পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে জাতীয় স্বার্থের ভূমিকা বা জাতীয় স্বার্থের উপাদান সমূহ সম্পর্কে আলোচনা করো || দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উওর

0

 

পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে জাতীয় স্বার্থের ভূমিকা বা জাতীয় স্বার্থের উপাদান সমূহ সম্পর্কে আলোচনা করো || দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উওর
দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর

আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিবর্তন এবং কয়েকটি মৌলিক ধারণা অধ্যায়ের ( WBBSE Class 12 Political Science Question Answer Chapter 1 In Bengali )  একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে জাতীয় স্বার্থের ভূমিকা বা জাতীয় স্বার্থের উপাদান সমূহ সম্পর্কে আলোচনা করো' এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। এবং পরবর্তীতে আমরা উচ্চ মাধ্যমিকের রাষ্ট্রবিজ্ঞান সহ আরও অন্যান্য বিষয়ের সমস্ত নোটস + অনলাইন মকটেস্ট তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।।

পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে জাতীয় স্বার্থের ভূমিকা || জাতীয় স্বার্থের উপাদান সমূহ সম্পর্কে আলোচনা করো

ভূমিকাঃ জাতীয় স্বার্থের অর্থ নিয়ে অস্পষ্টতাজনিত বিতর্ক থাকলেও এখনও পর্যন্ত এর কোনো বিকল্প নেই বলে ফ্রাঙ্কেল অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু পৃথিবীর সমস্ত রাষ্ট্রই মূলত নিজেদের জাতীয় স্বার্থের উপর ভিত্তি করেই নিজেদের বিদেশ নীতি বা পররাষ্ট্রনীতির নির্ধারণ করে থাকে।

জাতীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাঃ- 

প্রতিটি দেশের জাতীয় স্বার্থের উপাদান গুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজেদের জাতীয় স্বাধীনতা এবং জাতীয় নিরাপত্তার। ক্ষুদ্র বৃহৎ প্রতিটি রাষ্ট্রই নিজেদের জাতীয় স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। কারণ দেশের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা অক্ষুন্ন না থাকলে সেই দেশটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বীকৃতি লাভ করে না। তাই কোনো রাষ্ট্রই কখনোই এমন কোনো পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করে না যার মাধ্যমে তাদের জাতীয় স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা ভঙ্গ হবে। তাই প্রত্যেক রাষ্ট্রই তাদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সর্বতোভাবে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়।। দেশের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রতিটি রাষ্ট্রকেই নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে হয়। এবং সামরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রতি রাষ্ট্রকেই আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হয়। সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করার পর প্রতিটি রাষ্ট্র জাতীয় স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে সঠিক পররাষ্ট্রনীতির গ্রহন করে।।

পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণেজাতীয় উন্নয়নঃ- 

প্রতিটি রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণের অন্যতম লক্ষ হলো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করা এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে হলে প্রত্যেক রাষ্ট্রেরই প্রয়োজন জাতীয় উন্নয়ন। জাতীয় স্বার্থের এই দিকটির উপর ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারিত হয়। প্রতিটি রাষ্ট্র নিজেদের জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। রাষ্ট্রের জাতীয় উন্নয়ন বলতে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বোঝায় না সেইসঙ্গে শিল্পউন্নয়নকেও বোঝায়।। যেমনটি একটি কৃষি প্রধান দেশের উৎপন্ন কৃষিপণ্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পর রাষ্ট্র সেই সমস্ত পণ্য অন্যান্য দেশে রপ্তানি করে। এর ফলে তাদের মধ্যে যে পরনীতি গৃহীত হয় তার মাধ্যমে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং সেইসঙ্গে রপ্তানিকৃত দ্রব্যসামগ্রী থেকে যে সমস্ত অর্থ সংগ্রহ হয় তার মাধ্যমে সেই রাষ্ট্র বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ কর্ম করতে পারে। এবং এভাবেই জাতীয় উন্নয়ন ঘটে।।

পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে বিশ্বব্যবস্থাঃ- 

বর্তমানে বিভিন্ন শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি নিজেদের জাতীয় স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য অনেক সময় সামরিক শক্তির প্রয়োগ করে থাকে বা প্রয়োগের ভীতি প্রদর্শন করে। যার ফলে বিশ্ব ব্যবস্থায় প্রকৃতিগতভাবে আগ্রাসী ও ভীতিপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয় এবং বিশ্বসমাজে ধ্বংসের পথ সৃষ্টি হয়।। কিন্তু বর্তমানে প্রতিটি রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়ন তখনই সম্ভব যখন একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্বব্যবস্থা গড়ে উঠবে। এবং এই বিশ্বব্যবস্থা তখনই গড়ে উঠবে যখন প্রত্যেক রাষ্ট্রই এমন পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করবে যার মাধ্যমে প্রতিটি রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ,আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টা দূর হয়ে একটি শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে। তাই প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত এমন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহন করা যার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হবে।। 

বিশ্ব জনমত গঠনঃ-

বর্তমানের আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিটি রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের পূরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো বিশ্ব জনমত গঠনের। অনেক সময় সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন রাষ্ট্র বিশ্ব জনমত গঠনের মাধ্যমে নিজেদের জাতীয় স্বার্থ পূরণের চেষ্টা করে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুই মহাশক্তিধর রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে এই ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে দেখা গিয়েছিল। সাম্প্রতিককালে সন্ত্রাসবাদ কবলিত বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে বিশ্ব জনমত গঠনের প্রয়াস করে চলেছে। 2011 সালে মুম্বাই বিস্ফোরণের পর পাক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের ভূমিকার কথা উল্লেখ করা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বৃহৎ শক্তির কাছে ভারত বারেবারে মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের স্বরুপ তুলে ধরেছে। 

আন্তর্জাতিক সংগঠন গুলিতে সক্রিয় অংশগ্রহণঃ- 

প্রতিটি রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ পূরণ করার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি দেশ বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক সংগঠনের কতখানি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারছে তার ওপর সেই দেশের জাতীয় স্বার্থ পূরণের বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রে নির্ভর করে থাকে। বর্তমানে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চলে বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন গড়ে উঠেছে। সেখানে জাতীয় স্বার্থ পূরণের বিষয়টি একটি ভিন্ন মাত্রা লাভ করেছে। উদাহরণ হিসেবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, এশিয়ান সার্ক, আফ্রিকান ঐক্য প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা যায়। এই সমস্ত আন্তর্জাতিক সংগঠন গুলির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের জাতীয় স্বার্থ পূরণ হয়ে থাকে।

জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে নিরস্ত্রীকরণঃ- 

বর্তমানে যে সমস্ত শক্তিশালী রাষ্ট্র রয়েছে সেই সমস্ত রাষ্ট্রপতি মূলত একসময় নিজেদের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য পারমানবিক বোমা আবিষ্কার করেছিল। কিন্তু সময় এগিয়ে গেলে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাছে এখন পারমানবিক বোমা রয়েছে এবং পারমাণবিক বোমা থাকায় বতর্মান বিশ্ব এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে রয়েছে।কারণ যদি কোনভাবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যায়, তাহলে অনেক রাষ্ট্রই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে এবং এর ফলে বিশ্ব ধ্বংস হতে বাধ্য। তাই বর্তমানে বিভিন্ন রাষ্ট্র এই সমস্ত কথা উপলব্ধি করতে পেরেই শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি তাদের জাতীয় স্বার্থেই - নিরস্ত্রীকরণ, পারমাণবিক বোমা আবিষ্কারের প্রসার রোধ, মারণাস্ত্রের সীমিতকরণ প্রভৃতির সঙ্গে যুদ্ধের উত্তেজনা প্রশমন, পারস্পরিক মত বিনিময়ের মাধ্যমে মত ঐক্যের কর্মসূচি গ্রহণের কথা বলতে শুরু করেছে। এই ভাবে অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গঠনের যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে তার ফলে প্রতিটি দেশের জাতীয় স্বার্থই সংরক্ষিত হবে বলে বিশ্বের উন্নত দেশগুলি মনে করে।।


আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিবর্তন এবং কয়েকটি মৌলিক ধারণা অধ্যায় ( WBBSE Class 12 Political Science Question Answer Chapter 1 In Bengali )  থেকে যে 'পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে জাতীয় স্বার্থের ভূমিকা বা জাতীয় স্বার্থের উপাদান সমূহ সম্পর্কে আলোচনা করো' সম্পর্কে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।

Tags : 

দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিবর্তন এবং কয়েকটি মৌলিক ধারণা অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 political science question answer  | wb class xii political science question answer 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top