হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থের উনিশ শতকের বাংলা সমাজের কিরুপ চিত্র পাওয়া যায় বা হুতোমপ্যাঁচার নক্সা গ্রন্থ থেকে উনিশ শতকের বাংলা সমাজের কী প্রতিফলন পাওয়া যায় ?
উওর : প্রথম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থটি রচনা করেছেন কালীপ্রসন্ন সিংহ। এই গ্রন্থটি প্রথম ভাগ 1862 সালের এবং দ্বিতীয় ভাগ 1863 সালে প্রকাশ পায়। পরে অবশ্য দুটি ভাগ একত্রে 1864- 1865 সালে প্রকাশিত হয়।
◆ সমাজ চিত্র বা সমাজের :
▪ বাবু কালচার: কালীপ্রসন্ন সিংহ তার এই গ্রন্থে সেইসময়ের কলকাতার বাবুকালচার কে স্পষ্ট ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি তাঁর রচনায় ধনি বাবুদের ভন্ডামীর কথা তুলে ধরেছেন। তার ভাষা ছিল ঝাঝালো প্রকৃতির।
▪ পূজা পার্বণ ও উৎসব : এই গ্রন্থ থেকে তৎকালীন কলকাতার প্রচলিত বারোয়ারি পুজো,রথযাত্রা, নীলষষ্ঠী, রাসলীলা,দুর্গোৎসব ইত্যাদির কথা জানা যায়।
▪ কুসংস্কার : কালীপ্রসন্ন সিংহ সমাজে প্রচলিত সতীদাহ, প্রথা,বাল্যবিবাহ,বহুবিবাহ ইত্যাদি কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন।
▪ সমাজ বিন্যাস : ইংরেজ শাসনের আগে বাংলায় বড় বড় বংশের,যেমন - কৃষ্ণচন্দ্র,জগৎশেঠ,রাজবল্লভ, নন্দকুমার বংশের পতন ঘটে। একইসাথে বাংলার বেশকিছু নামজাদা বংশের উদ্ভব লক্ষ্য করা যায়। যেমন - মল্লিক পরিবার, শীলপরিবার ইত্যাদি।। রচনার কালীপ্রসন্ন সিংহ মহাশয় সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কথা প্রকাশ করেছেন। প্রতিটি স্তরের মানসিকতাকে আমরা অতি সহজেই প্রত্যক্ষ করতে পারি।
◆ উপসংহার :
পরিশেষে বলা যায়, কালীপ্রসন্ন সিংহ তার ছদ্মনামে ( হুতোম প্যাচা ) ব্যঙ্গাত্মক দৃষ্টিভঙ্গিতে এবং হাস্যরসের মিলনে তৎকালীন সমাজের ধনীদের লাঞ্ছনা, মাদকাসক্তি, নানা অপকর্ম মধ্যবিত্ত ও সাধারণ নানা আমোদ-প্রমোদের জীবন,সংসারের কথা এক বিচিত্র নকশাধর্মী ভাষায় আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন।।