আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় অধ্যায়ের ( WB Class 11 history chapter 2 question answers in bengali ) আদিম মানব থেকে প্রাচীন সভ্যতা সমূহের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ( Class 11 history chapter 2 questions and answers ) "মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ গুলি আলোচনা করো। মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের ক্ষেত্রে সম্রাট অশোক কতটা দায়ী ছিলেন?" প্রশ্নটির উওর ক্লাস 11 ইতিহাস নোট হিসাবে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
প্রশ্নঃ মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ গুলি আলোচনা করো। মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের ক্ষেত্রে সম্রাট অশোক কতটা দায়ী ছিলেন?
ভূমিকাঃ ভারতবর্ষের ইতিহাসে যে সমস্ত সাম্রাজ্য ছিল, তার মধ্যে মৌর্য বংশ ছিল উল্লেখযোগ্য। মৌর্য বংশ একসময় নামকরা থাকলেও সম্রাট অশোকের সময়কাল থেকে মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিপত্তি কমতে থাকে এবং এক সময় নানা কারনে মৌর্য বংশের পতন ঘটে। মৌর্য বংশের পতনের পেছনে নানা কারণ ছিল। এই কারণগুলি বিশ্লেষণ আমরা মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণগুলি জানতে পারি যেমন-
ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের বিরোধিতা :
• পশুবলির বিরুদ্ধে অশোক যে নির্দেশ দেন, তা ব্রাহ্মণদের মনে অসন্তোষ সৃষ্টি করে।
• অশোক ধর্মমহাপাত্রের পদ সৃষ্টি করে ব্রাহ্মণদের বিভিন্ন সুবিধায় হস্তক্ষেপ করেছিলেন।
• অশোক দণ্ড সমতা ও ব্যবহার সমতা চালু করে ব্রাহ্মণদের বিচার ও আইনের ক্ষেত্রের অধিকার ভোগতে | লোপ করেছিলেন।
• পুষ্যমিত্র শুঙ্গের বিদ্রোহের পশ্চাতে ব্রাহ্মণদের যড়যন্ত্র ছিল, যার ফলে শেষ মৌর্য সম্রাট বৃহদ্রথ নিহত হন। সুতরাং পণ্ডি শাস্ত্রী বলেন যে উপরিউক্ত কারণগুলির জন্যই মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিল।
সাম্রাজ্যের বিশালতা ও প্রশাসনিক দুর্বলতা :-
মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের একটি অন্যতম কারণ হল এর বিশালতা। মৌর্য সাম্রাজ্যের বিভিন্ন সম্রাট সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে তাঁদের সাম্রাজ্য বিস্তারে উদ্যোগী হয়েছিলেন এবং তারা তাদের উদ্দেশ্য সফলও হয়েছিলেন। যার ফলে মৌর্য সাম্রাজ্যের আয়তন একসময় বিশাল আকার ধারণ করেছিল। এত বিশাল আকারের সাম্রাজ্য সঠিকভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাবেই নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো।
সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুদৃঢ় না থাকায় শাসনকার্য পরিচালনায় সম্রাট বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তাই কেন্দ্রীয় রাজশক্তির ক্ষমতাও খর্ব হয়েছিল। রোমিলা থাপারের মতে, মৌর্য শাসন ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত আমলাগণ শুধুমাত্র রাজার নির্দেশেই চলতো। অশোকের পরবর্তীকালে কোন যোগ্য রাজা না থাকায় মৌর্য সাম্রাজ্য দ্রুত ভেঙে পড়েছিল।
প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের অত্যাচার :-
সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব নির্ভর করতো সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ জনগণের সমর্থনের ওপরেই। প্রথম দিকে মৌর্য সাম্রাজ্য জনগণের সমর্থন লাভ করলেও একসময় মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতি জনগণের সমর্থন ছিল না। কারণ সেই সময়ে রাজতন্ত্র স্থায়িত্ব লাভ করতো রাজা বা সম্রাটের ব্যক্তিত্বের উপর। অশোক শাসন সংক্রান্ত বিষয়ে কর্মচারিদের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। এর ফলে প্রাদেশিক শাসকগণ স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছিলেন এবং তারা জনসাধারণের উপর নির্যাতন শুরু করেছিলেন। অশোকের শিলালিপিতে এই ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়। অশোকের মৃত্যুর পরবর্তীকালে এই অত্যাচার চরমে উঠেছিল, ফলে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল।
স্বতন্ত্র জাতিগুলির বিদ্রোহ :-
নীতির দিক থেকে সম্রাট অশোর তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত স্বতন্ত্র জাতি ও উপজাতিগুলির স্বাতন্ত্র্য এবং সমতা স্বীকার করেছিলেন। শুধু তাই নয় তিনি এই সমস্ত জাতির সার্বভৌম এবং স্বাধীনতা মেনে নিয়েছিলেন। তাঁর স্বায়ওশাসিত জাতিগুলি হল, কম্বোজ, পুলীন্দ, ভোজ, রাষ্ট্রীক, অন্ধ্র, সত্যপুত্র, কেবলপুত্র, চোল ও পাও অশোকের মৃত্যুর পরবর্তীকালে এই সমস্ত জাতিগুলি শক্তিশালী হয়ে। এবং মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনকে ত্বরান্বিত করেছিল।
অশোকের অহিংস নীতির ফলঃ-
ডঃ রায় চৌধুরী মনে করেন, অশোকের অহিংস নীতি বা ধর্মবিজয় নীতি মৌর্য সাম্রাজ্যকে পতনোন্মুখ করে তুলেছিল। এই প্রসঙ্গে তিনি যে যুক্তিগুলি প্রকাশ করেছেন তা হল,
প্রথমতঃ অশোক অহিংস নীতি প্রচলন করে মৌর্য সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করেছিলেন। এইজন্য প্রাদেশিক শাসকগণ স্বেচ্ছাচারী ও বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। সম্রাট অশোক এবং তাঁর বংশধরগণ এই বিদ্রোহ দমন করতে পারেননি।
দ্বিতীয়তঃ ডঃ চৌধুরী এই প্রত্যয় প্রকাশ করেন যে, অহিংস নীতি প্রনয়ণ করার ফলে মৌর্য সাম্রাজ্যের সামগ্রিক শক্তি দুর্বল হয়ে ওঠে। যে সম্রাট বিহার যাত্রার স্থলে ধর্মযাত্রা প্রবর্তন করেন; যিনি ভেরী ঘোষকে ধৰ্ম্ম ঘোষে পরিণত করেন, তাঁর নীতির ফলে সেনাদল যে দুর্বল হয়ে পড়বে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার ডঃ রায় চৌধুরীর উপরিউক্ত যুক্তিগুলি খণ্ডন করেছিলেন। তিনি মনে করেন অশোকের অহিংস নীতি মৌর্য সাম্রাজ্যকে কখনই পতনের মুখে ঠেলে দেয় নি। তিনি বলেন যে, সম্রাট অশোককে যতটা শান্তিবাদী সম্রাটরূপে অভিধা প্রকাশ করা হয়, তিনি ঠিক ততটা শান্তিবাদী সম্রাট ছিলেন না। আদপে তিনি অহিংসবাদীও ছিলেন না।
বৈদেশিক আক্রমণঃ
এই সমস্ত আভ্যন্তরীণ কারণেই মৌর্য সাম্রাজ্য তথা ভারতবর্ষের সর্বপ্রথম ঐতিহাসিক সাম্রাজ্য ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছিল। এই সময় ব্যাকট্রিয় গ্রীকগ উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছিল। দিমিত্র বা ডিমিট্রিয়াস পাটলিপুত্র পর্যন্ত তাঁর বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ১৮৭ বা ১৮৫ অব্দে মৌর্য রাজা বৃহদ্রথকে হত্যা করে তাঁর ব্রাহ্মণ সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গ মৌর্য সিংহাসন দখল করেন।