সোমপ্রকাশ পত্রিকা | ব্রিটিশ সরকার কেন সোমপ্রকাশ পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল? | সোমপ্রকাশ পত্রিকার বিষয়বস্তু
আজকের এই ব্লগ পোষ্টের মাধ্যমে আমরা ক্লাস টেনের ইতিহাস প্রথম অধ্যায় ইতিহাসের ধারণা এর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় " সোমপ্রকাশ পত্রিকা | ব্রিটিশ সরকার কেন সোমপ্রকাশ পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল? | সোমপ্রকাশ পত্রিকার বিষয়বস্তু কী ছিল " ইত্যাদি বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করবো। এবং " সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি " সম্পর্কে পরীক্ষায় যত ধরনের ছোট,বড় প্রশ্ন আসে,সেই সমস্ত ধরনের প্রশ্নের উত্তর এই পোস্টের মধ্যেই তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
Table Of Contents
• সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশ করেন কে
• সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি প্রথম কবে প্রকাশিত হয়েছিল?
• ভারতের প্রথম বাংলা রাজনৈতিক পত্রিকা কোনটি?
• সোমপ্রকাশ পত্রিকাটিতে কি কি বিষয় আলোচনা করা হতো?
• ব্রিটিশ সরকার কেন সোমপ্রকাশ পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল?
• সোমপ্রকাশ পত্রিকা কেন বন্ধ হয়েছিল?
• সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি প্রথম কবে প্রকাশিত হয়েছিল?
• ভারতের প্রথম বাংলা রাজনৈতিক পত্রিকা কোনটি?
• সোমপ্রকাশ পত্রিকাটিতে কি কি বিষয় আলোচনা করা হতো?
• ব্রিটিশ সরকার কেন সোমপ্রকাশ পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল?
• সোমপ্রকাশ পত্রিকা কেন বন্ধ হয়েছিল?
সোমপ্রকাশ পত্রিকা | ব্রিটিশ সরকার কেন সোমপ্রকাশ পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল? | সোমপ্রকাশ পত্রিকার বিষয়বস্তু
ভূমিকা : উনিশ শতকে বাংলায় যে সমস্ত পত্রপত্রিকায প্রকাশিত হতো,তার মধ্যে অন্যতম ছিল 1858 খ্রিস্টাব্দের 15 ই নভেম্বর, দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ সম্পাদনায় প্রকাশিত " সোমপ্রকাশ "। সোমপ্রকাশ পত্রিকাটির সম্পাদক দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ মূলত বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর অনুপ্রেরণায় পত্রিকাটির প্রকাশনা শুরু করেছিলেন। সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি ছিল একটি বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা। মূলত সোমপ্রকাশ ই ছিল বাংলার প্রথম রাজনৈতিক পত্রিকা, যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয় গুলি আলোচনা করা হতো।
সোমপ্রকাশ পত্রিকার বিষয়বস্তু : সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি ছিল বাংলার প্রথম রাজনৈতিক পত্রিকা। তাই স্বাভাবিকভাবেই সোমপ্রকাশ পত্রিকাটিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমাজের রাজনৈতিক বিষয় গুলি তুলে ধরা হতো। যেমন -
◆ সমাজ সংস্কারে স্বপক্ষে : সোমপ্রকাশ পত্রিকা সেই সময় বাংলার সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রেও নিজস্ব মতামত প্রকাশ করতে শুরু করেছিল। যেমন 1856 খ্রিস্টাব্দে বিধবা বিবাহ আইন পাস হওয়ার পর,সমাজে বিধবা বিবাহকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সোমপ্রকাশ যেমন এগিয়ে এসেছিল, ঠিক তেমনি হিন্দু ও ব্রাহ্ম ধর্মের মধ্যে সমন্বয় সাধন করার ক্ষেত্রেও সোমপ্রকাশ লেখনি প্রকাশ করতো।
◆ রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি : সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি একটি রাজনৈতিক পত্রিকা হওয়ায় রাজনৈতিক চেতনার প্রসার উ ছিল সোমপ্রকাশের প্রধান দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব অনুসারে সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি সেসময়কার বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, যেমন পূর্বের বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা, জমিদার সভা এবং তৎকালীন ভারত সভা, ইলবার্ট বিল, ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট ইত্যাদির বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশ করার মাধ্যমে সমাজে রাজনৈতিক চেতনা প্রসারে সচেষ্ট হয়েছিল।
◆ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লেখনি প্রকাশ :
সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি তৎকালীন সময়ে হিন্দু সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ধর্মীয় গোঁড়ামি,কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে লেখনি প্রকাশ করে, সমাজকে আধুনিক করে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রসর হয়েছিল।
◆ নীল বিদ্রোহের স্বপক্ষে : সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল,সোমপ্রকাশ পত্রিকার সম্পাদক দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ 1858 খ্রিস্টাব্দের নীল বিদ্রোহের স্বপক্ষে নির্ভীকভাবে বিভিন্ন লেখায় প্রকাশ করতো। দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ তার সোমপ্রকাশ পত্রিকায় সেই সময় নীলকর সাহেবরা কীকরে নীল চাষীদের উপর অত্যাচার করতো এবং নীল চাষ করার ফলে চাষীদের দূর অবস্থা সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশ করতেন। এবং এভাবে সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি নীল বিদ্রোহের প্রতি সমর্থন জানায়।
এছাড়াও সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি সামাজিক সচেতনতা,রাজনৈতিক সচেতনতা,শিক্ষার প্রসারে ইত্যাদি বিষয়ে লেখালেখি প্রকাশ করা হতো।
কিন্তু সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর,একটি সময় ব্রিটিশ সরকারের চাপে পড়ে এর প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কেন সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, বা ব্রিটিশ সরকার কেন সোমপ্রকাশ পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল? সেটাই আমরা এবার আলোচনা করবো।
সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি মূলত দুটি কারণে তাঁর প্রকাশনা বন্ধ করেছিল। প্রথমঃ 1878 খ্রিস্টাব্দে লর্ড লিটন দেশীয় সংবাদপত্র গুলির নির্ভীক সংবাদ প্রকাশ বা সংবাদ পত্র গুলির ব্রিটিশ বিরোধী সমালোচনা মুলক সংবাদ প্রকাশন বন্ধ করার ক্ষেত্রে 1878 খ্রিস্টাব্দে দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইন অথবা ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট আইন প্রবর্তন করে। লর্ড লিটনের এই কার্যকলাপের পর সোমপ্রকাশ পত্রিকা এই আইনের তীব্র সমালোচনা করায়,সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি ব্রিটিশ সরকারের ক্ষোভের মুখে পড়ে।
দ্বিতীয়তঃ 1878 -80 আফগান যুদ্ধের সময় সোমপ্রকাশ পত্রিকার কাবুলের সংবাদদাতা আফগান যুদ্ধ সম্পর্কে একটি খবর প্রকাশ করে, যাতে বলা হয় যে " ব্রিটিশ সৈন্য কাবুলকে আক্রমণ করার পর তা দখল করে নেবে। সোমপ্রকাশ পত্রিকায় সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর লর্ড লিটন যখন এই সম্পর্কে জানতে পারেন, তখন লর্ড লিটন সোমপ্রকাশ পত্রিকার সম্পাদকের ওপর যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষুব্ধ হন। এবং সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি চব্বিশ পরগনার ম্যাজিস্ট্রেটকে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার আদেশ দেন। 24 পরগনা ম্যাজিস্ট্রেট সোমপ্রকাশ পত্রিকার সম্পাদককেবতার কার্যকলাপের জন্য 1000 টাকা জরিমানা করেন। তিনি সম্পাদক দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ সেই জরিমানা দিতে রাজি হন না। তিনি বদলে সোমপ্রকাশ পত্রিকার প্রকাশনা 1 বছরের জন্য বন্ধ করে দেন।
সোমপ্রকাশের দ্বিতীয়বারের জন্য প্রকাশ : প্রথমবার সোমপ্রকাশ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হওয়ার পর 1880 খ্রিস্টাব্দে সোমপ্রকাশ পত্রিকার প্রকাশনা দ্বিতীয়বারের জন্য শুরু হয়। কিন্তু পত্রিকাটি এক বছরের জন্য বন্ধ থাকার কারণে এর পাঠক সংখ্যা এবং জনপ্রিয়তা অনেকটাই কমে যায়. তাছাড়াও সোমপ্রকাশ পত্রিকার প্রথম সম্পাদক দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণের মৃত্যুর পর, পত্রিকার জনপ্রিয়তা এমনিই হারিয়ে যায়।। সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি দ্বিতীয়বার প্রকাশনার সময়ে অর্থাৎ 1880 পর এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন মোহনলাল বিদ্যাবাগীশ।। মোহনলাল বিদ্যাবাগীশের মৃত্যুর পর সোমপ্রকাশ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মোহনলাল বিদ্যাবাগীশের পূত্র উপেন্দ্রকুমার বিদ্যাবাগীশ।
Tags :