জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড কি? |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়ঃ ঔপনিবেশিক ভারতের শাসন (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড কি? জালিয়ানওয়ালাবাগের প্রেক্ষাপট এবং গুরুত্ব লেখো' প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। এবং উচ্চমাধ্যমিক সহ অন্যান্য ক্লাসের নোটস পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে থাকো।।
জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড কি? জালিয়ানওয়ালাবাগের প্রেক্ষাপট এবং গুরুত্ব লেখো
উওরঃ 1919 খ্রিস্টাব্দের রাওলাট আইন প্রবর্তিত হওয়ার পর সারা দেশজুড়ে এর তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। রাওলাট আইনের বিভিন্ন খারাপ দিক গুলি সম্পর্কে সারাদেশে জনমত গড়ে উঠতে থাকে। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো পাঞ্জাবেও রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে 1919 খ্রিস্টাব্দের 13 এপ্রিল পাঞ্জাবের অমৃতসরে পূর্বে অবস্থিত জালিয়ানওয়ালাবাগের মাঠে প্রায় 10,000 নিরস্ত্র মানুষ অনুষ্ঠিত একটি সমাবেশে যোগ দেয়। সমাবেশ স্থলের চারদিক উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল এবং সেখানে পাঞ্জাবের সকল শ্রেণীর মানুষের যোগ দিয়েছিল। সভা চলাকালীন সামরিক শাসন কর্তা জেনারেল মাইকেল এবং ডায়ার বিরাট সেনাবাহিনীসহ সেখানে উপস্থিত হন এবং সে মাঠে উপস্থিত প্রায় 10,000 নিরস্ত্র মানুষকে কোনরকম সতর্কবার্তা না দিয়েই তিনি সেখানে আচমকাই গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। জালিয়ানওয়ালাবাগের মাইকেল এবং ডায়ারের নির্বিচারে গুলি চালানোর এই আদেশ সেখানে উপস্থিত প্রায় 1000 নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-যুব-শিশু নিহত এবং অসংখ্য মানুষ সেখানে আহত হয়। 1919 খ্রিস্টাব্দে 13 এপ্রিল অমৃতসরের জালিয়ান ওয়ালাবাগের মাঠে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ডই জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত।
জালিয়ান ওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের পটভূমি বা প্রেক্ষাপটঃ-
জালিয়ানওয়ালাবাগে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছিল, তার পেছনে কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণ ছিল। যেমন -
জেনারেল মাইকেল এবং ডায়ারের অত্যাচারঃ-
পাঞ্জাবের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মাইকেল এবং ডায়ারের হাতে পাঞ্জাবে শাসন চলে যাওয়ার পর তারা পাঞ্জাবের জনসাধারণের ওপর প্রচুর অত্যাচার চালিয়ে তাদের উপর শোষণ করতে থাকে। এছাড়াও পাঞ্জাবের গদর বিদ্রোহ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে তাদের ওপর চরম নির্যাতন করেছিল। মাইকেল এবং ডায়ারের এই সমস্ত কাজকর্মই পাঞ্জাবের মানুষকে তাদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ করেছিল।
দমনমূলক রাওলাট আইনের বিরোধিতাঃ-
1919 খ্রিস্টাব্দে ভারতীয়দের সমস্ত রকম স্বাধীনতা এবং অধিকার কেড়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার রাওলাট আইন পাস করে। রাওলাট আইন এর সত্যতার সবার সামনে প্রকাশ হওয়ার পরেই দেশের সমস্ত মানুষ এই আইনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। 1919 খ্রিস্টানদের মার্চ মাসের রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবের জনসাধারণের প্রতিবাদ সেখানে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
নেতৃবৃন্দের গ্রেপ্তারঃ-
রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবের পিপলস কমিটি নামে একটি সংগঠন তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। এতে সরকার ভীত হয়ে 10 এপ্রিল সেই সংগঠনের স্থানীয় নেতা সৈফুদ্দিন কিচলু এবং ডক্টর সত্যপালকে গ্রেফতার করে। তাদের গ্রেপ্তারের পাঞ্জাবের জনসাধারণ উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে।
পাঞ্জাবের সামরিক শাসন জারিঃ-
রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, স্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তারে ধর্মঘট ইত্যাদি বিষয়ে পাঞ্জাবে শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছিল। সেখানে ব্রিটিশ সরকার পাঞ্জাবের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে সেখানে সামরিক শাসন জারি করে। এর মাধ্যমে পাঞ্জাবের শাসন ক্ষমতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইকেল এবং ডায়ারের চলে যায়। এবং এরপর থেকেই সেখানে সামরিক আইন জারি করে 11 এপ্রিল শহরের সমস্ত রকমের জনসভা এবং সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। মূলত এই সমস্ত কারণে জালিয়ানওয়ালাবাগের মাঠে পাঞ্জাবের জনসাধারণ সমবেত হয়েছিল।
জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের গুরুত্বঃ-
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত মর্মান্তিক ছিল। এই ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক হওয়ার জন্যই সেই ঘটনার কিছু উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল। যেমন-
ভারতীয়দের ক্ষোভঃ-
জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রতিবাদে দেশের সর্বত্র ঘৃণা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন যে, “এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ভারতে যে মহাযুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দেয় তা উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে ছড়িয়ে পড়ে সবার হৃদয়কে আন্দোলিত করে।”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাইট উপাধি ত্যাগঃ-
জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘৃণ্য ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিট্রিশ সরকারের দেওয়া 'নাইট' উপাধি ত্যাগ করেন।
কংগ্রেসের প্রতিবাদঃ-
জাতীয় কংগ্রেস এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে। কংগ্রেস নেতা সি. এফ. এন্ড্রজ এই ঘটনাকে ‘কসাইখানার গণহত্যার’(it was a massacre, a butchery)-র সমতুল্য বলে নিন্দা করেছেন। গান্ধিজি তাঁর ইয়ং ইন্ডিয়া' পত্রিকায় লেখেন যে, “এই শয়তান সরকারের সংশোধন অসম্ভব, একে অবশ্যই ধ্বংস করতে হবে।”
ইংরেজদের প্রতিবাদঃ-
জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে বহু ইংরেজও অত্যন্ত মর্মান্তিক ও নজিরবিহীন বলে নিন্দা করেন। ভাবী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন, “জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনার মতো মর্মান্তিক ঘটনা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে আর কখনও ঘটেছে বলে আমার মনে হয় না। ...এই ঘটনা খুবই অস্বাভাবিক, পাশবিক...”
আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়ঃ ঔপনিবেশিক ভারতের শাসন (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023) থেকে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড কি? জালিয়ানওয়ালাবাগের প্রেক্ষাপট এবং গুরুত্ব লেখো' সম্পর্কে যে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।
Tags :
Class 12 history notes | hs history suggestion | wb class 12 history question answer and suggestion 2023 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | ঔপনিবেশিক ভারতের শাসন অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর | wb class 12 History question answer | hs History question answer