পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের কৃষি উন্নতির প্রধান কারণগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো
উওরঃ ভারত একটি কৃষি প্রধান দেশ। ভারতের প্রায় 70 শতাংশ জনগণ কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ভারতের এত সংখ্যক জনগণ কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকায় ভারতে দিনের পর দিন কৃষির উন্নতি হয়েছে। কিন্তু ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায়ও পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার যথেষ্ট পরিমাণে কৃষির মধ্যে হয়েছে। পাঞ্জাব এবং হরিয়ানায় এতো ব্যাপক পরিমাণে কৃষি উন্নতির পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে এবং সেই সমস্ত কারণগুলোর জন্যই পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার যে উন্নতি করতে পেরেছে। যে সমস্ত কারনে পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় কৃষি উন্নতি ঘটেছে, তার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো -
পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের কৃষি উন্নতির কয়েকটি প্রধান কারণ:-
নিবিড় কৃষি পদ্ধতিঃ কৃষিজমির তুলনায় মােট জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় এখানে নিবিড় পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করা হয়। ফলে হেক্টর প্রতি কৃষি উৎপাদন এখানে অন্যান্য রাজ্য অপেক্ষা বেশি।
বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষঃ রাজ্য দুটির মােট আয়তনের প্রায় 85% কৃষিকার্যে নিযুক্ত জমিতে, রাজ্য দুটির প্রায় 70% মানুষ সারা বছর ধরে বিভিন্ন ফসলের চাষে নিযুক্ত থাকে। পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার যে সমস্ত জমি রয়েছে শুধুমাত্র চাষ করা হয় না বছরের বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করা হয়। যার ফলে এখানকার ফসল উৎপাদনের পরিমাণ অনেক বেশি।
উন্নত জলসেচঃ কৃষি জমিতে যদি সঠিক জলের জোগান না থাকে অথবা জল সেচের ব্যবস্থা না থাকে তাহলে অনেক সময় জলের অভাবে অনেক ফসল নষ্ট হয়ে যায় বা জমিতে ফসল উৎপাদন কম হয়। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হয় বলে জলসেচ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানাে হয়েছে। এখানে অধিকাংশ সেচ খালের সাহায্যে জলসেচ করা হয়। এখানকার প্রধান সেচ খালগুলি হল- যমুনা খাল,ভাকরা খাল, বিস্ত, দোয়াব খাল প্রভৃতি। এসব খাল থেকে পাঞ্জাব ও হরিয়ানার বিভিন্ন কৃষি জমিতে জল সেচের এত সুবিধা থাকার জন্যেও এখানকার কৃষি যথেষ্ট উন্নত ।
সবুজ বিপ্লবঃ
পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা রাজ্যের কৃষি উন্নতির সবচাইতে বড় কারণ হল সবুজ বিপ্লব। 1966 সাল থেকে পাঞ্জাব-হরিয়ানায় উচ্চফলনশীল গমের বীজ ব্যবহার করে এবং কৃষিতে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা (রাসায়নিক সার, কীটনাশক, উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি প্রভৃতি ব্যবহার) গ্রহণ করে গম ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়। যার ধারাবাহিকতা এখনও চলছে।
আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহারঃ
কৃষিকাজে পশুশক্তি ব্যবহার অথবা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শ্রমনির্ভর হলে তা অনেক ক্ষেত্রেই কৃষি উৎপাদনের বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সঠিক সময় ফসল রোপন করা এবং ফসল কেটে ঘরে তোলার ক্ষেত্রে যদি পশুশক্তি এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষকে কাজে লাগানো হয় তাহলে সেগুলো সময় সাপেক্ষ হয়ে দাড়ায়। কারণ যন্ত্রের তুলনায় মানুষ এবং পশুর কার্য ক্ষমতা অনেকটাই কম। কিন্তু বর্তমানে পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় শ্রমশক্তির সঙ্গে অধিকমাত্রায় আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে কৃষি উৎপাদনের বৃদ্ধি ঘটছে।
মূলধনঃ পাঞ্জাব হরিয়ানা রাজ্যের কৃষকদের আর্থিক অবস্থা খুব ভালো হওয়ায় আর্থিক দিক থেকে খুব স্বচ্ছল হওয়ার কারণে তারা কৃষিক্ষেত্রে সেই মূলধন ব্যবহার করে উচ্চফলনশীল ফসলের বীজ,উন্নত মাণের রাসায়নিক সার,কীটনাশক আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারেন। এবং এই সমস্ত কিছু ব্যবহার করার ফরে তারা কৃষিতে যথেষ্ট পরিমাণে উন্নতি করতে পেরেছেন।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ কোনো অঞ্চলের কৃষি উন্নতির ক্ষেত্রে সেই বছরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা অন্যান্য কৃষি অঞ্চলের তুলনায় অনেকটাই ভালো হওয়ায় তা কৃষি উন্নতির ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো বলে, বিভিন্ন কৃষিজ যন্ত্রপাতি আমদানি করা,বিভিন্ন কৃষি পণ্য বাজারে সরবরাহ করা ইত্যাদির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা রয়েছে।।মূলত উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও আরও নানা কারণে পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার রাজ্যে কৃষিতে যথেষ্ট পরিমাণে উন্নতি লাভ করতে পেরেছে এবং ভবিষ্যতে হয়তো তারা আরও উন্নতি করবে।।