পূর্ব ও মধ্য ভারতের লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণ আলোচনা করো | WB Class 10 Geography Question Answer Chapter 5
![]() |
পূর্ব ও মধ্য ভারতের লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণ আলোচনা করো। | ভারতে লৌহ ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার কারণ গুলো আলোচনা করো।
ভূমিকা : যেকোনো স্থানে কোনো একটি শিল্পের বিকাশ বা একদেশীভবনের ভবনের জন্য দুই ধরনের পরিবেশ থাকা প্রয়োজন। যথা শিল্প বিকাশের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ ও শিল্পের বিকাশের জন্য অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ। পূর্ব ও মধ্য ভারতে অধিকাংশ লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্র গড়ে ওঠার জন্য বা পূর্ব ও মধ্য ভারতে লৌহ ইস্পাত শিল্পের একদেশী ভবনের ক্ষেত্রে আমরা অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ দুই ই লক্ষ্য করতে পারি। আকরিক, কয়লা, চুনাপাথর, ডলোমাইট ইত্যাদি উপাদান গুলিকে আমরা পূর্ব ও মধ্য ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের প্রাকৃতিক কারণ এবং শ্রমিক, অর্থ, পরিবহন, বাজার ইত্যাদি জিনিস গুলোকে আমরা পূর্ব ও মধ্য ভারতে লৌহ ইস্পাত শিল্পের একদেশী ভবনের ক্ষেত্রে আমরা অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ হিসেবে ধরতে পারি। যেমন -
পূর্ব ও মধ্য ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের প্রাকৃতিক
কারণ :
আকরিক লোহাঃ লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্রের প্রধান কাঁচামাল গুলির মধ্যে আকরিক লোহাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ব মধ্য ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আকরিক লোহা খুবই সহজে পাওয়া যায়। যেমন-বিহারের সিংভূম, ওডিশার ময়ূরভঞ, ছত্তিশগড়ের বাইলাডিলা প্রভৃতি অঞ্চলে উচ্চমানের ম্যাগনেটাইট ও হেমাটাইট জাতীয় আকরিক লােহা পাওয়া যায় যা পূর্ব ও মধ্য ভারতের লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্র গড়ে ওঠার একটি অন্যতম কারণ।
কয়লাঃ লৌহ ইস্পাত শিল্পের ক্ষেত্রে কয়লা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।। পূর্ব ও মধ্য ভারত অঞ্চলের ঝরিয়া, বােকারাে, গিরিডি এবং ওডিশার তালচের প্রভৃতি কয়লাক্ষেত্র থেকে প্রচুর পরিমাণে বিটুমিনাস জাতীয় কয়লা উত্তোলন করা হয়। যা এই শিল্পের উন্নতির ক্ষেতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।।
চুনাপাথর, ডলােমহিট ও ম্যাঙ্গানিজের প্রাচুর্য্যঃ
ওডিশার বীরমিত্রপুর থেকে চুনাপাথর, গাংপুর ও সুন্দরগড় থেকে ডলােমাইট; কোরাপুট, কালাহাণ্ডি, গাংপুর থেকে ম্যাঙ্গানিজ পাওয়া যায়।
জল সরবরাহঃ বেশিরভাগ শিল্পেই বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে জল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পক্ষেত্রে জল বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য শিল্পের মতোই লৌহ ইস্পাত শিল্পের ক্ষেত্রে জল খুব গুরুত্বপূর্ণ।। এক্ষেত্রে পূর্ব মধ্য ভারতের বিভিন্ন নদী - দামােদর, সুবর্ণরেখা, মহানদী, ব্রাত্মণী প্রভৃতি নদীর জল পাওয়ার সুবিধা আছে।
বিদ্যুৎঃ প্রায় সব শিল্পের ক্ষেত্রেই বিদ্যুৎ প্রয়োজন। শিল্পের বিভিন্ন কাজ কর্মের জন্য অপরিহার্য । পূর্ব মধ্য ভারত অঞ্চলের দামােদর অববাহিকা ও হীরাকুদের জলবিদ্যুৎ দুর্গাপুর, পত্রাতু, বােকারাে প্রভৃতি কয়েকটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে।
পূর্ব ও মধ্য ভারতে লৌহ ইস্পাত শিল্পের একদেশী ভবনের অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ :
পরিবছণঃ যে কোনো শিল্পের ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।। যেকোনো শিল্পের অগ্রগতি বা উন্নতির ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যবস্থাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পূর্ব ও মধ্য ভারতের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মাধ্যমে এবং কয়েকটি সড়কপর্থের মাধ্যমে খনি অঞ্চল থেকে কাঁচামাল নিয়ে আসার সুবিধা হয় এবং ইস্পাত পাঠানাের সুবিধা আছে। এই বিশেষ সুবিধার জন্য পূর্ব ও মধ্য ভারতের লৌহ ইস্পাত শিল্পের জন্য যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে।
শ্রমিকঃ বিভিন্ন শিল্পের অগ্রগতির ক্ষেত্রে শ্রমিকের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।। শিল্পে শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যায়।। পূর্ব মধ্য ভারতের লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্রের জন্য দক্ষ শ্রমিক এর অভাব হয় না।। যার ফলে পূর্ব ও মধ্য ভারতের লৌহ ইস্পাত শিল্প যথেষ্ট উন্নতি করেছে।
সুতরাং, পূর্ব ও মধ্য ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের জন্য অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ দুটোই রয়েছে। তাই ভারতের অধিকাংশ লৌহ-ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র পূর্ব ও মধ্য ভারতে গড়ে উঠেছে।।
Tags :