একাদশ শ্রেণির বাংলা শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য প্রশ্নোত্তর |
শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণাঃ
বাংলা সাহিত্য অনুসারে সব যুগকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা প্রাচীন যুগ মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগের মধ্যে প্রাচীন যুগের সময়কাল হল 900 থেকে 1200 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এখন মধ্যে যুগে যে সাহিত্য রচনা হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে নিদর্শনটি খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল সেটি হল শ্রীকৃষ্ণকীর্তন।। শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন হলো বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন মূলত সেই যুগের বাস্তব পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে রচনা করা হয়েছিল।
নিচে শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন সম্পর্কে সমস্ত তথ্য দেওয়া হলো।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন প্রশ্নোত্তর || শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য প্রশ্ন উওর pdf
বিষয় | তথ্য |
---|---|
শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন | প্রাক চৈতন্য যুগের সাহিত্যের সৃষ্টি |
রচয়িতা কে ছিলেন? | শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের রচয়িতা হলেন বড়ু চন্ডীদাস। |
রচনাকাল | চতুর্দশ শতাব্দীর শেষ দিকে কিংবা পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে। |
পূর্বেকার নাম | শ্রীকৃষ্ণ সন্দর্ভ |
মোট খন্ড | ১৩ টি |
কোন ভাষায় লেখা হয়েছিল | বাংলা |
শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের আবিষ্কারকারক | শ্রী বসন্ত রঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ মহাশয়। |
আবিষ্কারের সময় | ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে |
কোথা থেকে আবিষ্কার করা হয়েছিল? | বাঁকুড়া জেলার কাকিলা গ্রামের অধিবাসী দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের গোয়াল ঘরের মাচা থেকে। |
গ্রন্থাকারে প্রকাশ | ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে |
যেখান থেকে প্রকাশ করা হয়েছিল | বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে |
নতুন নাম | শ্রীকৃষ্ণকীর্তন |
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের বিষয়বস্তুঃ-
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি হলো মূলত মধ্যযুগে রচিত হওয়া বড় চন্ডীদাসের এক আখ্যানমূলক কাব্য। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে মূলত ১৩ টি খন্ড রয়েছে ম এই ১৩ টি খন্ড জুড়ে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম থেকে তার মথুরা প্রবাস পর্যন্ত সমস্ত কাহিনি আলোচনা করা হয়েছে। সমগ্র কাব্যটি জন্ম, তাম্বুল, দান, নৌকা, ভার, ছত্র, বৃন্দাবন, কালীয়দমন, যমুনা, হার, বাণ, বংশী ও রাধাবিরহ– এই তেরোটি খণ্ডে বিন্যস্ত। কৃষ্ণের জন্ম থেকে মথুরা প্রবাস পর্যন্ত কাহিনিধারা কাব্যটিতে বিধৃত হয়েছে। কাব্যের মূল চরিত্র তিনটি—কৃষ্ণ, রাধা এবং বড়াই। কাব্যটি মূলত উক্তি-প্রত্যুক্তিমূলক। এছাড়া কাব্যে প্রচুর রাগরাগিণীর উল্লেখ পাওয়া যায়। পয়ার ও ত্রিপদী ছন্দের বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। অলংকারশাস্ত্রানুসারী উপমা, উৎপ্রেক্ষা, রূপক প্রভৃতি অলংকার ব্যবহারের দৃষ্টান্ত মেলে। বিভিন্ন গ্রামীণ সংস্কার, সামাজিক রীতিনীতিরও পরিচয় কাব্যটিতে পাওয়া যায়।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য রচনার প্রেক্ষাপট / কারণ / গুরুত্বঃ-
১২০৩ টি সাথে বাংলায় বিন বখতিয়ার খিলজির নেতৃত্বে মুসলিম আক্রমণ ঘটে। সে সময় বাংলার শাসক লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে তিনি নবদ্বীপ জয় করেন। এই সময় মুসলিম আক্রমণ ঘটলে বাংলায় চরম অরাজকতা শুরু হয়। সেই সময় বাংলার নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের কাছে শুধুমাত্র দুটি পথ খোলা ছিল। হয়তো তারা মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত হবে নয়তো তারা মুসলিমদের অত্যাচার সহ্য করবে। এইভাবে মুসলিমদের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য তৎকালীন সময়ের নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে শুরু করেছিল। মুসলিমদের আক্রমণের কারণে বাংলার হিন্দু সমাজের এই ভাঙ্গন আটকানোর জন্য তখন প্রয়োজন হয়ে পড়ে সমাজে এমন কিছু যা হিন্দু সমাজের এই ভাঙ্গনকে আটকাতে পারবে এবং হিন্দুদের মধ্যে অখন্ডতার বীজ বপন করতে পারবে। হিন্দু সমাজের এই ভাঙ্গনকে আটকানোর জন্য তখন সাহিত্যিকরা ধর্মের সাহায্য নিয়েছিলেন। বিভিন্ন ধর্মীয় কাহিনী তারা বাংলায় রচনা, অনুবাদ করে হিন্দু সমাজের মধ্যে পুনরায় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা করতে চেয়েছিলেন। ধর্ম ই হলো এমন এক জিনিস যা সবাইকে এক বাধনে বেঁধে রাখতে পারে। তাই তৎকালীন সময় সাহিত্যিকগণ ভিন্ন ধর্মীয় বিষয়কে সাহিত্যের আকারে প্রকাশ করে সমাজের ভাঙ্গনকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন।
তাই সেই সময় রচনা হয়েছিল বিভিন্ন মঙ্গলকাব্য, অনুবাদ সাহিত্য ইত্যাদি। সে সমস্ত মঙ্গলকাব্য বা অনুবাদ সাহিত্যের কোন একটি অংশ না হলেও শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন মূলত সেই কাজটিই করেছিল যা তৎকালীন সময়ের বিভিন্ন মঙ্গল কাব্য ও অনুবাদ সাহিত্যে গুলি করেছিল।।