জাতীয়তাবাদ কাকে বলে? জাতীয়তাবাদের বৈশিষ্ট্য বা স্বপক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি দাও || একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর

0

 

জাতীয়তাবাদ কাকে বলে? জাতীয়তাবাদের বৈশিষ্ট্য বা স্বপক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি দাও || একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
জাতীয়তাবাদ কাকে বলে? জাতীয়তাবাদের বৈশিষ্ট্য 

আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় অধ্যায় জাতি, জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতা ( WBBSE Class 11 Political Science Question Answer Chapter 3 In Bengali )  থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'জাতীয়তাবাদ কাকে বলে? জাতীয়তাবাদের বৈশিষ্ট্য বা স্বপক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি দাও'প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। 

জাতীয়তাবাদ কাকে বলে? জাতীয়তাবাদের বৈশিষ্ট্য বা স্বপক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি দাও।।

উওরঃ- আসলে জাতীয়তাবাদ বলতে একটি ভাবগত ধারণাকে বোঝায়। জাতীয়তাবাদ হল বংশ,ধর্ম, ভাষা, সাহিত্য,সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে যেকোনো একটি বা একাধিক কারণে যখন কোনো এটি জনসমাজে মধ্যে গভীর একাত্ববোধের সৃষ্টি হয় এবং সেই একাত্ববোধের জন্য যখন সেই জনসমাজের প্রত্যেকেই একে অপরকে সমান সুখ-দুঃখ ভাগীদার বলে ভাবতে শুরু করে,তখন তাদের সেই একাত্ববোধের সঙ্গে দেশপ্রেম মিলিত হয়েছে যে একটি রাজনৈতিক আদর্শ গড়ে ওঠে, তাকে জাতীয়তাবাদ বলে।।

জাতীয়তাবাদের প্রধান কিছু বৈশিষ্ট্য - স্বপক্ষে যুক্তিঃ- 

রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে কোনো দেশের জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদের মূল্যায়ন করতে গিয়ে জাতীয়তাবাদের স্বপক্ষে বিভিন্ন সাধারণ যুক্তি প্রদর্শন করা হয়ে থাকে। সেগুলো হলো- 

জাতির সর্বাঙ্গের বিকাশের সহায়কঃ- 

জাতীয়তাবাদ হল একটি মানসিক ভাবধারা যার মাধ্যমে কোনটি জনসমাজের প্রত্যেকেই একে অপরকে নিজের সুখ-দুঃখের সমান ভাগীদার বলে ভাবতে শুরু করে। এবং এরুপ আদর্শ জাতীয়তাবাদের উদ্বুদ্ধ প্রত্যেকেই একে অপরের সার্বিক উন্নতি চায়। ফলে একটি আদর্শ জাতীয়তাবাদ সমগ্র জাতিকে যেমন দেশপ্রেম এবং আত্মত্যাগে উদ্ভূত করে তোলে ঠিক তেমনি প্রতিটি জাতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি সাধনের মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে সমগ্র মানব সমাজের বিকাশে সহায়ক হয়ে ওঠে।।

পরাধীন জাতির মুক্তির অগ্রদূতঃ- 

যখন কোনো একটি দেশে জনসমাজের মধ্যে আদর্শ জাতীয়তা বোধ গড়ে ওঠে, তখন সেই দেশের জনগণ কখনোই অন্যের দ্বারা শাসিত হতে চায়না। জাতীয়তাবাদের সুমহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরাধীন জাতি পরাধীনতার শৃংখলমোচনের জন্য মরণপণ সংগ্রাম চালায়। একটি দেশের জনগণ যখন অন্য দেশ দ্বারা শাসিত হয়,তখন স্বাভাবিকভাবেই সেদেশে সুখের তুলনায় দুঃখের পরিমাণ বেশি হয়। এবং আদর্শ জাতীয়তাবাদের উদ্বুদ্ধ জনগণ কখনোই একে অপরের দুঃখ কষ্ট মেনে নিতে পারে না। এর ফলেই তারা পরাধীনতা থেকে মুক্তি চায়। 1947 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসনের অধীনে থাকা ভারতবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবাদের সঞ্চার হয়েছিল বলেই ভারত স্বাধীনতা পেয়েছিল।।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়কঃ- 

অনেকের মতে জাতীয়তাবাদ হল একটি বৈপ্লবিক আদর্শ এবং জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম হলো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। জাতীয়তাবাদের এই আদর্শ কালক্রমে উদারনৈতিক গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতার আদর্শের জন্মদাতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বৈপ্লবিক জাতীয়তাবাদী আদর্শ বিভিন্ন জাতিকে নিজেদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করে এবং সেই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তারা নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার চেষ্টা করে অর্থাৎ তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে ওঠে।।

সহযোগিতা এবং সম্প্রীতির প্রসারঃ-

জাতীয়তাবাদের মূল বক্তব্য হলো নিজে বাঁচো, অপরকে বাঁচতে দাও। জাতীয়তাবাদ এই সুমহান আদর্শের পরিচালিত হয় বলে জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ জাতির মধ্যে পারস্পরিক সংঘাত-সংঘর্ষের পরিমাণ কমে গিয়ে তাদের মধ্যে সহযোগিতা এবং সম্প্রতির সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হয়। এবং প্রতিটি জাতির মধ্যে এরূপ পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সম্প্রীতির সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিটি রাষ্ট্র নিজেকে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

মানব সভ্যতা সর্বাঙ্গীণ বিকাশঃ- 

জাতীয়তাবাদের জনক নামে পরিচিত জোসেফ ম্যাৎসিনি মনে করতেন যে, বিভিন্ন জাতির ভিন্ন ভিন্ন গুণাবলী এবং প্রতিভার বিকাশ সাধনের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ মানবসভ্যতাকে সুসমৃদ্ধ এবং উন্নত করে তোলে। বিশ্লেষণ করা যায়, প্রতিটি জাতি যখন অন্য জাতির সঙ্গে সুসম্পর্কের বান্ধরে সুসম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তখন তাদের মধ্যে আর্থিক সহযোগিতা ছাড়াও ভাবের লেনদেন হয় যার ফলে প্রতিটি জাতির সভ্যতা এবং সংস্কৃতির উন্নতি ঘটে।।

যুদ্ধের সম্ভাবনা কমঃ-

আদর্শ জাতীয়তাবাদ একটি জাতির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। এবং এই জাতীয়তাবাদ 'নিজে বাঁচো এবং অপরকে বাঁচতে দাও' এই নীতির মাধ্যমে পরিচালিত হয় বলে জাতির মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, বিদ্বেষ মূলক প্রতিযোগিতা ইত্যাদির সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে ফলে। আদর্শ জাতীয়তাবাদ বিশ্বের বুক থেকে বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধের ভয়াবহতা গুলিকে কম করে। বর্তমানে প্রযুক্তি বিদ্যার অভাবনীয় উন্নতি, পারমানবিক বোমা আবিষ্কার, নক্ষত্র যুদ্ধের ভয় এতই বেশি যে, তার হাত থেকে এই পৃথিবীতে একমাত্র আদর্শ জাতীয়তাবাদ ই রক্ষা করতে পারে।।

জাতীয়তাবাদের প্রধান কিছু বৈশিষ্ট্য - জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে যুক্তিঃ 

জাতীয়তাবাদের স্বপক্ষে যেমন বিভিন্ন যুক্তি প্রদর্শন করা হয়, ঠিক তেমনি জাতীয়তাবাদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন এমনও কিছু যুক্তি প্রদর্শন করা হয় যা জাতীয়তাবাদকে সমর্থন করে না। যখন জাতীয়তাবাদ তার আদর্শভ্রষ্ঠ হয়ে স্বাদেশিকতায় পরিণত হয়, তখন তাকে উগ্র বা বিকৃত জাতীয়তাবাদ বলে অভিহিত করা হয়। এরূপ জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে যেসব যুক্তির অবতারণা করা হয়, সেগুলি হল- 

সাম্রাজ্যবাদঃ- 

উগ্রজাতীয়তাবাদ সাম্রাজ্যবাদের সৃষ্টি করে। অত্যধিক মুনাফা লাভের আশায় জাতীয় বুর্জোয়া রাষ্ট্রগুলি বিদেশি বাজার দখল ও সেখান থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ, বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগ | ইত্যাদির দিকে বিশেষ মনোযোগী হয়ে ওঠে। এইভাবে ঊনবিংশ শতাব্দীর ইতিহাস হল সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের উন্মাদনায় উন্মত্ত ইউরোপীয় পুঁজিবাদী জাতীয় রাষ্ট্রগুলি কর্তৃক এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দুর্বল ও অনুন্নত জাতিগুলির স্বাধীনতা অপহরণ ও অর্থনৈতিক শোষণের ইতিহাস মাত্র।

জাতিবিদ্বেষ প্রচারঃ- 

আদর্শ জাতীয়তাবাদে প্রতিটি জাতির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন হয়। কিন্তু বিকৃত জাতীয়তাবাদ জাতিবিদ্বেষ প্রচার করে বিভিন্ন জাতির মধ্যে সম্প্রীতি এবং সহযোগিতার বন্ধন ছিন্ন করে এক ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। বিকৃত জাতীয়তাবাদের উদ্বুদ্ধ প্রতি জাতি নিজেদ্বর শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার জন্য অন্যান্য জাতি গুলির উপর সচেষ্ট হয়।।

অন্যায় ও অমঙ্গলের উৎসঃ-

বিকৃত জাতীয়তাবাদের স্বরূপ বর্ণনা করতে গিয়ে হায়েস মন্তব্য করেছিলেন যে, আমাদের যুগে জাতীয়তাবোধ, জাতীয় রাষ্ট্র ও দেশপ্রেমের সংমিশ্রণে যে-জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি হয়েছে, তা চরম অন্যায় ও অমঙ্গলের প্রধান উৎসস্থলে পরিণত হয়েছে। সর্বপ্রকার আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়নীতিকে উপেক্ষা করে জাতীয় সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলি একের পর এক অন্যায় ও আইন-বিরুদ্ধ কাজ চালিয়ে যায়। তাই রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'সভ্যতার সংকট' নামক প্রবন্ধে এরূপ রাষ্ট্রকে ধিক্কার জানিয়েছেন। 

গণতন্ত্র-বিরোধীঃ-

পুঁজিবাদের সংকট যতই তীব্রতর হয়ে উঠছে, ততই তাকে উগ্র জাতীয়তাবাদের মোড়কে মুড়ে দিয়ে শাসকশ্রেণি আত্মরক্ষার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা—গণতন্ত্রের এই সুমহান নীতিগুলিকে ধ্বংস করতে ওইসব জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র আজ বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না। তাদের কাছে ‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। সর্বপ্রকার বিরোধী সমালোচনাকে এখানে কঠোর হাতে দমন করা হয়। নাৎসি জার্মানি ও ফ্যাসিবাদী ইটালি হল গণতন্ত্র-বিরোধী জাতীয়তাবাদের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

জাতির মধ্যে কূপমণ্ডুকতা সৃষ্টিঃ-

সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ জাতির মধ্যে কূপমণ্ডুকতা সৃষ্টি করে। কারণ, এরূপ জাতীয়তাবাদের প্রবক্তারা নিজেদের সবকিছুকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করে অন্ধ উন্মাদনায় অন্যান্য জাতির সভ্যতা, সংস্কৃতি, জ্ঞানবিজ্ঞান প্রভৃতিকে গ্রহণ করার মানসিকতা বিনষ্ট করে দেয়। একটি জাতির নিজস্ব যা কিছু আছে, তার বাইরে তারা কিছুই শিখতে বা জানতে পারে না। ফলে এই জাতি গতিহীন নদীর মতো স্থবিরত্ব প্রাপ্ত হয়।

উপসংহারঃ- 

পরিশেষে বলা যায়,জাতীয়তাবাদ ততক্ষণ পর্যন্তই সবার জন্য কল্যাণকর যতক্ষণ পর্যন্ত তা আদর্শ জাতীয়তাবাদ পর্যন্ত সীমিত থাকে। কিন্তু যখনই একটি জাতি আদর্শ জাতীয়তাবাদের নীতি ভুলে তাকে বিকৃত জাতীয়তাবাদে পরিণত করে, তখনই জাতীয়তাবাদ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অকল্যাণকর বলে মনে হয়।।

আশাকরি, আজকের এই ব্লগে একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় অধ্যায় জাতি, জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতা ( WBBSE Class 11 Political Science Question Answer Chapter 3 In Bengali )  থেকে যে 'জাতীয়তাবাদ কাকে বলে? জাতীয়তাবাদের বৈশিষ্ট্য বা স্বপক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি দাও' সম্পর্কে যে নোট শেয়ার করা হয়েছে, তা তোমাদের কাজে লাগবে।।

Tags : 

একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস 11 রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উওর | একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় অধ্যায় জাতি, জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতা অধ্যায়র প্রশ্ন উত্তর | একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর | wb class 11 political science question answer  | wbbse class 11 political science chapter 3 question answer in Bengali 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top