ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী বা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কাদের বলা হত? সমাজ সংস্কারে ইয়ং বেঙ্গল দলের ভূমিকা
সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা প্রশ্ন উওর |
Table Of Contents
• ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী বা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কাদের বলা হত?
• সমাজ সংস্কারে ইয়ং বেঙ্গল দলের ভূমিকা
• নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর বা ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা
• নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর বা ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর কয়েকজন সদস্য
• নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর বা ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর কার্যাবলী
• নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর বা ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য
• সমাজ সংস্কার মূলক আন্দোলন নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর বিভিন্ন কার্যকলাপ
• নব্যবঙ্গ আন্দোলনের অবসান
• নব্যবঙ্গ আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ
• মূল্যায়ন
• সমাজ সংস্কারে ইয়ং বেঙ্গল দলের ভূমিকা
• নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর বা ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা
• নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর বা ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর কয়েকজন সদস্য
• নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর বা ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর কার্যাবলী
• নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর বা ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য
• সমাজ সংস্কার মূলক আন্দোলন নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর বিভিন্ন কার্যকলাপ
• নব্যবঙ্গ আন্দোলনের অবসান
• নব্যবঙ্গ আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ
• মূল্যায়ন
ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী বা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কাদের বলা হত? সমাজ সংস্কারে ইয়ং বেঙ্গল দলের ভূমিকা
নব্যবঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল কাদের বলা হত?
ভূমিকা : উনিশ শতকে বাংলায় ঔপনিবেশিক শাসনে বাংলার সমাজে বিশেষ করে হিন্দু সমাজে বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস,কুপ্রথা এবং ধর্মীয় গোড়ামী প্রচলিত ছিল। উনিশ শতকে বাংলার সমাজেদ বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই আধুনিক চিন্তাধারা বা যুক্তিবাদী চিন্তা ধারা ছিল না। যার ফলে হিন্দু সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস ও কূপ্রথা গুলি হিন্দু সমাজকে পেয়ে বসেছিল। সেই সময় হিন্দু কলেজের তরুন অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও হিন্দু সমাজ থেকে সেই সমস্ত কূপ্রথা এবং অন্ধবিশ্বাস দূর করে সমাজে যুক্তিবাদী এবং আধুনিক চিন্তাধারা প্রসারের উদ্দেশ্যে,তার কয়েক জন অনুগামীদের নিয়ে যে সমাজ সংস্কারমূলক আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তাই ছিল ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলন বা নব্যবঙ্গ আন্দোলন নামে পরিচিত। এবং হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও এবং তার কয়েকজন অনুগামীদের বলা হত ইয়ং বেঙ্গল অথবা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী।।
নব্য বঙ্গ আন্দোলন অথবা ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্য ছিল। যেমন -
1- বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সামাজিক কূপ্রথা এবং অন্ধবিশ্বাস গুলি বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন চালিয়ে সমাজ তা থেকে দূর করা। এবং সমাজে আধুনিক এবং যুক্তিবাদী চিন্তাধারার প্রসার ঘটিয়ে, সমাজকে আধুনিক করে তোলা।
2 - ছাত্র সমাজের মধ্যে আধুনিক শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে তাদের মধ্যে সেই সমস্ত সামাজিক এবং ধর্মীয় কুপ্রথার প্রভাব দূর করে তাদের বিজ্ঞান মনষ্ক করে তোলা।
3 - সমাজের নারী শিক্ষার অধিকার আদায় করা এবং নারীদের শিক্ষার প্রসার ঘটানো।
4 - দেশীয় সংবাদপত্র গুলির স্বাধীনভাবে লেখা প্রকাশের অধিকার আদায় করার উদ্দেশ্য আন্দোলন করা ইত্যাদি।।
ইয়ংবেঙ্গল অথবা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর কয়েকজন উল্লেখযোগ্য সদস্য :
নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী অথবা ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠীর প্রধান ছিলেন হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও। তাকে ছাড়াও নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর কিছু উল্লেখযোগ্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন - রামগোপাল ঘোষ,কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রসিককৃষ্ণ মল্লিক,রামতনু লাহিড়ী, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
সমাজ সংস্কারে নব্য বঙ্গ গোষ্ঠীর ভূমিকা অথবা সমাজ সংস্কারে ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠীর ভূমিকা :
হিন্দু কলেজের অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও হিন্দু সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সামাজিক বিভিন্ন কূপ্রথা এবং অন্ধবিশ্বাস যেমন- জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা এবং বিভিন্ন ধর্মীয় রীতিনীতি ইত্যাদির বিরুদ্ধে তাঁর ছাত্র মন্ডলীদের নিয়ে তাদের ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠী ভূমিকা অথবা সমাজ সংস্কারে নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর ভূমিকা ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। যেই সময়টা জুড়ে নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলন চলদছিল, সেই সময়ের সবটা জুড়েই তারা সমাজ সংস্কারের জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে গিয়েছিলেন। যেমন -
◆ অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন গঠন : নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর অথবা ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠীর সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল 1827 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত তাদের অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন। নববঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যরা মূলত অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন গঠনের মাধ্যমে,,তারা সমাজে প্রচলিত অস্পৃশ্যতা, জাতিভেদ প্রথা,সতীদাহ প্রথা, মূর্তিপূজা ইত্যাদি কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে, সমাজে আধুনিক যুক্তিবাদী ভাবধারা প্রচার করার চেষ্টা করতেন।।
◆ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশ : নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যরা বা ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠী সদস্যরা সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সামাজিক প্রথা গুলির বিরুদ্ধে লেখালেখির জন্য বেশ কিছু পত্র-পত্রিকার সাহায্য নিয়েছিলেন। যেমন- এথেনিয়াম, পার্থেনন, পার্সিকিউটেড,বেঙ্গল হরকরা ক্যালাইডোস্কোপ প্রভৃতি পত্রিকায় বিভিন্ন ধরনের লেখা প্রকাশ করতেন।। নব বঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যরা এথেনিয়াম, পার্থেনন, পার্সিকিউটেড,বেঙ্গল হরকরা প্রভৃতি পত্রিকায় শিক্ষা নারী স্বাধীনতা এবং বিভিন্ন সামাজিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতেন। এবং অন্যদিকে ক্যালাইডোস্কোপ পত্রিকার ইংরেজ শাসন এবং ইংরেজদের বিভিন্ন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন লেখনি প্রকাশ করেছিলেন।
নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলনের অবসান :
নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদী আন্দোলন শুরু করেছিল বলে, তারা খুব শীঘ্রই রক্ষণশীল হিন্দুসমাজের কাছে একপ্রকার পথের কাটা হয়ে দাড়ায়। নব্যবঙ্গ আন্দোলন শুরু হয়েছিল সমাজকল্যাণে। কিন্তু সমাজকল্যাণে শুরু হওয়া এই আন্দোলন বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। 1831 খ্রিস্টাব্দে নব্যবঙ্গ আন্দোলনের প্রাণপুরুষ হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও মৃত্যুর পর,এই আন্দোলন ধীরে ধীরে তাদের শক্তি হারিয়ে ফেলে। এবং একসময় নব্যবঙ্গ আন্দোলন ব্যর্থ হয়।
নব্যবঙ্গ আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ : নব্য বঙ্গ আন্দোলনের ব্যর্থতার পেছনে একাধিক কারণ লুকিয়ে ছিল। যেমন -
• প্রথমত নব্যবঙ্গ আন্দোলন হিন্দু সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন সামাজিক এবং ধর্মীয় প্রথাগুলির বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন করেছিল বলে, সাধারণ হিন্দু সমাজের কোনো সমর্থন তারা পায়নি।
• নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলন শুধুমাত্র হিন্দু সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক কূপ্রথার বিরুদ্ধে। এবং কিছু ক্ষেত্রে নারীদের স্বার্থেও তারা কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। কিন্তু নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যরা দেশের সাধারণ শ্রমিক শ্রেণী ও কৃষক শ্রেণীর জন্য কোনো রকম কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করেনি। যার ফলে তারা সাধারণ শ্রমিক শ্রেণী এবং কৃষক শ্রেণীর কোনোরকম কোন সমর্থন লাভ করেনি।
• নব্যবঙ্গ আন্দোলন ছিল মূলত শহরকেন্দ্রিক। শহরের সীমানা ছাড়িয়ে এই আন্দোলন সাধারণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েনি।
• নববঙ্গ আন্দোলন কারীদের,, আন্দোলনের ভীত ছিল খুবই দুর্বল।
উপরিক্ত কারণ সহ 1831 খ্রিস্টাব্দে হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর মৃত্যুর পরেই, নব্যবঙ্গ আন্দোলন ধীরে ধীরে ব্যর্থতার দিকে এগিয়ে দিতে শুরু করে।
নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর কার্যাবলী মূল্যায়ন : নব্য বঙ্গ গোষ্ঠী বিভিন্ন কার্যকলাপের সমালোচনা করা হয়। যেমন -
• ঐতিহাসিক ডেভিড কফ নব্য গোষ্ঠীর সদস্যদের ভ্রান্ত পুথিপড়া বুদ্ধিজীবী বলে সমালোচনা করেছেন।
• অনেকে আবার নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যদের উশৃংখল বা কালাপাহাড় বলে অভিহিত করেন।
কিন্তু সবকিছুর পরেও একথা কখনোই অস্বীকার করা যায় না যে, সমাজ সংস্কারে নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী দের ভূমিকা ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারাই সর্বপ্রথম হিন্দু সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস এবং কূপ্রথা গুলির বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু করেছিলেন। ফলে তাদের জন্যেই সমাজের একটা বড় অংশের মধ্যে আধুনিক ভাবনাচিন্তার প্রসার ঘটেছিল।।
Tags :