ক্রিপস মিশন কি? এর বৈশিষ্ট্য এবং ব্যর্থতার কারণ সম্পর্কে আলোচনা করো || What was Cripps Mission Class 12

0

 

ক্রিপস মিশন কি? এর বৈশিষ্ট্য এবং ব্যর্থতার কারণ সম্পর্কে আলোচনা করো || What was Cripps Mission Class 12
What was Cripps Mission Class 12

উওরঃ- 1939 সালে পৃথিবীজুড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে অক্ষশক্তি দেশগুলি মিত্রশক্তির দেশ গুলোর তুলনায় ভয়ানক হতে শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে জাপান ইংল্যান্ডের বিভিন্ন উপনিবেশ গুলি একেক করে দখল করে নিতে শুরু করলে,জাপানকে থামানোর জন্য ইংল্যান্ডের ভারতীয় অর্থ সম্পদ এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় অর্থ সম্পদ এবং সেনাবাহিনী ব্যবহার করার জন্য ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদের সমর্থন লাভের চেষ্টা করে। এজন্য ব্রিটিশ সরকার ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার সদস্য এবং বিশিষ্ট আইনজীবী, খ্যাতনামা আইনজ্ঞ স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসকে 1942 সালের 23 শে মার্চ দিল্লীতে পাঠায়। ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার জন্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের মাধ্যমে করা সেই উদ্দেশ্য ক্রিপস মিশন (Cripps Mission) নামে পরিচিত।। 

ভারতের ক্রিপস মিশনের আগমনের কারণঃ- 

1942 খ্রিষ্টাব্দের 23 শে মার্চ ভারতে ক্রিপস মিশনের আগমনের পেছনে প্রধান কারণ ছিল। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

• প্রথমত ব্রিটিশ সরকারের ভেবেছিল যে জাপান হয়তো এবার ভারত আক্রমণের মাধ্যমে সমস্ত ভারতকে দখল করবে। এজন্য ব্রিটিশ সরকার ভীত হয় এবং ভারতে জাপানি আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য তাদের আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। 

• দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্রিটিশ সরকার নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য এবং সেই ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করার জন্য তারা ভারতীয় অর্থ সম্পদ এবং সেনাবাহিনী ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছিল।কিন্তু ভারতীয় সম্পদ ব্যবহার করার জন্য ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। 

• 1942 এর ফেব্রুয়ারি মাসের চীনের রাষ্ট্রপতি চিয়াং-কাই শেখ ভারতে আসে এবং ভারতে আসার পর তিনি মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্টকে জানান যে,ভারতীয়দের সম্পর্কে ব্রিটেনের মনোভাবের কোন পরিবর্তন না হলে যুদ্ধে ভারতীয়দের কাছ থেকে কোন সাহায্য পাওয়া সম্ভব নয়। এ কারণেই রুজভেল্ট ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিলকে চাপ দিতে শুরু করেন। এবং চার ছেলের হাত ধরেই ভারতীয়দের কিছু দাবিদাওয়া মেটানো এবং ভারতীয়দের কাছ থেকে সমর্থ লাভের উদ্দেশ্যে ক্রিপস মিশন ভারতে আসে।

ক্রিপস মিশনের প্রস্তাবসমূহঃ- 

স্যার ক্রিপস ভারতের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক সপ্তাহ ধরে আলাপ-আলোচনা করার পর ২৯ শে মার্চ তিনি একগুচ্ছ দাবি রাখেন যা প্রস্তাব নামে পরিচিত। এই প্রস্তাবে বলা হয়- 

• যুদ্ধের পর ভারতকে ডমিনিনের মর্যাদা দেওয়া হবে।

• যুদ্ধের পর ভারতীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সংবিধানসভা গঠন করা হবে।

• সংবিধান সভার সদস্য গণ প্রাদেশিক আইনসভা গুলির নিম্নকক্ষ দ্বারা নির্বাচিত এবং দেশীয় রাজ্যগুলির প্রতিনিধিরা তাদের দ্বারা মনোনীত হবেন।

• এই সংবিধান ভারতের জন্য একটি নতুন সংবিধান রচনা করবে। ভারতের কোন প্রদেশে না দেশীয় রাজ্য যদি সেই সংবিধান গ্রহণে রাজি না হয় তাহলে সেই প্রদেশ বা রাজ্য নিজেদের পৃথক সংবিধান রচনা করব।

• সংবিধান রচিত না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ওপর ব্রিটিশ সরকারের পূর্ণ কর্তৃত্ব থাকবে।

• ভারতীয়দের সহযোগিতায় ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় সম্পদ যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করবে।

•  এবং সবশেষে বড়োলাটের কার্যনির্বাহক পরিষদে আপাতত বেশি সংখ্যক ভারতীয় সদস্য নিয়োগ করা হবে।।

ক্রিপস ব্যর্থতার কারণঃ- 

ক্রিপস প্রস্তাব এর দ্বারা ভারতীয়দের এত সুযোগ সুবিধার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত ক্রিপস প্রস্তাব ব্যর্থ হয়েছিল। ক্রিসপ প্রস্তাবের ব্যর্থতার পেছনে প্রধান কারণ ছিল জাতীয় কংগ্রেসের বিরোধিতা, মুসলিম লীগ এর বিরোধিতা, ভারতীয়দের অন্যান্য সংগঠন, বিভিন্ন জাতির মানুষ এবং অন্যান্য নেতাদের যেমন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল, বড়লাট লিনলিথগো, প্রধান সেনাপতি ওয়াভেল প্রমুখ।

গান্ধীজীর বিরোধিতাঃ- 

ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল গান্ধীজীর অথবা জাতীয় কংগ্রেসের বিরোধিতা করা। ক্রিপস মিশনের মাধ্যমে ভারতকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দানের কথা বলা হয়নি। এটাই ছিল ক্রিপস মিশনের বিরোধিতা করার প্রধান কারণ। গান্ধীজী যে কোন মূল্যে ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চেয়েছিলেন। কিন্তু ক্রিপস মিশন সেই বিষয়ে কোন কথা বলেনি।

মুসলিম লীগের বিরোধিতাঃ- 

গান্ধীজীর মতো মুসলিম লীগও ক্রিপস মিশনের বিরোধিতা করেছিল। মুসলিম লীগ চেয়েছিল যেকোনো মূল্য তাদের জন্য পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন করা। কিন্তু ক্রিপস মিশনের মাধ্যমে পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনে কোন কথা বলা হয়নি।।

ব্রিটিশদের ভূমিকাঃ- 

ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতার পেছনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল,ভারত সচিব আমেরি, বড়লাট লিনলিথগো, প্রধান সেনাপতি ওয়াভেল প্রমুখের ভূমিকা ছিল। তারা কেউই চানিজে যে ক্রিপস মিশন সফল হোক। এজন্য তারা নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করেছিলেন। তাই সবশেষে স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১১ই এপ্রিল একটি সাংবাদিক সম্মেলন আহ্বান করে বেতার ভাষণে কংগ্রেসকে নানাভাবে দোষারোপ করে তিনি তার প্রস্তাব ত্যাগ করেন। এবং সেদিনই তিনি ভালো ছাড়েন। এবং এভাবে ক্রিস মিশন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়।

Tags: Class 12 history notes | hs history suggestion | wb class 12 history question answer and suggestion 2023 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 History question answer  | hs History question answer 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top