দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় উনবিংশ ও বিংশ শতকে ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসারের ( West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'এশিয়া মহাদেশে ঔপনিবেশিক শাসনের প্রসার সম্পর্কে আলোচনা বা ভারত ও তার সন্নিহিত অঞ্চলে ঔপনিবেশিক শাসন প্রসারের বিবরণ দাও' প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
এশিয়া মহাদেশে ঔপনিবেশিক শাসনের প্রসার সম্পর্কে আলোচনা করো || ভারত ও তার সন্নিহিত অঞ্চলে ঔপনিবেশিক শাসন প্রসারের বিবরণ দাও
ভূমিকাঃ পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দা গামা 1498 খ্রিস্টাব্দের 8 ই জুন সামুদ্রিক অভিযান শুরু করেছিলেন। তিনি সামুদ্রিক অভিযানের মাধ্যমে 1498 খ্রিস্টাব্দের ভারতের কালিকটে পৌঁছেছিলেন। ভাস্কো-দা-গামা ভারতে আসার পর থেকেই ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিগুলি যেমন পর্তুগিজ,ওলন্দাজ ইংরেজি প্রভৃতি দেশের বণিক জাতি ভারতে আসা শুরু করে এবং এই বিভিন্ন জাতির বণিকদের ভারতে আসার পর থেকেই আস্তে আস্তে ভারত সহ এশিয়া মহাদেশের অন্য দেশগুলো তাদের ঔপনিবেশিনে পরিণত হতে শুরু করে।।
ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠাঃ-
1498 খ্রিস্টাব্দে ভাস্কো-দা-গামা ভারতে এসে বাণিজ্য শুরু করার পর ইউরোপের ওলন্দাজ,ইংরেজ, ফরাসি, দিনেমার প্রভৃতি বণিক জাতিরা ভারতে আসতে শুরু করে। প্রথমদিকে তাদের ভারতে আসার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতে এসে বাণিজ্যকুঠি প্রতিষ্ঠা করে ভারত থেকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক পণ্য নিজের দেশে এবং অন্যান্য দেশে নিয়ে গিয়ে মুনাফা অর্জন করা।। কিন্তু ধীরে ধীরে ভারতে ব্যবসা করতে আসা এই সমস্ত বণিক জাতিরাই ভারতে নিজরদের আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। ইউরোপীয় বণিকরা ভারতে বানিজ্য করার উদ্দেশ্য প্রবেশ করলেও ঔরঙ্গজেবের পরবর্তী শাষকদের দুর্বলতা,ভারতে একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকারের অনুপস্থিতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদির সুযোগ নিয়ে ইংরেজরা ভারতে উপনিবেশ স্থাপনের উদ্যোগী হয়ে ওঠে। এবং এরপরেই ইংরেজরা 1757 খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার নবাবকে,1764 সালে মীর কাসেমকে, 1756 খ্রিস্টাব্দের ফরাসিদের এবং 1759 খ্রিস্টাব্দে ওলন্দাজদের, এবং একে একে মারাঠা, শিখদের সঙ্গে যুদ্ধ করে ইংরেজরা ভারতকে তাদের একটি ঔপনিবেশে পরিণত করতে সক্ষম হয়।। এবং 1857 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রায় সমগ্র ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্ভুক্ত হয়।নেপালে ব্রিটিশদের আধিপত্য বিস্তারঃ-
ব্রিটিশরা যে শুধুমাত্র ভারতের আধিপত্য বিস্তার করার সময় ভারতের উপরেই নজর দিয়েছে তা নয়। ব্রিটিশরা ভারতের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালেও নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে উদ্যোগী হয়েছিল।। গোরখা জাতি অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে নেপাল জয় করে সেখানে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। শীঘ্রই রাজা পৃথ্বীনারায়ণের নেতৃত্বে নেপাল রাজ্যবিস্তারের চেষ্টা চালাতে থাকে। লর্ড কর্নওয়ালিশ (১৭৮৬-৯৩ খ্রি.) কার্কপ্যাট্রিক নামে জনৈক ব্রিটিশ প্রতিনিধিকে নেপালে পাঠিয়ে নেপালের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কস্থাপনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু দীর্ঘকাল নেপালের সঙ্গে ইংরেজ কোম্পানির শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্কস্থাপন সম্ভব হয়নি। ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে গোর্খারা ইংরেজ অধ্যুষিত বাটওয়াল (Butwal) ও শেওরাজ (Sheoraj) দখল করলে ইংরেজরা তাদের যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষুব্ধ হয় এবং এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইঙ্গ-নেপাল যুদ্ধ (১৮১৪-১৬ খ্রি.) শুরু হয়। যুদ্ধে গোরখা বাহিনী পরাজিত হলে নেপাল ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে সগৌলির সন্ধি (১৮১৬ খ্রি.) স্বাক্ষরে বাধ্য হয়। এই সন্ধির দ্বারা সিকিম, সিমলা, মুসৌরি, নৈনিতাল, আলমোড়া প্রভৃতি পার্বত্য অঞ্চল-সহ বর্তমান কুমায়ুন ও গাড়োয়াল জেলা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।মায়ানমারে ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠাঃ-
ভারতের পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত মায়ানমারের আলমপোয়া দক্ষিণব্রহ্ম এবং ইরাবতী অঞ্চল জয় করে সেখানে তাদের একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল।পরবর্তীকালে এই সমাজের আরো প্রসার ঘটে। কিন্তু এর মধ্যেই ইংরেজরা মায়ানমারে তাদের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য উদ্যোগ নেয়। মায়ানমারকে নিজেদের উপনিবেশে পরিণত করার জন্য ইংরেজরা সর্বপ্রথম 1824 খ্রিস্টাব্দে রাজা পাগিডোয়াকে পরাজিত করে। প্রথম যুদ্ধ জয়ের পর ইন্দারা সন্ধির মাধ্যমে ইংরেজরা মায়ানমারের বেশ কিছু অংশ দখল করে এবং সেইসঙ্গে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পায়। দ্বিতীয় বার অর্থাৎ 1852 খ্রিস্টাব্দে ইঙ্গ ব্রহ্ম' যুদ্ধ ব্রহ্মদেশের রাজা আবারো ইংরেজদের কাছে পরাজিত হয় এবং এর ফলে ইংরেজরা মায়ানমারের পেগু দক্ষিণব্রহ্ম এবং সবশেষে তৃতীয়বারের যুদ্ধে 1885 খ্রিস্টাব্দের যুদ্ধে ব্রিটিশরা মায়ানমারের রাজাকে আবার পরাজিত করে সমস্ত ব্রহ্মদেশ ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্ভুক্ত করে।আফগানিস্থানে ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠাঃ-
ব্রিটিশরা নেপাল এবং মায়ানমারকে দখল করার সঙ্গে সঙ্গে আফগানিস্তানকে দখল করার ক্ষেত্র বিশেষ নজর রেখেছিল। কারণ আফগানিস্তানের ভৌগলিক অবস্থান, ভারতে ব্রিটিশদের আধিপত্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে মোটেও সুবিধার ছিল না। কারণ ব্রিটিশদের মনে সবসময় এই ভয় ছিল যে,রাশিয়া যদি আফগানিস্তানে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে তাহলে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। সেকারণেই ইংরেজরা আবগানিস্থানকে দখল করার জন্য মেয়েদের সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করেছিল।।ইংরেজদের আফগানিস্তানকে দখল প্রথম চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কিন্তু 1878 খ্রিস্টাব্দে লর্ড লিটনের আমলে ইংরেজরা দ্বিতীয়বার আফগানিস্তানকে আক্রমণ করলে সে যুদ্ধেই আফগানিস্থান হেরে যায়। এর ফলে আফগানিস্তানে ব্রিটিশদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।।
সিংহল বা শ্রীলঙ্কায় ব্রিটিশ আধিপত্যঃ-
সিংহল বা শ্রীলঙ্কায় ব্রিটিশদের আগেই ওলন্দাজদের আধিপত্য ছিল।কিন্তু 1796 খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন কারণে ওলন্দাজরা সিংহল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে 1802 অ্যামিয়েন্সের সন্ধির মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় ইংল্যান্ডের অধিকার চলে আসে এবং শ্রীলংকাও ব্রিটিশদের ঔপনিবেশে পরিণত হয়।।আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় উনবিংশ ও বিংশ শতকে ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ( West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) থেকে যে 'এশিয়া মহাদেশে ঔপনিবেশিক শাসনের প্রসার সম্পর্কে আলোচনা বা ভারত ও তার সন্নিহিত অঞ্চলে ঔপনিবেশিক শাসন প্রসারের বিবরণ' সম্পর্কে যে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।
Tags :
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় উনবিংশ ও বিংশ শতকে ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 History question answer | wb class xii History question answer | hs History question answer & suggestion 2023