দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিবর্তন এবং কয়েকটি মৌলিক ধারণা অধ্যায়ের ( WBBSE Class 12 Political Science Question Answer Chapter 1 In Bengali ) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'বিশ্বায়নের ফলাফল গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো। ' এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। এবং পরবর্তীতে আমরা উচ্চ মাধ্যমিকের রাষ্ট্রবিজ্ঞান সহ আরও অন্যান্য বিষয়ের সমস্ত নোটস + অনলাইন মকটেস্ট তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।।
বিশ্বায়নের ফলাফল গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।
ভূমিকাঃ বিশ্বায়নের প্রবক্রারা বিশ্বায়নকে সংহতি ও সংযুক্তি সাধনের এক স্বাভাবিক ও মহান প্রক্রিয়া হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু বাস্তবে বিশ্বায়নের ফলে মূলত উন্নত দেশগুলি আরো উন্নত হয়েছে। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া মূলত বাণিজ্যে-শিল্পের ক্ষেত্রে উন্নত রাষ্ট্র এবং বহুজাতিক সংস্থা গুলির নয়া সাম্রাজ্যবাদী নীতি। কিন্তু অপরদিকে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন খুবই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই ফলাফল গুলিকর মূলত চার ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের ফলাফলঃ-
বিশ্বায়নের যুগে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার বা ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড,ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন এর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বায়নের প্রবক্তারা বিশ্বব্যাপী লগ্নিপুঁজি সম্প্রসারণের মাধ্যমে তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলিকে অর্থনৈতিক দিক থেকে শোষণ করার চেষ্টা করে। ঋণগ্রহণকারী অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলি বহুজাতিক সংস্থা গুলির কাজ থেকে ঋণ গ্রহণ করার পূর্বেই সেউ সংস্থাগুলো সেই উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এমন কিছু শর্ত প্রদান যার মাধ্যমে সেই দেশগুলি নিজেদের কাঠামোগত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।। এছাড়াও উন্নত দেশগুলি বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশে নিজেদের বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলির নিজস্ব অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও বহুজাতিক সংস্থা গুলির বিভিন্ন ধরনের চাপে পড়ে উন্নয়নশীল দেশগুলি নিজেদের কাঠামোগত পরিবর্তন করার ফলে, সেই দেশের বেকারত্ব, শ্রমিক ছাটাই, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের অসক্রিয়তা দেখা দেওয়ার ফলে দেশে দারিদ্র্য, মূল্যবৃদ্ধি পায়। ফলে আর্থিক এবং সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সংকট দেখা দেয়।।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রভাবঃ-
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের মতো রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বিশ্বায়ন জাতিরাষ্ট্রের দিক থেকে অনুন্নত দেশগুলির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রতিটি রাষ্ট্রের নিজের শ্রম এবং জনসাধারণের কল্যাণের কথা ভেবে পুঁজির অবাধ মুনাফা লুণ্ঠনের উপর বিভিন্ন বাধানিষেধ আরোপ করে। কিন্তু বিশ্বায়ন জাতিরাষ্ট্রকে অকেজো করে তোলার পক্ষপাতী। বিশ্বায়ন এমন এক উন্মুক্ত বিশ্ববাণিজ্য বাজার গড়ে তোলার পক্ষপাতী যেখানে রাষ্ট্রের সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। তাই এক্ষেত্রে বিশ্বায়ন বিভিন্ন রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতাকে অনেক ক্ষেত্রেই কমিয়ে দেয়।।
পরিবেশের ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের কূপ্রভাবঃ-
বিশ্বায়নের সবচাইতে খারাপ দিকটি হলো বিশ্বায়নের মাধ্যমে উন্নত দেশগুলি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা অননন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে সেই সমস্ত শিল্প ও বাণিজ্য গড়ে তোলে, যেগুলো তারা নিজেদের দেশে স্থাপন করলে ক্ষতি হতে পারে। এর মাধ্যমে উন্নত দেশগুলি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে পরিবেশ দূষণকারী শিল্প গড়ে তোলে যেগুলো তাদের নিজেদের পক্ষে ক্ষতিকর। এসব শিল্পের মধ্যে জৈব রসায়ন শিল্পের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া কলকারখানার উৎপাদনের বর্জ্য ফেলে দেওয়ার ফলে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক পরিমাণে পরিবেশ দূষিত হয়। উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলোতে পরিবেশ রক্ষা আইন যথেষ্ট কঠোরভাবে মেনে চলা হয় বলে বহুজাতিক সংস্থাগুলি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে পরিবেশ দূষণকারী শিল্প গড়ে তোলার কাজ করে থাকে।।
সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের কূপ্রভাবঃ-
বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের, বিশেষত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির নিজস্ব সংস্কৃতি বিপন্ন হয়ে পড়েছে। উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির পরিকাঠামো ও গণমাধ্যমের ওপর বহুজাতিক সংস্থাগুলির একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে পশ্চিমি ভোগবাদী সংস্কৃতি আজ ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রসার লাভ করতে পেরেছে। এর ফলে বাড়ি, গাড়ি, জমি, টিভি, ফ্রিজ, এয়ার কুলার প্রভৃতি পণ্যের চাহিদা একদিকে যেমন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে তেমনি টিভি ও সিনেমার দৌলতে যৌনতা ও মাফিয়াতন্ত্রের পাশাপাশি হিংস্রতাকেও মানবসমাজের স্বাভাবিক অঙ্গ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। তা ছাড়া, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ফ্যাশন শো-র প্রদর্শনী, বিজ্ঞাপনে নারীর খোলামেলা শরীর প্রদর্শন প্রভৃতির মাধ্যমে বিকৃত সংস্কৃতিকে প্রকৃত সংস্কৃতি হিসেবে তুলে ধরার অন্তহীন প্রয়াস লক্ষ করা যায়। শিশু ও কিশোরকিশোরীদের মনে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তারা সুস্থ জীবন থেকে বিচ্যুত হয়ে বিপথগামী হতে থাকে। বলা বাহুল্য, পাশ্চাত্যের এই সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের আসল লক্ষ্য হল মানুষের সমাজমনস্কতা ও বিপ্লবী চেতনাকে ধ্বংস করে দেওয়া।
উপসংহারঃ-
লগ্নি পুঁজির বিশ্বজয়ের অভিযানের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ যাবে। কিন্তু ডেভিড হেল্ড শুরু হয়েছে। বিশ্বব্যাংক, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের কর্মকর্তারা যেখানেই নীতি নির্ধারণের জন্য সমবেত হয়েছেন, সেখানেই বিশ্বায়ন, উদারীকরণ ও বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে হাজার হাজার প্রতিবাদী মানুষ বিক্ষোভে শামিল হয়েছে। সুতরাং বলা যেতে পারে, সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নই যে শেষ কথা নয়, আগামীদিনের সার্বভৌমিকতা ছাড়া রাষ্ট্রের ইতিহাসই তার প্রমাণ দেবে।
আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিবর্তন এবং কয়েকটি মৌলিক ধারণা অধ্যায় ( WBBSE Class 12 Political Science Question Answer Chapter 1 In Bengali ) থেকে যে 'বিশ্বায়নের ফলাফল গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।' সম্পর্কে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।
Tags :