একাদশ শ্রেণির সাহিত্যের ইতিহাসের বড় প্রশ্ন উত্তর || চন্ডীমঙ্গলের শ্রেষ্ঠ কবি কে? চন্ডীমঙ্গল কাব্যের আখেটিক খন্ডের কাহিনী সম্পর্কে লেখো।

0

চন্ডীমঙ্গলের শ্রেষ্ঠ কবি কে? চন্ডীমঙ্গল কাব্যের আখেটিক খন্ডের কাহিনী সম্পর্কে লেখো।।


একাদশ শ্রেণির সাহিত্যের ইতিহাসের বড় প্রশ্ন উত্তর || চন্ডীমঙ্গলের শ্রেষ্ঠ কবি কে? চন্ডীমঙ্গল কাব্যের আখেটিক খন্ডের কাহিনী সম্পর্কে লেখো।
একাদশ শ্রেণির সাহিত্যের ইতিহাসের প্রশ্ন উওর

চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তরঃ- চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি হলেন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী। মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর আত্মবিবরণী থেকে জানা যায় যে, তিনি এবং তার সাত পুরুষের আদি নিবাস ছিল বর্ধমান জেলার রায়না থানার অন্তর্গত দামুন্যা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম হৃদয় মিশ্র, মায়ের নাম দৈবকী। দেশে চরম অরাজকতা দেখা মুকুন্দরা দিলে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে মুকুন্দরাম সপরিবারে দেশত্যাগ করেন। মধ্যযুগে পথে দস্যুরা তাঁর সর্বস্ব লুঠ করে। ফলে একসময় মুকুন্দরাম চক্রবর্তী এবং তার পরিবারকে খিদে, আতঙ্ক ও পরিশ্রমে ক্লান্ত-শ্রান্ত অধিকার কবিকে পথের মধ্যে দেবী চণ্ডী স্বপ্নে দেখা দিয়ে ‘সংগীত’ অর্থাৎ চণ্ডীমঙ্গল রচনার আদেশ দেন। দেবীর এই স্বপ্নাদেশ শিরোধার্য করে কবি শিলাই নদী পার হয়ে মেদিনীপুরের আড়রা গ্রামে পৌঁছোন। সেখানকার জমিদার বাঁকুড়া রায় তাঁকে আশ্রয় দেন ও নিজের বালকপুত্র রঘুনাথ রায়ের গৃহশিক্ষকরূপে নিয়োগ করেন। বাঁকুড়া রায়ের মৃত্যুর পর রঘুনাথ রায় জমিদারিতে বসলে তিনি কবিকে চণ্ডীমঙ্গল রচনার জন্য অনুরোধ করেন। কবি তাঁর কাব্যে বাংলার সুবেদার মানসিংহের কথা উল্লেখ করেছেন। গবেষকরা বিভিন্ন তথ্য দেখে অনুমান করেছেন যে, ষোড়শ শতাব্দীর শেষ এবং সপ্তদশ শতাব্দীর শুরুর মধ্যে কাব্য রচিত হয়েছিল। কাব্যমধ্যে কবি তাঁর এই কাব্যকে অভয়ামঙ্গল, চণ্ডিকামঙ্গল, অম্বিকামঙ্গল প্রভৃতি নামেও চিহ্নিত করেছেন।

চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের আখেটিকখণ্ডের কাহিনিটি সংক্ষেপে লেখো।

উত্তরঃ প্রত্যেকটি মঙ্গলকাব্যে মূলত রচিত হয়েছে কোনো না কোন দেব দেবীর মাহাত্ম্যপ্রচার মূলক কাহিনী নিয়ে। মঙ্গল কাব্য গুলির মধ্যে কোনো এক দেব-দেবীর মাহাত্ম্য প্রচারের উদ্দেশ্যে তাকে নিয়ে গড়ে ওঠে একটি কাহিনী। এবং সেই কাহিনীর মধ্যে সেই নির্দিষ্ট একজন দেব-দেবীর মাহাত্ম্য প্রচারের মধ্যে দিয়ে তার পূজা প্রচলনের কাহিনী বর্ণনা করা হয়ে থাকে। অন্যান্য মঙ্গলকাব্যের মতো চণ্ডীমঙ্গলকাব্যেও আমরা সেরকমই একটি কাহিনী দেখতে পাই।চন্ডীমঙ্গল কাব্যের দুটি খন্ড রয়েছে। একটি হলো আখেটিক খন্ড এবং দ্বিতীয়টি হলো বণিক খন্ড। চন্ডীমঙ্গল কাব্যের আখেটিক খন্ডে রয়েছে কালকেতু এবং ফুল্লরাত কাহিনী। এবং তাদের মাধ্যমে দেবী চণ্ডীর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার এবং তার পূজার প্রচলন এর কাহিনী।

চণ্ডীমঙ্গল-এর আখেটিকখণ্ডের কাহিনি অনুযায়ী চণ্ডীর প্ররোচনায় শিব ইন্দ্রের পুত্র নীলাম্বরকে ফুল তোলার কাজে ভুল করায় অভিশাপ দিয়ে মর্ত্যে পাঠান। মর্ত্যে ব্যাধ ধর্মকেতুর পুত্ররূপে নীলাম্বরের জন্ম হয় এবং তাঁর নাম হয় কালকেতু। অন্যদিকে সঞ্জয়কেতুর ঘরে জন্ম নেওয়া তার স্ত্রী ছায়ার নাম হয় ফুল্লরা।

বড়ো হয়ে কালকেতুর সঙ্গে ফুল্লরার বিবাহ হয়। এদিকে কালকেতুর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বনের পশুরা দেবী চণ্ডীর শরণাপন্ন হলে চণ্ডী একদিন সোনালি গোসাপের রূপ ধরে কালকেতুর শিকারে যাওয়ার পথে পড়ে থাকেন। অশুভ সোনালি গোসাপ দেখে ক্রুদ্ধ কালকেতু সেটিকে বেঁধে নিয়ে শিকারের উদ্দেশে রওনা হয়। সেদিন সারা বন ঘুরে কোনো শিকার না পেয়ে সোনালি গোসাপ নিয়েই সে বাড়ি ফিরে আসে। তারপর সে নিজে বেরিয়ে যায় বাসি মাংসের পসরা নিয়ে বাজারে। স্ত্রী ফুল্লরা যায় প্রতিবেশিনীর কাছে খুদ ধার করে আনতে। এই অবসরে গোসাপের রূপ পরিত্যাগ করে দেবী চণ্ডী সুন্দরী রমণীর বেশ ধারণ করেন। তাঁকে সতীন ভেবে শঙ্কিতা ফুল্লরা তার দুঃখের বারমাস্যা শুনিয়ে দেবীকে বিদায় করার ব্যর্থ চেষ্টা করে। ঘরে ফিরে বিস্মিত কালকেতু অনেক বুঝিয়েও যখন দেবীকে বিদায় করতে পারে না, তখন সে ধনুকে তির পরাতেই দেবী নিজমূর্তি ধারণ করেন। দেবী এরপর কালকেতুকে সাতঘড়া ধন এবং একটি মহামূল্যবান আংটি দিয়ে নগর পত্তনের পরামর্শ দেন। কালকেতু বিপুল অর্থ ব্যয় করে বন কেটে গুজরাত নগর পত্তন করে। ভাড়ু দত্তের প্ররোচনায় কলিঙ্গরাজের সঙ্গে কালকেতুর যুদ্ধ হয় এবং যুদ্ধে কালকেতু পরাজিত ও বন্দি হয়। অবশেষে কলিঙ্গরাজ স্বপ্নে দেবীর আদেশ পেয়ে কালকেতুকে মুক্তি দেন এবং ফিরিয়ে দেন তার রাজ্যপাট। কালকেতু মহাসমারোহে মর্ত্যে দেবী চণ্ডীর পূজার প্রচলন করে। দীর্ঘকাল সুখে রাজত্ব করার পর কালকেতু ও ফুল্লরা পুত্রের হাতে রাজ্যভার দিয়ে স্বর্গে ফিরে যায়। এবং এভাবেই চন্ডীমঙ্গল কাব্যের আখেটিক খন্ডের কাহিনীটি এখানেই সমাপ্ত হয়।


আশাকরি, একাদশ শ্রেণির সাহিত্যের ইতিহাস থেকে যে (WB Class 11 Bengali Question Answer 2023) চন্ডীমঙ্গলের শ্রেষ্ঠ কবি কে? চন্ডীমঙ্গল কাব্যের আখেটিক খন্ডের কাহিনী সম্পর্কে নোট শেয়ার করা হয়েছে, তা তোমাদের কাজে লাগবে।।

Tags : একাদশ শ্রেণির সাহিত্যের ইতিহাসের প্রশ্ন উওর  | ক্লাস 11 সাহিত্যের ইতিহাসের প্রশ্ন উওর | একাদশ শ্রেণির সাহিত্যের ইতিহাসের saq | একাদশ শ্রেণির সাহিত্যের ইতিহাসের প্রাচীন যুগ, মধ্যে যুগের প্রশ্ন উত্তর 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top