টা করেন যে, সেই চিঠিটা আসলে কোন প্রেক্ষাপটে লেখা হয়েছিল এবং এটা জানার পরেই ঐতিহাসিক তার পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

কার্যকরণ পদ্ধতি এবং প্রশ্ন-উত্তর পদ্ধতির ব্যবহারঃ-

উৎস সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণে গবেষণা করার পর ঐতিহাসিক উৎস সম্পর্কে কার্যকারণ এবং প্রশ্ন-উত্তর পদ্ধতির ব্যবহার করে থাকেন। ঐতিহাসিকদের মতে কোনো প্রতিটি ঘটনার পেছনেই কারণ লুকিয়ে থাকে।কারণ ছাড়া কোনো কার্য হতে পারে না। একজন ঐতিহাসিক যে ঘটনাটি নিয়ে ইতিহাস লিখবেন, অতীতে সেই ঘটনাটি ঘটার পেছনে কোনো না কোনো কারণ নিশ্চয়ই থাকবে। ঐতিহাসিক সেই কারণটা জানার জন্যই কার্যকারণ পদ্ধতি এবং প্রশ্ন-উত্তর পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। উৎসগুলি সংগ্রহ, শ্রেণীবিভাগ এবং উৎস সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণে গবেষণা করার পর ঐতিহাসিক নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে এটা জানার চেষ্টা করবেন যে,অতীতে সেই ঘটনাটি কেন, কিভাবে ঘটেছিল ইত্যাদি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করেন। এরূপ প্রশ্নের মাধ্যমে যে উত্তরটি সামনে আসবে তা নিয়েই ইতিহাস রচিত হবে।।

তথ্য সংগ্রহ করে রাখাঃ-

বিভিন্ন প্রাপ্ত উৎস সম্পর্কে দীর্ঘ গবেষণার পর যে সমস্ত তথ্য গুলি পাওয়া যায় সে সমস্ত তথ্য গুলি একজন ঐতিহাসিকের সাহায্যে লিপিবদ্ধ করে রাখেন পরবর্তীকালে যখন তার ইতিহাস রচনা শুরু হয় তখন ঐতিহাসিক তথ্য গবেষণা এবং বিশ্লেষণ করে সেগুলি মাধ্যমে ইতিহাস লিখে থাকেন।।

যেমন- বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ঐতিহাসিক তাঁর গবেষণা থেকে সিদ্ধান্ত লাভ করলেন যে, নবাবের অনুমতি ছাড়া কলকাতায় ইংরেজদের দুর্গনির্মাণ, ঢাকার দেওয়ান কুয়দাসকে কলকাতায় আশ্রয়দান, নবাবের দ্রুত নারায়ণ দাসকে কলকাতায় অপমান প্রভৃতি ঘটনাগুলি ইংরেজদের বিরুদ্ধে নবাবকে কুদ্ধ করেছিল। প্রাপ্ত এই সিদ্ধান্তগুলি তিনি একটি নোটবুকে লিখে রাখবেন। এই নোটবুকের তথ্যগুলির ভিত্তিতে তিনি পলাশির যুদ্ধের রাজনৈতিক ইতিহাস লেখার কাজ শুরু করবেন। 

ধারাবাহিকতা এবং কালানুক্রমঃ-  

ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা গুলি সময়ের পথ বেয়ে ধারাবাহিকভাবে সামনে দিকে এগিয়ে চলে। কালানুক্রম যথার্থ ইতিহাস রচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ঐতিহাসিক যখন ইতিহাস রচনার করবেন তখন তাকে সেই ঘটনার তিনটি দিক অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়। যথা ঘটনার সূচনাপর্ব বা প্রাথমিক অবস্থায়, ঘটনার গতিপ্রকৃতি বা মধ্যে অবস্থা এবং ঘটনার পরিনতি বা  শেষ অবস্থা।।

ভৌগোলিক অবস্থানের উল্লেখঃ

ইতিহাসের সব ঘটনা কোনো ক্ষুদ্র বা বৃহৎ ভৌগোলিক স্থানে সংঘটিত হয়ে থাকে। তাই যথার্থ ইতিহাস রচনা করার জন্য যথার্থ ঐতিহাসিক উৎসগুলি সম্পর্কে গভীর গবেষণার পাশাপাশি উৎস ও ঘটনার ভৌগোলিক অবস্থানের উল্লেখ করার বিষয়টিও একজন ঐতিহাসিকের পক্ষে ভীষণ জরুরি। কোনো ঘটনার ঐতিহাসিক বিবরণ দিলেও তাতে ঘটনার স্থানের উল্লেখ না থাকলে সেই ইতিহাস মূল্যহীন হয়ে পড়বে। যেমন- উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, কোনো ঐতিহাসিক যদি লেখেন, “নবাব সিরাজদৌলা ও ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, তা কখনও যথার্থ ঐতিহাসিক বর্ণনা হতে পারে না। কেননা, যথার্থ ইতিহাস রচনা করার জন্য সিরাজদৌলা যে, 'বাংলার নবাব, ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যে, 'কলিকাতার কর্তৃপক্ষ এবং যুদ্ধের স্থানটি যে পলাশীর মাঠ' তা উল্লেখ করা অত্যন্ত জরুরি।

মূল্যায়ন ঐতিহাসিক উৎস অনুসন্ধান, তথ্য উদ্ঘাটন, কালানুক্রমের ব্যবহার, ভৌগোলিক অবস্থানের উল্লেখ প্রভৃতি বিষয়গুলির মাধ্যমে একজন ঐতিহাসিক যথার্থ ইতিহাস রচনা করতে পারেন। তবে একথাও মনে রাখতে হবে যে, শুধু সংবন্ধ লিখন পদ্ধতি ব্যবহার করলেই চলবে না, ইতিহাসের পাঠকে সকল স্তরের মানুষের কাছে মনোগ্রাহী করে তোলার জন্য ঐতিহাসিক অবশ্যই তাতে ‘আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে ইতিহাস রচনা করবেন। রচনার ভাষা যাতে মধুর ও সহজ রল হয়, সে বিষয়েও ঐতিহাসিকের নজর থাকা দরকার। কেননা, ভাষা সহজ সরল এবং মধুর না হলে ইতিহাস অনেক পাঠকের কাছে মরুভূমির তপ্ত বালিতে পড়ে থাকা শুষ্ক নুড়ি-পাথরের মতো মনে হবে।


আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস প্রথম অধ্যায় অতীত স্মরণ (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) থেকে যে 'আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করো বা ইতিহাস লেখার আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে' যে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।

Tags : 

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রথম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায় অতীত স্মরণ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 History question answer  | wb class xii History question answer | hs History  question answer & suggestion 2023

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top