আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় অধ্যায়ের ( WB Class 11 history chapter 2 question answers in bengali ) আদিম মানব থেকে প্রাচীন সভ্যতা সমূহের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ( Class 11 history chapter 2 questions and answers ) "হরপ্পা নগর পরিকল্পনার আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা কর। সিন্ধুসভ্যতায় নগর পরিকল্পনা কিরূপ ছিল ? " প্রশ্নটির উওর ক্লাস 11 ইতিহাস নোট হিসাবে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
প্রঃ- হরপ্পা নগর পরিকল্পনার আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা কর। সিন্ধুসভ্যতায় নগর পরিকল্পনা কিরূপ ছিল ?
উঃ-
সূচনাঃ- একথা সত্য যে, সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে। ঐ বছর রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও দয়ারাম সাহানী বর্তমানে পাকিস্তানের অন্তর্গত সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলার মহেঞ্জোদড়ো এবং পাঞ্জাবের মণ্টগোমারি জেলার হরপ্পায় এক প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কার করেন। সিন্ধু নদের উপত্যকায় গড়ে উঠেছিল বলে প্রথমে এই সভ্যতা সিন্ধু সভ্যতা নামে অভিহিত হয়। পরবর্তীকালে সিন্ধু উপত্যকার বাইরে বহু স্থানে এই সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কৃত হওয়ায় বর্তমানে এই সভ্যতাকে হরপ্পা সভ্যতা বলা হয়। কারণ মহেঞ্জোদড়ো অপেক্ষা হরপ্পা সংলগ্ন অঞ্চলে এর ব্যাপ্তি ছিল বেশি এবং হরপ্পায় আবিষ্কৃত নিদর্শনাদি অধিকতর প্রাচীন বলে পণ্ডিতেরা মনে করেন। সুপ্রাচীন এই সভ্যতা আবিষ্কারের ফলে ভারত বিশ্বের অন্যান্য প্রাচীন। সভ্যতার সমমর্যাদা লাভ করেছে।
হরপ্পা সভ্যতার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য :
নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা :-
সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতা ছিল মূলতঃ নগর সভ্যতা। এখানকার নগর পরিকল্পনা আধুনিক নগর নির্মাণ পরিকল্পনার সঙ্গে এতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ যে, ভাবলে অবাক হতে হয়। আধুনিক শহরের রাস্তাঘাটের মত সিন্ধু অঞ্চলের শহরগুলিতে রাস্তাঘাটের ব্যবস্থা ছিল। ছোট ছোট গলি দিয়ে ঘরবাড়িগুলি ছিল একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন। ঘরগুলি ছিল ইটের। ছোট বড় নানাধরণের ঘরবাড়ি ছিল। দোতলা ঘরও ছিল। উপরে ওঠার জন্য সরু সিঁড়ির ব্যবস্থা ছিল।
জল নিষ্কাশন, স্নানাগারঃ-
আমরা জানি জল নিষ্কাশনের জন্য ছিল নর্দমার ব্যবস্থা। উপর থেকে নিচে জল পড়ার জন্য ব্যবস্থা ছিল। নিচে নোংড়া জল ধরার জন্য গামলা বসানো থাকত। মাঝে মাঝেই পোঁড়া ইটের তৈরী কুঁয়োর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শস্যভাণ্ডার, সভাগৃহ বা প্রার্থনা গৃহ এসব ছিল বলেও মনে হয়।
মহেঞ্জোদাড়োতে ১৯,৪৪০ বর্গফুট আয়তনের একটি বিরাট স্নানাগার পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৩০ ফুট দীর্ঘ, ৩০ ফুট প্রশস্ত এবং ৮ ফুট গভীর একটি জলাশয় ছিল। এ জলাশয় কি জলকেলির জন্য অথবা কোন ধর্মীয় উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল তা এখনো বলা যায় না। শহর খুব ঘন জনবসতি পূর্ণ ছিল। কিন্তু কোথাও আধুনিক শহরের মত পার্কের ব্যবস্থা ছিল না।
গৃহস্থালীঃ-
সিন্ধু অঞ্চলের শহরগুলিতে বিশেষ করে মহেঞ্জোদড়ো শহরে রাস্তাঘাট, নর্দমা, কাঁচা পায়খানা ইত্যাদির ব্যবস্থা আধুনিক শহরের মত থাকলেও এবং ঘরবাড়িগুলিতে সুন্দর সুন্দর দরজা জানলার ব্যবস্থা করা হলেও কারুকার্য তেমন নেই।
একথা ঠিক যে, মহেঞ্জোদড়োর রাজমিস্ত্রীরা ‘বিলান’ তৈরী করতে জানত বলে মনে হয় না। তবে সর্বত্রই প্রাচীরের ব্যবস্থা ছিল। এদের এই প্রাচীর থেকেই সম্ভবতঃ ‘দড়ো’ কথার উৎপত্তি। অনেকে মনে করেন ‘দৃঢ়’ থেকেই ‘দড়ো’ শব্দটি এসেছে। অর্থাৎ যেসব শহরে দৃঢ় সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল সেই সব শহরই ‘দড়ো' নামে পরিচিত।
মন্দির বা দেবালয়ের অনস্তিত্ব :-
হরপ্পা-মহেঞ্জোদড়োর নগরজীবনের আর এক বৈশিষ্ট্য এই যে, কোথাও কোনো মন্দির বা দেবালয়ের ভগ্নাবশেষ আবিষ্কৃত হয়নি। দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গেলেও মন্দির ছিল না বলেই মনে য়। এ থেকে অধ্যাপক রামশরণ শর্মা অনুমান করেন যে, হরপ্পা সভ্যতায় রোহিত শ্রেণীর প্রাধান্য ছিল না।