উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা ভারতবর্ষ গল্পের প্রশ্ন উত্তর |
আজকের এই ব্লগে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা বা উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা তৃতীয় অধ্যায় সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের লেখা ভারতবর্ষ গল্পের (WB Class 12 Bengali Question Answer & Suggestion 2023 ) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন 'ভারতবর্ষ গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো'র উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
ভারতবর্ষ গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো
ভূমিকাঃ- ছােটোগল্পের নামকরণের অনেকগুলি রীতি প্রচলিত। একটি গল্পের নামকরণ এক বা একাধিক বিষয়কে কেন্দ্র করে হতে পারে। যেমন চরিত্রপ্রধান, ঘটনাপ্রধান, বিষয়বস্তুনির্ভর, ব্যঞ্জনাপ্রধান ইত্যাদি। ভারতবর্ষ গল্পের নামকরণের ক্ষেত্রে ব্যঞ্জনাপ্রধান নামকরণের রীতি অনুসরণ করতে দেখা যায়। ভারতবর্ষ গল্পের মধ্যে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করেই নামকরণ করা হয়েছে। যদিও আমরা সেই ঘটনায় ভারতবর্ষ কথাটির কোনো উল্লেখ দেখতে পারিনা,তবুও সেই ঘটনার মধ্যে ভারতবর্ষের রূপ ফুটে উঠেছে এবং সেই রূপকে কেন্দ্র করেই গল্পের নামকরণ করা হয়েছে ভারতবর্ষ।।
ভারতবর্ষ গল্পের নামকরণের সার্থকতা আমরা তিনটি দিক থেকে বিচার করতে পারি। যথা-
প্রথমতঃ- দুরন্ত শীতে অকাল দুর্যোগে যখন চার দোকানে বসে সবাই তর্ক বিতর্ক নিয়ে ব্যস্ত ছিল, তখন হঠাৎ করেই চায়ের দোকানে এক থুত্থুরে ভিখারিনীকে আসতে দেখা যায়। চায়ের দোকানের সেই আলোচনার মধ্যে আমরা ভারতবর্ষের এক রূপ দেখতে পারি। কারণ ভারতবর্ষের প্রায় সব জায়গাতেই চায়ের দোকানে বসে আড্ডা হয়েই থাকে।
দ্বিতীয়তঃ- এই চেহারা নিয়ে বুড়ি পিচের রাস্তার উপর বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে চায়ের দোকানে এসে প্রবেশ করে। চায়ের দোকান থেকে বেরিয়ে বুড়ি বাজারের একটি বটতলায় গিয়ে আশ্রয় নেয়।। কিন্তু কিছু সময় পরেই জগা এটা বুঝতে পারে যে বুড়ি কোন সাড়াশব্দ করছে না অর্থাৎ বুড়ির নির্ঘাত মরেছে। সবাই বুড়িকে মৃত বলে ঘোষণা করার পর বুড়ির একটা ব্যবস্থা করার জন্য চৌকিদার সাহেবের কথায় বুড়িকে নদীর ধারে ফেলে দিয়ে আসা হয়।। কিন্তু কিছু সময় পরেই দেখা যায় কয়েকজন মুসলিম সেই বুড়িকে মুসলিম ধর্মাবলম্বী বলে, তার সঠিক কবরের ব্যবস্থা হয়নি বলে তারা সেই বুড়িকে আবার সেখানেই নিয়ে আসে। এবং এরপরেই হিন্দুদের সঙ্গে তাদের ঝামেলার সৃষ্টি হয়। এখানে ফুটে উঠে ভারতবর্ষের আরেক রূপ, যা অকাম্য কিন্তু বাস্তব। ভারতবর্ষে এমন একটি দেশ যেখানে বিভিন্ন ভাষা, বিভিন্ন জাতি, ধর্মের লোক বসবাস করে। কিন্তু ভারতবর্ষে ধর্মকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। এবং এখানেও সেরকমই একটি ঘটনা ঘটেছে।
তৃতীয়তঃ অল্প সময়ের মধ্যেই হিন্দু এবং মুসলিম দের মধ্যে বুড়ির মৃতদেহটিকে নিয়ে সৃষ্টি হওয়া ঝামেলা খুব বড় আকার ধারণ করতে শুরু করে। কিন্তু শেষ পর্যায়ে আশ্চর্যজনকভাবে দেখা যায়,পিচের রাস্তার ওপর বাঁশের মাচায় শুয়ে থাকা সেই বুড়ির মৃতদেহটি নড়েচড়ে ওঠে। তারপর সে বসার চেষ্টা করে বা সে উঠে বসে। এবং তারপর দাঁড়িয়ে দুই দিকে লক্ষ করে। চৌকিদার তাকে জিজ্ঞেস করে -'বুড়িমা,তুমি মরোনি!'- তখন সেই বৃদ্ধা চৌকিদারকে জবাব দেয়- মর্! মর তুই। তোর চৌদ্দগুষ্টি মরুক' বলে একটি হাস্যরস যুক্ত মন্তব্য করেন। এ রপর দুই দিকে অর্থাৎ হিন্দু এবং মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরা চেঁচিয়ে বলে ওঠে -বুড়ি, তুমি মরোনি?'- তখন এর উত্তরে বুড়ি বলে -'তোরা মর। তোরা মর মুখপোড়া।' এরপর যখন একজন বুড়িকে জিগ্যেস করে যে, বুড়ি হিন্দু নাকী মুসলমান, তখন সেই বৃদ্ধা জবাব দেয়-চোখের মাথা খেয়েছিস মিনসেরা! দেখতে পাচ্ছিস নে?.. আমি কি তা দেখতে পাচ্ছিস নে?- এই বক্তব্যের মাধ্যমে সেই বৃদ্ধা সেই ভিড়কে সরিয়ে নড়বড় করে রাস্তা দিয়ে চলে যায়। এ বক্তব্যের মাধ্যমে সেই বৃদ্ধা জাতি ধর্মের কোনো পরিচয় দেন না। অর্থাৎ বৃদ্ধা তার বক্তব্যের মাধ্যমে এটাই বলার চেষ্টা করেন যে,সে কোন জাতি ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে না। তিনি এটাই বলতে চাই যে,তিনি হলেন ভারতীয়।। এরপর বৃদ্ধা হিন্দু-মুসলিম উভয় দলের দিকে তাকিয়ে তিনি নিজের পথে চলে যান। যাওয়ার আগে তার চোখে থাকে ধর্মান্ধতার প্রতি ঘৃণা। হিন্দু অথবা মুসলমান পরিচয়ে যে নিজেকে চিহ্নিত করতে চায় না। এবং তিনি নিজের পথে চলে যাওয়ার মাধ্যমে তিনি হিন্দু ধর্ম মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের বিরোধ সেখানেই শেষ করে দিয়ে,দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে থাকা অচেতন ভারতবাসীকে জাগিয়ে তোলেন। এই তিনটি দিককে বিচার করে আমরা বলতে পারি যে, ভারতবর্ষ গল্পের নামকরণ একেবারে সার্থক হয়েছে
আশাকরি যে, দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা বা উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা তৃতীয় অধ্যায় সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের লেখা ভারতবর্ষ গল্পের ( WB Class 12 Bengali Question Answer & Suggestion 2023 ) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন 'ভারতবর্ষ গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার' তোমাদের ভালো লেগেছে। যদি তাই হয় তাহলে নিজেদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিও।।