ভারতের বিভিন্ন রাজপুত বংশের পরিচয় দাও। | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর
একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর |
আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় " সমাজের ঘটনা প্রবাহ " থেকে যেই প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ, অর্থাৎ " ভারতের বিভিন্ন রাজপুত বংশ সম্পর্কে আলোচনা বা ভারতের বিভিন্ন রাজপুত বংশের পরিচয় দাও " প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। এর আগের পোস্টে আমরা একাদশ শ্রেণির ইতিহাস সাজেশন 2022 তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছিলাম। এবং তারপর আমরা একাদশ শ্রেণির ইতিহাস সাজেশন 2022 হিসেবে যে সমস্ত প্রশ্ন রেখেছিলাম, আর তার বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর আমাদের ওয়েবসাইটে করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা চাইলে তার উওর সেখান থেকে দেখে নিতে পারো।।
ভারতের বিভিন্ন রাজপুত বংশের পরিচয় দাও। | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর
ভূমিকা : হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর উত্তর ভারতের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন রাজপুত জাতির অস্তিত্ব ছিল। ভারতের রাজপুত বংশ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বংশ ছিল,যেমন - চৌহানবংশ, চালুক্য বংশ, গাহড়বাল, চান্দেল্য, পারমার, চেদী ইত্যাদি।।
ভারতের বিভিন্ন রাজপুত বংশের পরিচয়
▪ চৌহানবংশঃ চৌহানবংশের অস্তিত্ব ছিল দিল্লি ও আজমীরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে। বিগ্রহ রাজার আমলে চৌহান বংশের যোদ্ধারা দিল্লি, পূর্ব পাঞ্জাব, দক্ষিণ রাজপুতানা প্রভৃতি অঞ্চল জয় করার মাধ্যমে চৌহান বংশকে একটি শক্তিশালী রাজপুত বংশে পরিণত করে। চৌহান বংশের শেষ শাসক এবং উত্তর ভারতের এক শক্তিশালী হিন্দু রাজা তৃতীয় পৃথ্বীরাজ চৌহান কালিঞ্জর,রোহিলখন্ড,মনবা প্রভৃতি স্থান জয় করেন।কিন্তু পরবর্তীতে তিনি তরাইনের যুদ্ধে 1192 খ্রিস্টাব্দে তুর্কি আক্রমণ কারী মুহাম্মদ ঘুরীর কাছে পরাজিত হন।
এক্ষেত্রে উল্লেখ করা দরকার যে, কনৌজের গাহড়বাল বংশের শেষ রাজা জয়চন্দ্র তৃতীয় পৃথ্বীরাজ চৌহানকে পরাজিত করার ক্ষেত্রে মোহাম্মদ ঘুরীকে বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল।।কিন্তু পরবর্তীকালে জয়চন্দ্র নিজেও মুহাম্মদ ঘুরীর কাছে পরাজিত হয়েছিল।
▪ চালুক্যবংশ : পশ্চিম ভারতে রাজবংশ গুলির মধ্যে একটি অন্যতম রাজপুত বংশ ছিল গুজরাতের চালুক্য বংশ। মনে করা হয়,৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রকূট বংশের শেষ রাজা চতুর্থ অমোঘবর্ষকে পরাজিত করে তৈলপ চালুক্য বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। চালুক্য বংশের রাজধানী ছিল আনহিলবার। চালুক্য বংশের একজন অন্যতম রাজা ছিলেন জয়সিংহ। চালুক্য বংশের সঙ্গে দিল্লির চৌহান বংশের দীর্ঘ সংঘর্ষ ছিল। চৌহান বংশের সঙ্গে দীর্ঘ সংঘর্ষে লিপ্ত থাকার কারণে, চালুক্য বংশের শক্তি অনেকটাই কমে যায়।।
▪ গাহড়বাল বংশ : কনৌজের গাহড়বাল বংশ ছিল ভারতের একটি অন্যতম রাজপুত বংশ। গাহড়বাল রাজপুত বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন চন্দ্রদেব। চন্দ্রদেব 1090 খ্রিষ্টাব্দে গাহড়বাল বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। গাহড়বাল বংশের অন্যতম রাজা ছিলেন গোবিন্দ্রচন্দ্র। গোবিন্দ্রচন্দ্র উত্তর প্রদেশ ও বিহারের বেশ কিছু অঞ্চল দখল করে গাহড়বাল বংশকে একটি শক্তিশালী রাজপুত বংশে পরিণত করে।
দিল্লি ও আজমীরের চৌহান রাজবংশের সঙ্গে গাহড়বাল রাজবংশের দীর্ঘ সংঘর্ষ ছিল। এই সংঘর্ষের দরুন, গাহড়বার বংশের শেষ রাজা জয়চন্দ্র তৃতীয় তরাইনের যুদ্ধে মোহাম্মদ ঘুরিকে বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে জয়চন্দ্র নিজেও মোহাম্মদ ঘুরীর হাতে পরাজিত এবং নিহত হয়েছিল।
▪ চান্দেল্য বংশ : খ্রিস্টীয় নবম শতকে যশোবর্মন বুন্দেলখন্ড চান্দেলা বংশের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যশোবর্মন দিল্লি ও আজমিরের চৌহান রাজপুত বংশের রাজা পৃথ্বীরা কে একবার পরাজিত করেছিলেন। বুন্দেলখন্ডের চান্দেল্য বংশের একজন অন্যতম রাজা ছিলেন পরমাদদেব। চান্দেল্য বংশের শেষ রাজা ছিলেন পেরামল।।
▪ পারমার বংশ : ভোজ নামে এক ব্যক্তি খ্রিষ্টীয় একাদশ শতকে মালবে পারমার নামক রাজপুত বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।। এই রাজপুত বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন ভোজ। সুদক্ষ, যোদ্ধা, সুশাসক ছিলেন রাজা ভোজ। তিনি তার রাজ্যের সংস্কৃতি সংস্কৃত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং ভোজ নামে একটি হ্রদ ও খনন করেছিলেন।
▪ অন্যকিছু রাজপুতবংশ : এছাড়াও সে যুগের অন্যান্য কিছু রাজপুত বংশ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল্য জব্বলপুরের কলাচুরি বংশ কাথিয়াবাড়এর সোলাঙ্কি বংশ, গোদাবরী তীরবর্তী অঞ্চলের চেদী বংশ প্রভৃতি। তবে রাজপুত জাতির যথেষ্ট বৃহত্তর ও শক্তিশালী হওয়া সত্বেও তারা সবসময়ই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত থাকতো। যার ফলে তাদের নিজেদের শক্তি ক্ষয় হয়ে তারা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়তো। সেই সুযোগে তুর্কি আক্রমণ কারীরা উত্তর ও মধ্য ভারতে আক্রমণ করলে,ধীরে ধীরে রাজবংশ গুলির একে একে পতন ঘটে।
Tags :