বহুমুখী নদী পরিকল্পনা কাকে বলে? বহুমুখী নদী পরিকল্পনার উদ্দেশ্য গুলি বা গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো।।
বহুমুখী নদী পরিকল্পনা কাকে বলে?
উওরঃ যে পরিকল্পনার মাধ্যমে কোনো একটি নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করার মাধ্যমে সেই নদী থেকে জল সেচ করা বন্যা নিয়ন্ত্রণ,জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, পর্যটন, নৌ-পরিবহন,পানীয় জলের যোগান,শিল্পে জলের যোগান ইত্যাদি বহু মুখী উদ্দেশ্য সাধন করা হয়, সেই পরিকল্পনাকে বহুমুখী নদী পরিকল্পনা বলা হয়।। যেমন ভারতের একটি বিখ্যাত বহুমুখী পরিকল্পনা হলো " দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন "।
বহুমুখী নদী পরিকল্পনার উদ্দেশ্য বা গুরুত্ব : -
বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্দেশ্য সাধন করা হয়। যেমন -
বন্যা নিয়ন্ত্রণঃ বহুমুখী নদী পরিকল্পনার মাধ্যমে কোনো নদীর উপর বাঁধ দিয়ে সেই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ হয়। কোনো বন্যার জন্য যদি সেখানকার স্থানীয় অঞ্চলের মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে বাধ দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করে সেই অঞ্চলের মানুষদের বিভিন্ন ভাবে উপকার করা হয়।।
জল সংরক্ষণঃ বতর্মান সময় জলের অভাব কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয়। তাই ভবিষ্যতে এই জল সংকট থেকে কিছুটা রক্ষা পেতে জল সংরক্ষণ প্রয়োজন। অনেক জায়গায় এই বহুমুখী নদী পরিকল্পনার মাধ্যমে স্থানীয় নদীতে বর্ষাকালে যে অতিরিক্ত জল হয়, নদীর সেই অতিরিক্ত জলকে বিশেষভাবে নদীসংলগ্ন বিশাল জলাধারে সঞ্চিত করা হয়। এর ফলে গরমকালে সেই অঞ্চলে যে জলের অভাব হয়, তার থেকে কিছুটা হলেও সেই অঞ্চলের মানুষকে রক্ষা করা হয়।।
কৃষির উন্নতিঃ অনেক অঞ্চলে বিভিন্ন ঋতুতে জমিতে সেচের পর্যাপ্ত জল পাওয়া যায় না। যার ফলে ব্যাপক পরিমাণে কৃষির ক্ষতি হয়। কৃষিতে জলের অভাব দূর করতে বহুমুখী পরিকল্পনা বিশেষভাবে কার্যকর হয়। কারণ বহুমুখী নদী পরিকল্পনার মাধ্যমে বর্ষাকালের যে অতিরিক্ত জল বিশেষভাবে সংরক্ষণ করা হয়, তা পরবর্তীকালে জলাধারে সঞ্চিত সেই জলকে খালের মাধ্যমে কৃষি জমিতে ব্যবহার করা হয়। যার ফলে যেসব ফসল পর্যাপ্ত পরিমাণ জলের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো, সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার থেকে রক্ষা পায়।।
মৎস্য চাষঃ বহুমুখী নদী পরিকল্পনা বর্ষাকালে অতিরিক্ত জলকে বিশেষভাবে জলাধার সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীকালে সেই জলকে মৎস্য চাষে ব্যবহার করা হয়। নদীর যে অতিরিক্ত জল সংরক্ষণ করা হয়, সেগুলোতে পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ করা হয়। ফলে সেই অঞ্চলের লোকেদের অর্থ উপার্জন করে আর্থিক দিক থেকে উন্নতি লাভ করার সুযোগ করে দেওয়া হয়।।
পানীয় জলঃ বহুমুখী নদী পরিকল্পনার মাধ্যমে নদীর অতিরিক্ত জলকে বিশেষভাবে জলাধার সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীকালে সেই জলকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ করে বিভিন্ন জায়গায় অর্থাৎ যে সমস্ত অঞ্চলে জলের অভাব বা জল সরবরাহ করা প্রয়োজন, সেই সমস্ত অঞ্চলে জল সরবরাহ করে পানীয় জলের চাহিদা মেটানো হয়। এবং এরকম ভাবেই বহুমুখী নদী পরিকল্পনা একাধিক উদ্দেশ্য সাধন করার মাধ্যমে জনগণের উপকার করে থাকে।।।