প্রঃ-অশোকের ধম্ম আলোচনা কর। তুমি কি এটাকে সমাজকল্যাণমূলক বলে মনে কর? অথবাঃ- অশোকের ধর্মের মূল নীতিগুলি আলোচনা কর। এই নীতিগুলি বৌদ্ধধর্মের দ্বারা কতটা প্রভাবিত হয়েছিল।
উঃ- সূচনা :- প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে যাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে, যাঁর আদর্শ জনগণের কল্যাণ করেছিল; তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন ভারত হিতৈষী, প্রজাবৎসল সম্রাট অশোক। একথা সত্য যে, প্রাচীন যুগের সম্রাট হিসাবে তিনি যে অক্ষয়-কীর্তি রেখে গিয়েছেন, তা আজও স্মরণীয়। বিশেষতঃ কলিঙ্গ যুদ্ধের রক্তস্রোত দেখে অশোক শৈব ধর্ম থেকে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন। এরপর অহিংস মন্ত্রের সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে আমৃত্যু ক্ষেত্রে তিনি হিংসা অনুমোদন করতেন; যেমন, কিছু কিছু বন্য জাতি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তিনি তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদানের নীতি অনুমোদন করেছিলেন। তবে কোথাও বলপ্রয়োগের নীতি অনুসরণ করা প্রয়োজন হলে সেখানেও তিনি ক্ষমার নীতি নিয়ে অগ্রসর হবার নির্দেশ দিতেন।
ধম্ম ও জনকল্যাণঃ-
‘ধম্ম' নীতির ফলে অশোক প্রশাসনের ক্ষেত্রে এমন কতকগুলি ব্যবস্থা অবলম্বন করেছিলেন যাকে, জনকল্যাণ মূলক কার্যা নামে আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। যেমন, এই ধম্মবোধ থেকেই অশোক পথিপার্শ্বে বৃক্ষরোপন ও কূপখনন করেছিলেন, একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে পথের পাশে সরাইখানা ও পশুদের জন্য জলাধার নির্মান করেছিলেন ইত্যাদি। এ সব কাজ সম্পর্কে তাঁর নিজের বক্তব্য ছিল এই রকম, 'আমি এই সব কাজ করেছি এই জন্য যে, আমার প্রজারা যাতে ধর্ম অনুসরণ করে চলতে পারে। (I have done these things in order that my people might conform to Dhamma.)
ধম্ম ও সংস্কারঃ-
ধম্ম বলতে কোন বিশেষ ধর্ম না বোঝালেও অশোক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে অহেতুক জীবহত্যার নিন্দা করতেন। জীবহত্যাকে তিনি অন্ধত্বপ্রসূত কাজ বলে মনে করতেন। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের নামে জীবহত্যা ছিল নীচু শ্রেণির পুরোহিতদের কাজ। এঁরা এইসব কুসংস্কারপূর্ণ আচার অনুষ্ঠানকে তাদের জীবিকা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। এই সব কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রচারের উদ্দেশ্যে অশোক ধৰ্ম্ম প্রচারের জন্য বিশেষ একটি বিভাগ তৈরী করেছিলেন। তবে এই ধৰ্ম্ম প্রচারকের দল জনজীবনে হস্তক্ষেপ করে অশোকের মূল উদ্দেশ্যকে অনেকটা ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন।
মূল্যায়নঃ-
অশোকের প্রবল চেষ্টা সত্বেও তাঁর 'ধর্ম্ম' নীতি শেষ পর্যন্ত সফল হয় নি। এর কারণ এই যে, সম্রাট এই 'ধৰ্ম্ম' নীতি জনগণকে গ্রহণ করাবার জন্য বড় বেশী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। আসলে 'ধৰ্ম্ম' সম্পর্কে তাঁর একটা ধর্মান্ধতা জন্মেছিলে। যে সমস্যা সমাধানের জন্য এই 'ধৰ্ম্ম নীতির উদ্ভব, সেই সমস্যা তিনি তুলে ফেলতে পারেন নি। সামাজিক উত্তেজনা নির্মূল হয় নি এবং সাম্প্রদায়িক সংঘাতও ছিল। 'বন্দ্ব' সম্পর্কে জনগণ কোন স্পষ্ট ধারণা করতে পারে নি।