আজের এই পোস্টের মাধ্যমে নবম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় উনবিংশ শতকের ইউরোপ রাজতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সংঘাত (WBBSE Class 9 History Question Answer & Notes in Bengali ) অধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ 4 মার্কের প্রশ্ন 'ভিয়েনা সম্মেলন বলতে কি বোঝো? ভিয়েনা সম্মেলন এর লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো' এর উওর ( WBBSE Class 9 Question Answer & Suggestion 2023 ) তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। আর আমরা প্রতিদিন তোমাদের জন্য নোটস শেয়ার করে যাবো। তাই তোমরা আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিদিন ভিজিট করতে থাকো।।
প্রশ্নঃ ভিয়েনা সম্মেলন কি? ভিয়েনা সম্মেলনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য গুলি কি ছিল?
উওরঃ নেপোলিয়ন বোনাপার্টের পতনের পর ইউরোপের বিজয়ী রাষ্ট্রনেতাগন ইউরোপের পুনর্গঠন এবং পুনর্বণ্টনের জন্য ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দের ১ লা নভেম্বর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে এক সম্মেলনের আহ্বান জানান যা ভিয়েনা সম্মেলন নামে পরিচিত।।
ইউরোপের কূটনৈতিক সম্মেলন গুলির মধ্যে ভিয়েনা সম্মেলন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করলেও ভিয়েনা সম্মেলন মূলত পরিচালিত হয়েছিল রাশিয়ার প্রথম আলেকজান্ডারের, অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর প্রিন্স মেটারনিক, রাজা তৃতীয় ফ্রেডারিক ও মন্ত্রী হের্ডেনবের্গ, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ক্যাসালরি এবং ডিউক অব ওয়েলিংটন এবং ফ্রান্সের মুখপাত্র তালেরা নেতৃত্বে।।
এবং এই সম্মেলনে ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী রাষ্ট্র গুলির প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকলেও সম্মেলনের সমস্ত কার্যাবলী পরিচালিত হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রিন্স মেটারনিকের তত্ত্বাবধানেই।
ভিয়েনা সম্মেলনের বিভিন্ন লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যঃ
1815 খ্রিষ্টাব্দের ভিয়েনা যে ভিয়েনা সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছিল, সেই সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছিল মূলত একাধিক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। যেমন-
ইউরোপের পুনর্গঠনঃ
ভিয়েনা সম্মেলন আহবান করার প্রধান লক্ষ্য ছিল ইউরোপের পুনর্গঠন করা। নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সাম্রাজ্য বিস্তার নীতির মাধ্যমে ইউরোপের যে রাজনৈতিক বিন্যাসের পরিবর্তন ঘটেছিল,সেই পরিবর্তনকে ন্যায় এবং সততার মাধ্যমে পুনরায় ঠিক করে জার্মানি,পোল্যান্ড, রাইন, ইটালি প্রভৃতি অঞ্চলের ভবিষ্যতে নিয়ন্ত্রণ করা। এছাড়াও বিভিন্ন যুদ্ধের মাধ্যমে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট যে সমস্ত রাজবংশ গুলিকে ইউরোপ থেকে বিতাড়িত করেছিলেন, সেই রাজ্যগুলিতে নিজেদের রাজ্য পূনরায় ফিরিয়ে দিয়ে সেখানে তাদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা।।
শক্তিসাম্য প্রতিষ্ঠাঃ
নেপোলিয়ন বোনাপার্টের পতনের পর ভিয়েনা সম্মেলনের একটি লক্ষ্য এটাও ছিল যে, বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে নেপোলিয়ান বোনাপার্ট এর মত ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো সম্রাটের আবির্ভাব না হয় কিংবা ফ্রান্সের যাতে আবারও শক্তিশালী হয়ে উঠতে না পারে তার ব্যবস্থা করা।।
ক্ষতিপূরণ নীতিঃ
যে সমস্ত রাষ্ট্রগুলির নেপোলিয়নের বিপক্ষে ছিল এবং নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে করে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল, সে দেশগুলোকে সে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাপনা করা ছিল ভিয়েনা সম্মেলনের একটি প্রধান উদ্দেশ্য। ক্ষতিপূরণ নীতির মাধ্যমে ভিয়েনা সম্মেলন ইংল্যান্ড, রাশিয়া প্রাশিয়া, সুইডেন এবং অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও আরও একাধিক রাষ্ট্রকে তাদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে ক্ষতিপূরণ নীতি সফল করে।।
শান্তি প্রতিষ্ঠাঃ
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এর সঙ্গে হওয়া বিভিন্ন যুদ্ধে ইউরোপের যে শান্তি ভঙ্গ হয়েছিল, সেই শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য এবং ইউরোপের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করাই ছিল ভিয়েনা সম্মেলনের একটি অন্যতম লক্ষ্য।
চুক্তির মর্যাদাঃ
নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সাম্রাজ্যের পতনের পূর্বে বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলি নেপোলিয়নকে পরাজিত করার জন্য গোপনে একে অপরের সঙ্গে যে সমস্ত গোপন চুক্তি গুলি করেছিল, সেই চুক্তির মর্যাদা রক্ষা করাই ছিল এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য।।
সবশেষে বলা যায়,ভিয়েনা সম্মেলন সমস্ত উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আহ্বান করা হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে অনেকগুলি পরবর্তীতে সফল হতে দেখা গিয়েছিল।।
Tags :