চুয়াড় বিদ্রোহ কী | চুয়াড় বিদ্রোহের কারণ | চুয়াড় বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য
আজকের এই ব্লগ পোষ্টের মাধ্যমে আমরা ক্লাস টেনের ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রতিরোধ ও বিদ্রোহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় " চুয়াড় বিদ্রোহ " সম্পর্কে আলোচনা করবো। এবং চুয়াড় বিদ্রোহ সম্পর্কে পরীক্ষায় যত ধরনের ছোট,বড় প্রশ্ন আসে,সেই সমস্ত ধরনের প্রশ্নের উত্তর এই পোস্টের মধ্যেই তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
Table Of Contents
• চুয়াড় বিদ্রোহ কি?
• চুয়াড় বিদ্রোহ কবে হয়েছিল?
• প্রথম পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ কবে হয়েছিল?
• প্রথম পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ কে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বা প্রথম পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহের নেতা কে ছিলেন?
• দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ কবে হয়েছিল?
• দ্বিতীয় পর্বে চুয়াড় বিদ্রোহে কারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?
• চুয়াড় বিদ্রোহ কেন হয়েছিল অথবা চুয়াড় বিদ্রোহের কারণ কি ছিল?
• চুয়াড় বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য অথবা চুয়াড় বিদ্রোহের গুরুত্ব ও ফলাফল
• চুয়াড় বিদ্রোহ কবে হয়েছিল?
• প্রথম পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ কবে হয়েছিল?
• প্রথম পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ কে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বা প্রথম পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহের নেতা কে ছিলেন?
• দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ কবে হয়েছিল?
• দ্বিতীয় পর্বে চুয়াড় বিদ্রোহে কারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?
• চুয়াড় বিদ্রোহ কেন হয়েছিল অথবা চুয়াড় বিদ্রোহের কারণ কি ছিল?
• চুয়াড় বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য অথবা চুয়াড় বিদ্রোহের গুরুত্ব ও ফলাফল
চুয়াড় বিদ্রোহ কী | চুয়াড় বিদ্রোহের কারণ | চুয়াড় বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য
ভূমিকা : ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে ভারতে যে সমস্ত উপজাতী বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল, তার মধ্যে 1768 থেকে 1832 খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ঘটে চলা চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল একটি অন্যতম উপজাতি বিদ্রোহ।
চুয়াড় বিদ্রোহ : বাঁকুড়া জেলার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল,মানভূম জেলার উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলের আদিবাসীদের ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লোকেরা তাদের ঘৃণা এবং তাচ্ছিল্যের সঙ্গে চূয়ার বলে ডাকতো। এই চূয়াররা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে চুয়াড় বিদ্রোহ শুরু করেছিল। চুয়াড় বিদ্রোহ হয়েছিল মূলত দুটি পর্বে। একটি ছিল প্রথম পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ এবং অপরটি ছিল দ্বিতীয় পর্বে চুয়াড় বিদ্রোহ।
▪ প্রথম পর্বের চুয়ার বিদ্রোহ বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল ঘাটশিলায় ধলভূমের রাজা জগন্নাথ সিংহ নেতৃত্বে। ১৭৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ধলভুমের রাজা জগন্নাথ সিং প্রথম চুয়ার বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।
▪ দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে। দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ জঙ্গলমহল সহ মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রায়পুরের জমিদার দুর্জন সিংহ, মেদিনীপুরের রানী শিরোমণি প্রমুখ। চুয়াড় বিদ্রোহের রানী শিরোমণি তার অসামান্য অবদান রেখে গিয়েছিলেন। এজন্য তিনি মেদিনীপুরের লক্ষীবাঈ নামে পরিচিত ছিলেন।
চুয়াড় বিদ্রোহের কারণ | চুয়ার বিদ্রোহ কেন হয়েছিল?
ভূমিকা : প্রত্যেকটি বিদ্রোহের পেছনে এক বা একাধিক কারণ লুকিয়ে থাকে। ঠিক সেরকমই চুয়াড় বিদ্রোহের পেছনেও একাধিক কারণ ছিল। যেমন -◆রাজস্ব বৃদ্ধি : চুয়ারদের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি কাজ এবং পশু পালন করা। বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর,ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চুয়ায়দের অধীনে থাকা জমির ওপর নতুন করে রাজস্ব বৃদ্ধি করতে শুরু করে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যে পরিমান ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধি করেছিল, জমিদার'দের পক্ষে এবং চুয়ারদের পক্ষে সেই পরিমাণ খাজনা দেওয়া অনেকটাই কষ্টসাধ্য ছিল। এই কারণে জমিদাররা এবং তাদের পাইক চুয়াররা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং তারা জঙ্গলমহল জুড়ে বিদ্রোহ শুরু করে।
◆জমি দখল : চুয়াড় বিদ্রোহের একটি অন্যতম কারণ ছিল পাইকদের জমি দখল করা। আদিবাসী চুয়ারা স্থানীয় জমিদারদের লেঠেল বাহিনীতে পাইক হিসেবে কাজ করতো।। তার বদলে তারা জমিদারদের কাছ থেকে কিছু নিষ্কর জমি ভোগ করতে,যাকে বলা হতো পাইকান জমি। কিন্তু ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পাইকদের সেই জমি ওপর থেকে তাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয় এবং সেই জমির উপর নতুন করে ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধি করতে শুরু করা হয়।
◆অত্যাচার : চুয়ারদের অধীনে থাকা জমি গুলির উপর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নতুন করে যে ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধি করেছিল.সেই ভূমি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীরা চুয়ারদের উপর সীমাহীন অত্যাচার চালাতো। যার ফলে সেসব অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যেই চুয়াড়রা বিদ্রোহ শুরু করেছিল।
◆ জীবিকার সমস্যা : চুয়াড় বিদ্রোহের একটি অন্যতম কারণ ছিল তাদের বেকারত্ব। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চুয়ারদের নিষ্ক্র জমি দখল করে নিলে এবং পাইক বাহিনী থেকে তাদের ছাড়িয়ে দিলে, অনেক চুয়ারা নিজের কর্ম হারিয়ে বেকারত্বের সম্মুখীন হয়। যার ফলে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। মূলত এসব কারণেই তারা ব্রিটিশদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। এবং একাধিক কারণে শেষ পর্যন্ত চুয়াররা বিদ্রোহের পথে পা বাড়িয়েছিল।
চুয়াড় বিদ্রোহের অবসান : দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ খুব অল্পসময়ের মধ্যেই খুব তীব্র আকার ধারণ করলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই বিদ্রোহ দমন করার জন্য তীব্র দমন নীতি গ্রহণ করে।। রানী শিরোমণির মৃত্যু, দুর্জন সিংহ সহ অন্যান্য নেতাদের গ্রেপ্তার সহ আরও নানা ধরনের তীব্র দমননীতি চালানোর ফলে এই বিদ্রোহ খুব অল্পসময়ের মধ্যেই সমাপ্ত হয়।
চুয়াড় বিদ্রোহের ফলাফল -
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে সংগঠিত চুয়াড় বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও, চুয়াড় বিদ্রোহের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক বৈশিষ্ট্য ছিল। যেমন -▪ চুয়াড় বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চুয়ারদের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য সরকার সেখানকার শাসন ব্যবস্থায় কিছুটা পরিবর্তন ঘটায়। ব্রিটিশ সরকার বিষ্ণুপুর শহরটাকে কেন্দ্র করে দুর্গম বনাঞ্চল নিয়ে জঙ্গলমহল নামে একটি পৃথক জেলা গঠন করে।
▪ চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে নিরক্ষর আদিবাসী চুয়ারদের করা প্রথম স্বতঃস্ফূর্ত উপজাতি বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহ পরবর্তীকালের অন্যান্য উপজাতি বিদ্রোহের গুলির ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।
▪ চুয়াড় বিদ্রোহে জমিদার ও কৃষকরা ঐক্যবদ্ধভাবে শামিল হয়েছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়,ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শোষণ অত্যাচারের বিরুদ্ধে 1768 খ্রিস্টাব্দে প্রথম পর্বের এবং 1798-99 খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল ভারতীয় উপজাতি বিদ্রোহের মধ্যে একটি অন্যতম কৃষক বিদ্রোহ।