ভারতীয় পার্লামেন্টের গঠন ও কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা করো || HS Political Science Note 2023
ভারতে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ার ফলে তত্ত্বগতভাবে সংসদ প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী। ভারতীয় সংসদের উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা ও কাজগুলি হল—
[i] আইন প্রণয়ন: সংসদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল আইন প্রণয়ণ করা। যেসব বিষয়ে সংসদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা আছে, সেগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
কেন্দ্রীয় তালিকা বিষয়ে : সংবিধানের সপ্তম তপশিলে বর্ণিত আইন প্রণয়নের যে তিনটি তালিকা রয়েছে তার মধ্যে কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত ৯৯টি বিষয়ে সংসদ এককভাবে আইন প্রণয়ন করতে পারে।
[ii] যুগ্ম-তালিকা বিষয়ে যুগগ্ম তালিকাভুক্ত ৫২টি বিষয়ে সংসদ রাজ্য আইনসভাগুলির সঙ্গে যৌথভাবে আইন প্রণয়ন করতে পারে। এই যুগ্ম তালিকাভুক্ত বিষয়ে সংসদ প্রণীত আইনের সঙ্গে রাজ্য আইনসভায় আইনের বিরোধ ঘটলে সংসদ প্রণীত আইনই বলবৎ
থাকে, রাজ্য আইন বাতিল বলে গণ্য হয়।
[iii]. রাজ্য তালিকা ভূক্ত বিষয়: পার্লামেন্ট কয়েকটি ক্ষেত্রে রাজা তালিকাভুক্ত ৬১টি বিষয়েও আইন প্রণয়নের অধিকারী। i জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে বা রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা জারি হলে, @ রাজ্যসভায় উপস্থিত এবং ভোটদানকারী দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থনে গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে, 3 দুই বা ততোধিক রাজা আইনসভা প্রস্তাব গ্রহণ করে সংসদকে তাদের রাজ্যের জন্য রাজ্য-তালিকাভুক্ত কোনো বিষয়ে আইন প্রণয়নের অনুরোধ জানালে, @ আন্তর্জাতিক সন্ধি বা চুক্তির শর্তাদি রূপায়ণ করার জন্য পার্লামেন্ট রাজ্য-তালিকাভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে।
[iv] অবশিষ্ট বিষয়ে কেন্দ্রীয় তালিকা, রাজ্য-তালিকা বা যুগ্ম তালিকার অন্তর্ভুক্ত নয়, এমন বিষয়গুলি বা অবশিষ্ট বিষয়গুলির ক্ষেত্রে। আইন প্রণয়নের যাবতীয় ক্ষমতা কেন্দ্রীয় আইনসভা বা সংসদকে দেওয়া হয়েছে।
[2] শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি অনুযায়ী পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্যদের নিয়েই মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভা হল দেশের শাসন বিভাগের কর্ণধার। সংবিধান অনুসারে সমগ্র মন্ত্রীসভাকে তার নীতি ও কাজকর্মের জন্য পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হয়। লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থনের ওপর মন্ত্রীসভার স্থায়িত্ব নির্ভর করে। পার্লামেন্ট আরও যেসব উপায়ে শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে তার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রপতির ভাষণে উল্লিখিত সরকারি নীতি ও কর্মসূচি নিয়ে। তর্কবিতর্ক, সরকারের প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা, মুলতুবি প্রস্তাব উত্থাপন, দৃষ্টি আকর্ষণী নোটিশ দিয়ে নিন্দাসূচক প্রস্তাব বা সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা, পার্লামেন্টের বিভিন্ন কমিটির পেশ করা রিপোর্টের ওপর বিতর্ক প্রভৃতি।
[3] আয়নায় নিয়ন্ত্রণ ভারতের সংবিধানে কেন্দ্রীয় সরকারের আয়বায় নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা পার্লামেন্টকে দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষমতা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার সদস্যদের দেওয়া হয়েছে। অর্থ-সংক্রান্ত বিষয়ে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার কার্যত কোনো ক্ষমতা নেই বললেই চলে। সংবিধানের ২৬৫ এবং ২৬৬ নং ধারা অনুযায়ী, কর আরোপ, কর সংগ্রহ বা সরকারের ব্যয়বরাদ্দ পার্লামেন্টের আইন ছাড়া করা যায় না। সরকারি আয়বায় ব্যবস্থা পার্লামেন্ট কর্তৃক নির্ধারিত পথে পরিচালিত হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য লোকসভায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি রয়েছে। সেগুলি হল— সরকারি হিসাব-পরীক্ষা কমিটি (Public Accounts Committee) এবং আনুমানিক ব্যয়-পরীক্ষা কমিটি (Estimates Committee)
[4] নির্বাচন ও অপসারণ: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পার্লামেন্টের উভয়করের নির্বাচিত সদস্যরা অংশ নিয়ে থাকেন। উপরাষ্ট্রপতি লোকসভা ও রাজান সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতিকে পাগানের সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে 'ইমপিচমেন্ট' পদ্ধতিতে পদচ্যুত করতে পারে। তা ছাড়া সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতি, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার, ভারতের ব্যয় নিয়ন্ত্রক ও মহাপনা পরীক্ষক প্রমুখকে অযোগ্যতা বা অসদাচরণের অভিযোগে পদচ্যুত করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করার ক্ষমতাও পার্লামেন্টের রয়েছে।
[5] সংবিধান সংশোধন: সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের দৃষ্টি কক্ষের সমান ক্ষমতা রয়েছে। সংবিধানের ৩৬৮ ধারা অনুযায়ী কয়েকটি ক্ষেত্রে সাধারণ পদ্ধতিতে এবং কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পার্লামেন্ট সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে একক ক্ষমতা করে। কয়েকটি নির্দিষ্ট বিষয়ে সংবিধান সংশোধনের জন্য অঙ্গরাজ্যগুলির আইনসভার অনুমোদন দরকার হয়।
[6] জরুরি অবস্থার ঘোষণা অনুমোদন: ভারতের রাষ্ট্রপতি কর্তৃত ঘোষিত তিন ধরনের জরুরি অবস্থা, যথা—জাতীয় জরুরি অবস্থা, অঙ্গরাজ্যে সাংবিধানিক অচলাবস্থাজনিত জরুরি অবস্থা এবং আর্থিক জরুরি অবস্থার ঘোষণা পার্লামেন্টের দুটি কক্ষে অনুমোদিত হতে হয়; তা না হলে জরুরি অবস্থার ঘোষণা বাতিল বলে গণ্য হয়।
[7] তথ্য সরবরাহ ও জনমত গঠন : সরকারি নীতি ও কাজকর্ম সম্পর্কে পার্লামেন্টে যেসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করা হয় তার ফলে জনগণ বিভিন্ন বিষয়ে অবহিত হওয়ার সুযোগ পান। পার্লামেন্টের সদস্যরা সভায় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও বিতর্কে অংশগ্রহণ করে সুষ্ঠু জনমত গঠনে সাে হন। বর্তমানে দূরদর্শন পার্লামেন্টের অধিবেশন সরাসরি সম্প্রচার করে থাকে। এ ছাড়া সংবাদপত্রে ও অন্যান্য গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যার ফলে শক্তিশালী জনমত গঠিত হয়।
[8] বিচার-সংক্রান্ত ক্ষমতা: পার্লামেন্টের কিছু ক্ষেত্রে বিচারবিষয়ক ক্ষমতাও রয়েছে। পার্লামেন্ট কোনো আদালতকে হাইকোর্টের পর্যায়ে উন্নীত করতে পারে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে হাইকোর্ট স্থাপন করা অথবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অবস্থিত হাইকোর্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার ব্যাপারেও পার্লামেন্ট কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে। পার্লামেন্টের অবমাননা বা অধিকার ভঙ্গের অভিযোগে পার্লামেন্টের সদস্য অথবা সদস্য নন এমন যে কোনো ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা পার্লামেন্টের রয়েছে।
[9] অন্যান্য ক্ষমতা: উপরে উল্লেখ করা ক্ষমতাগুলি ছাড়াও সংসদের আরও কয়েকটি ক্ষমতা রয়েছে। এগুলি হল—
1. সংবিধানের ২ এবং ৩ নং ধারা অনুসারে পার্লামেন্ট আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নতুন রাজ্য গঠন করতে পারে বা প্রয়োজন হলে কোনো । রাজ্যের পুনর্গঠন করতে পারে। । রাজ্যের সীমানার হ্রাসবৃদ্ধি বা নাম পরিবর্তনের ক্ষমতাও পার্লামেন্টের রয়েছে।
ii. পার্লামেন্ট কোনো রাজ্য আইনসভার দ্বিতীয় কক্ষের প্রবর্তন বিলোপসাধন করতে পারে। iv. পার্লামেন্ট সর্বভারতীয় চাকরির ক্ষেত্রে বসবাসগত যোগ্যতার নির্ধারণ করার অধিকারী।